উড়োজাহাজ থেকে লাফ দিতেও ভয় লাগে না, এই বিরল রোগটি কী
Published: 26th, September 2025 GMT
প্রতিকূল পরিবেশ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার জন্য মানুষের ভয়ের অনুভূতি থাকাটা জরুরি। তবে বিশ্বে হাতেগোনা কিছু মানুষ এমন এক রোগে আক্রান্ত, যার কারণে তাঁরা কোনো কিছুকেই ভয় পান না। প্রশ্ন হলো—তাদের ভয়ডরহীন জীবনটা কেমন বিপজ্জনক?
ধরুন, আপনি একটি উড়োজাহাজ থেকে ঝাঁপ দিলেন। অথচ তা করতে গিয়ে নিজের ভেতরে কিছুই অনুভূত হলো না—অ্যাড্রেনালিন দ্রুত নিঃসৃত হলো না, হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়ল না। অর্থাৎ কোনো ভয়ই হলো না। তাহলে বিষয়টা কেমন বিপজ্জনক হবে?
যুক্তরাজ্যের নাগরিক জর্ডি সারনিক এমনই এক বিরল সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর ভয়ের অনুভূতি নেই।
শুরুতে জর্ডি সারনিক কাশিং সিনড্রোমে ভুগছিলেন। মানুষের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি যখন অনেক বেশি কর্টিসল (একধরনের স্ট্রেস হরমোন) উৎপন্ন করে, তখন কাশিং সিনড্রোম হয়। অর্থাৎ মানুষের উদ্বেগ তখন অনেক বেড়ে যায়।
উদ্বেগ কমাতে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি অপসারণ করিয়েছিলেন সারনিক। চিকিৎসাটা বেশ ভালো কাজে দিল। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি অপসারণের পর জর্ড সারনিক আর উদ্বিগ্ন বোধ করতেন না। তবে পড়লেন নতুন সমস্যায়। তিনি বুঝতে পারেন, কিছু একটা ঠিকঠাক চলছিল না।
উরবাখ-উইথে রোগে আক্রান্ত এমন একজন রোগী আছেন যিনি ‘এসএম’ নামে পরিচিত। ১৯৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নারীকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়ে আসছে। ২০০০-এর দশকের শুরুতে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী জাস্টিন ফেইনস্টাইন এই গবেষণা দলের সঙ্গে যোগ দেন এবং এসএম-কে ভয় দেখানোর উপায় খুঁজতে শুরু করেন।২০১২ সালে ডিজনিল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে রোলারকোস্টারে চড়েন জর্ডি সারনিক। তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর কোনো ধরনের ভয় অনুভূত হচ্ছে না। এরপর তিনি উড়োজাহাজ থেকে স্কাইডাইভিং করলেন, নিউক্যাসলের টাইন ব্রিজ থেকে জিপলাইন করলেন এবং লন্ডনের আকাশচুম্বী ভবন দ্য শার্ড থেকে দড়ি বেয়ে নিচে নামলেন।
কিন্তু কোনো কিছুতেই সারনিকের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা ভয় পাওয়ার মতো কোনো অনুভূতি হয়নি।
সেরনিকের অভিজ্ঞতা বিরল হলেও পৃথিবীতে এমন সমস্যায় ভোগা একমাত্র ব্যক্তি নন তিনি। যাঁরা উরবাখ-উইথে নামক বিরল রোগে (অন্য নাম লিপোইড প্রোটেইনোসিস) ভুগছেন, তাঁদের কাছে এটি পরিচিত অভিজ্ঞতা। এই জেনেটিক রোগ এতটাই বিরল যে বিশ্বে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া এ ধরনের রোগীর সংখ্যা মাত্র ৪০০।
উরবাখ-উইথে রোগে আক্রান্ত এমন একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি ‘এসএম’ নামে পরিচিত। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নারীকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়ে আসছে।
ক্রোমোসোম ১-এ থাকা ইসিএম১ জিনে একটি একক মিউটেশনের কারণে উরবাখ-উইথে রোগটি হয়ে থাকে। ইসিএম১ হল এমন একটি প্রোটিন, যা এক্সট্রাসেলুলার ম্যাট্রিক্স (ইসিএম) ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ ও টিস্যুগুলোকে জায়গামতো ধরে রাখে।২০০০-এর দশকের শুরুতে স্নাতক শিক্ষার্থী জাস্টিন ফেইনস্টাইন এই গবেষক দলের সঙ্গে যোগ দেন এবং এসএম-কে ভয় দেখানোর উপায় খুঁজতে শুরু করেন।
ফেইনস্টাইন বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো যতগুলো হরর মুভি পেয়েছি, তার সব কটিই তাঁকে দেখিয়েছি।’
ব্লেয়ার উইচ প্রজেক্ট, দ্য শাইনিং কিংবা সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বসের মতো কোনো হরর মুভি এসএম-কে ভীত করতে পারেনি। এমনকি ওয়েভারলি হিলস স্যানাটোরিয়ামের ভুতুড়ে ঘরে ঘুরে বেড়ানোর পরও তিনি ভয় পাননি।
ফেইনস্টাইন বর্তমানে ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজিস্ট এবং ফ্লোট রিসার্চ কালেক্টিভে কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ফ্লোটেশন-রিডিউজড এনভায়রনমেন্টাল স্টিমুলেশন থেরাপি নিয়ে কাজ করে, যা ব্যথা, চাপ, উদ্বেগ এবং এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ফেইনস্টাইন বলেন, ‘আমরা তাঁকে বাস্তব জীবনের বিপদে ফেলেছিলাম—তাঁকে সাপ ও মাকড়সার সামনে এনেছিলাম; কিন্তু তাঁর মধ্যে ভয়ের কোনো চিহ্ন তো ছিলই না। বরং তিনি নিজের ইচ্ছায় সেগুলোর দিকে এগিয়ে গেছেন।’
ক্রোমোসোম ১-এ থাকা ইসিএম১ জিনে একটি একক মিউটেশনের কারণে উরবাখ-উইথে রোগটি হয়ে থাকে। ইসিএম১ হল এমন একটি প্রোটিন, যা এক্সট্রাসেলুলার ম্যাট্রিক্স (ইসিএম) ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ ও টিস্যুগুলোকে জায়গামতো ধরে রাখে।
ইসিএম১ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যালসিয়াম ও কোলাজেন জমা হতে শুরু করে এবং কোষ মরে যায়। এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অ্যামিগডালা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে। অ্যামিগডালা হলো মস্তিষ্কে থাকা বাদামের আকৃতির একটি অঞ্চল। ভয়ের অনুভূতি জাগাতে এটির ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।
এসএম-এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উরবাখ–উইথে রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর অ্যামিগডালা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি ভয়ের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন।
ফেইনস্টাইন বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটা শুধু তাঁর ভয়ের অনুভূতির ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে তার অন্যান্য আবেগ যেমন সুখ, রাগ বা দুঃখ অনুভব করার ক্ষমতা প্রায় পুরোপুরি ঠিক আছে।’
এটা ঠিক যে এসএম কেবলই একজন ব্যক্তি। তাই তাঁর অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল সবার ক্ষেত্রে যে প্রযোজ্য হবে এমন নয়। এসএম-এর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আলাদা, তা হলো তাঁর রোগের কারণে অ্যামিগডালা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং অন্য অংশগুলো অক্ষত ছিল।
আরও পড়ুনদেশে বিরল রোগ উইলসন্সের জিনগত রূপান্তর শনাক্ত১৪ মে ২০২৪তবে একই ধরনের মস্তিষ্কের আঘাত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। কোন বয়সে মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে, সেটিও মানুষের সেরে ওঠার প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে।
তবুও এসএম-এর গল্পটির মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, কেন আমরা ভয়ের অনুভূতিকে প্রথম স্থানে রাখি। স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর এবং মাছসহ সব কশেরুকি প্রাণীরই অ্যামিগডালা থাকে এবং এটি তাদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফেনস্টাইন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আপনি যদি কোনো প্রাণীর অ্যামিগডালাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে প্রাণীটিকে আবার বনে ছেড়ে দেন, সেই প্রাণী সাধারণত কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে মারা যাবে। কারণ, বাইরের জগতের বিপদগুলো চেনা এবং তা মোকাবিলার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি (অ্যামিগডালা) না থাকলে, প্রাণী নিজেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে চলে যায়।’
অবশ্য এসএম কিছু বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে থাকলেও তিনি তাঁর অ্যামিগডালা ছাড়াই ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বেঁচে আছেন।
আরও পড়ুনবিরল রোগ: চোখের সামনে সন্তান অচল হয়ে পড়লেও কিছু করার থাকে না মা–বাবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসএম ক এমন এক ট ইন ব উদ ব গ স রন ক ধরন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে