গকসু নির্বাচন: পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ছাড়াই ভোটগণনা
Published: 25th, September 2025 GMT
গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের ভোটগণনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোটগণনা চলছে। গণনার জায়গায় কোনো প্রার্থীর এজেন্ট, প্রার্থী, সাংবাদিক কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতে ভোটগণনার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এমনকি ভোটে শিক্ষকদের পক্ষপাতিত্বের শঙ্কাও করছেন তারা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ১৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছয়জন করে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে চারজন পোলিং এজেন্ট, একজন গণনা পর্যবেক্ষক, একজন প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কেন্দ্রে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট, প্রার্থী বা সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আরো পড়ুন:
গকসু নির্বাচন: ১৯ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
গকসু নির্বাচন: ভেতরে ভোটগ্রহণ, বাইরে বহিরাগতদের বিশৃঙ্খলা
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর শুরু হয় ভোটগণনা। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতির বিষয়টি তুলে ধরলে প্রশাসন সেটিতেও রাজি হয়নি। একপর্যায়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পাঁচ সাংবাদিককে কেন্দ্রে ঢুকতে দিলেও তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে বাধার শিকার হওয়া বণিক বার্তার সাংবাদিক মেহেদী মামুন বলেন, “আমরা ভোটগ্রহণ দেখতে পেরেছি। কিন্তু এর পরবর্তীতে ভোটগ্রহণের পর আমরা জানতে পারি, ভোটগণণা চলছে। কিন্তু সেখানে কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। সাংবাদিকদের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিধিনিষেধ।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের নির্বাচন কমিশনের ওপর ভরসা রাখতে বলা হয়েছে। তাদের দাবি ছিল, পোলিং এজেন্ট না নিলেও অন্তত সাংবাদিকদের যেন ঢুকতে দেওয়া হয়। ভিপি প্রার্থীও একই অভিযোগ করেন। এরপরে ক্যাম্পাসের পাঁচজন সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। বাইরের কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া একটা বদ্ধ পরিবেশে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে অস্বচ্ছভাবে গণনার প্রক্রিয়া চলছে। আর সাংবাদিকরাও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাঁধার শিকার হয়েছেন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তাহমিদ হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ভোটার-প্রার্থীদের চাপের মুখে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) কর্মরত পাঁচজন সাংবাদিককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানেও করিডোরে সবাই অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে তথ্য নিচ্ছেন। ছবি গ্রহণের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। গণনা সরাসরি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্র থেকে বের হওয়া ব্যালট বক্সগুলো আমরা দেখতে পারছি শুধু।
গকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী শেখ খোদার নুর ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাদের বলেছিল, নির্বাচন চলাকালে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যাবে না, যেহেতু প্রার্থী বেশি। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ভোটগণনা শুরু হয়, সেখানে আমরা যারা প্রার্থী আছি, যেহেতু প্রার্থী কম, তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যেত। সেখানে দেখছি, শিক্ষকরা ভোটগ্রহণ করছেন। একজন প্রার্থীর ভোট যে আরেকজনের খাতায় তোলা হচ্ছে না, সে বিষয়ে আমরা প্রার্থীরা নিশ্চিত নই।”
“শিক্ষক যারা আছেন, তারা যে বায়াস নয়, তা তো আমরা নিশ্চিত নই। কারণ বিগত সময়ে বিভিন্ন শিক্ষকের নামে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় যারা দোসর হিসেবে কাজ করেছেন, তারাও নির্বাচন কমিশনের অংশ হিসেবে কাজ করছেন। ফলে কীভাবে নিশ্চিত হব, কেন আস্থা রাখব? আমার ভোট আমার খাতায় গণনা হচ্ছে কি না, সেটা জানা আমার অধিকার,” যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ড.
গকসুর নির্বাচন কমিশনার ডা. মো. জামিলুর রহমান বলেন, “ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন কেন্দ্রে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো এজেন্ট থাকবে না এটা তাদের সাথে আগেই কথা হয়েছে। ভোট কারচুপির কেনো সুযোগ নেই। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটা চ্যালঞ্জের সাথে জবাব দেব।”
ঢাকা/সানজিদা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গকস ন বল ন প রব শ ফল ফল গ রহণ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জুম্ম ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিত্ব করা ছয়জনই ইউপিডিএফের: পার্বত্য উপদেষ্টা
খাগড়াছড়িতে অবরোধের ডাক দেওয়া সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর প্রতিনিধিত্ব করা ব্যক্তিরা পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। গতকাল সোমবার রাতে রাঙামাটি শহরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা নামে যে গ্রুপটা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমি আজ কথা বলেছি। ছয়জন এসেছিলেন তাঁরা, ছয়জনই ইউপিডিএফের। কারণ, খাগড়াছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ ছাড়া কোনো কিছু নাই। আমি একে একে তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা বলেছেন, আমরা ছয়জনই ইউপিডিএফ।’
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘কোনো অপরাধ নয় এটা, মতাদর্শ থাকতেই পারে। আমি ওদের বলেছিলাম, দেখুন গত কয়েক দিনে আপনারা যা যা করলেন, আমার মনে হয় না এটি ম্যাচিউরড ওয়েতে হয়েছে, ম্যাচিউরিটির কমতি এখানে আছে।’
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে আজও অবরোধ চলছে, স্থবির জনজীবন২ ঘণ্টা আগেপার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, ‘তাঁরা (পাহাড়িরা) সব সময় স্লোগান দেন, সেনা হটাও। এই দুনিয়াতে কিছু বাস্তবতা আছে। যে বাস্তবতার বাইরে আমরা এত সহজে যেতে পারব না। এমনও দিন আসবে, আমরা তাঁদের জোর করে ধরে রাখলেও রাখতে পারব না।’
পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জুম্ম ছাত্র-জনতার হয়ে গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া ছয়জন হলেন—কৃপায়ন ত্রিপুরা, ছদক চাকমা, পিন্টু চাকমা, তোষিতা চাকমা, মানিক চাকমা ও বাগীশ চাকমা।
জানতে চাইলে জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন ত্রিপুরা বলেন, তাঁদের ছয়জনকে ইউপিডিএফ ট্যাগ লাগানো উদ্দেশ্যমূলক, অপমানজনক ও ভিত্তিহীন। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে জুম্ম ছাত্র-জনতা আর কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না। জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছয়জন আমাদের সদস্য বা কর্মী নয়।’