পাহাড় থেকে ছবির মতো মাচাংঘর কি হারিয়ে যাবে
Published: 21st, September 2025 GMT
ঢেউখেলানো পাহাড়ের ঢালে জুমখেত, তার পাশে ঝিরির ধার ঘেঁষে ছবির মতো কয়েকটি মাচাংঘর। বাঁশের খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এমন বাসস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনধারার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ঐতিহ্যবাহী এই মাচাংয়ের বাড়ি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে পাহাড় থেকে।
পাহাড়ি মানুষের ক্রমেই জীবিকার পরিবর্তনের সঙ্গে সংস্কৃতির রূপান্তর ও বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় এখন অনেকে আর মাচাংঘরে বসবাস করেন না। যাঁরা ধরে রেখেছেন, তাঁরাও গাছ-বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণের অভাবে মাচাংঘরের স্থাপত্যশৈলীর ধরন বদলে ফেলেছেন। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশপার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় ১১টি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সবার বসতবাড়ি ছিল মাচাংঘর। পাহাড়ের ভৌগোলিক পরিবেশ-প্রতিবেশ, অধিবাসীদের জীবিকা ও পাহাড়ি ভূমির জুমচাষের সঙ্গে লাগসই অভিযোজনের স্থাপত্যে গড়ে উঠেছে মাচাংঘরের ঐতিহ্য। আবার এই ঐতিহ্য প্রত্যেকের স্বতন্ত্রধারার সাংস্কৃতিক পরিচয়কেও পরিপুষ্ট করেছে। এ জন্য একই পাহাড়ে বসবাস করেও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ, তেমনি মাচাংঘরের স্থাপত্যশৈলীতেও রয়েছে বৈচিত্র্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজাতি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাচাংঘরের নকশা দেখে কোন জাতিগোষ্ঠীর পাড়া, তা খুব সহজে শনাক্ত করা যায়। তাই এটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়েরও অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কয়েক দশক ধরে মাচাংঘর কমতে শুরু করেছে। দুর্গম এলাকায় জুমচাষি ছাড়া জেলা ও উপজেলা শহরের কাছাকাছি মাচাংঘর খুব একটা চোখে পড়ে না। প্রত্যন্ত এলাকায় জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল ম্রো, খুমি, বম ও খেয়াং জনগোষ্ঠীই মূলত মাচাংঘরের ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছেন। সবচেয়ে জীবিকা পরিবর্তন হয়েছে চাকমাদের। মাচাংঘরও ত্যাগ করেছে তারা সবচেয়ে বেশি।
ম্রো সমাজ-সংস্কৃতি গবেষক ইয়াংঙান ম্রোর মতে, খুঁটির ওপর মাটি থেকে তিন–পাঁচ ফুট উঁচুতে মাচাংঘর তৈরি করা হয়। বনের গাছের খাম্বা বা খুঁটির ওপর বাঁশের মাচাং, শণ অথবা বাঁশপাতার ছাউনি হচ্ছে স্থাপত্যের মূল কাঠামো। শুধু বাঁশ দিয়েও নির্মাণঘর বেশি দিন টেকসই হয় না। সচ্ছল পরিবারগুলো স্থায়িত্বশীল করার জন্য শুধু গাছ দিয়ে মাচাংঘর করে। তবে বৈচিত্র্যের বিষয় হলো, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বমসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাচাংঘরের নকশা ভিন্ন। চাকমাদের ঘরে সিঁড়ির দিয়ে ওঠার খোলা বারান্দাকে ইজোর বলা হয়। মারমাদের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার খোলা বারান্দার পরে মূল ঘরে। এভাবে মাচাংঘরের নকশা দেখে বোঝা যায় কোন জনগোষ্ঠীর বসবাস।
প্রতিবেশ ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে উপযোগী বলে মাচাংঘরের স্থাপত্য ঐতিহ্য শত বছর ধরে চর্চা হয়ে আসছে। কিন্তু এই স্থাপত্যশিল্পের ওপর এখনো কোনো কাজ হয়নি। মাচাংঘরের নির্মাণশৈলী উপেক্ষা করে এখন সেখানে বহুতল ইমারত নির্মাণে অনুমতি চায় অনেকে। এ জন্য পরিবেশ বিপর্যয়ে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানি হচ্ছেস্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক।কমছে জুমচাষ, কমছে মাচাংঘরহারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের এসব মাচাংঘর.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রিপোলজি: ভিসা থেকে হোটেল বুকিং সবই এক ছাদের নিচে
ঢাকার বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং সব সেবা পাওয়া যাবে এক ছাদের নিচে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া।
কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরো গতিশীল করবে।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী এই ঠিকানায়।
ঢাকা/ইভা