মাত্র ৬০ টাকায় একটি সিদ্ধ ডিমের তরকারি, আলু ভর্তা, ডাল, সালাদসহ পেটচুক্তিতে (যত ইচ্ছা, তত খাওয়া) ভাত বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন চাঁদপুরের আবুল হাসনাত গাজী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই দিনে এত কম টাকায় বিভিন্ন তরকারি দিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়ার সুযোগ পেয়ে অনেকেই ভিড় করছেন তার দোকানে। 

প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার গরু-ছাগলের হাট বসে চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য রঘুনাথপুর বেপারী বাজারে। কম হাসিল নেওয়ায় এ হাটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দূর-দূরান্তের খামারি ও বেপারীরা গুরু-ছাগল নিয়ে এসে এ হাটে বেচাকেনা করেন। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কথা কথা চিন্তা করেই হাট কর্তৃপক্ষ কম দামে পেট ভরে খাওয়ানোর উদ্দ্যেশে এ খাবার হোটেল পরিচালনা করছে।

কর্মচারীরা জানিয়েছেন, হোটেলে সকাল থেকেই রান্না হয়। এক টুকরো ফার্মের মুরগির মাংস, আলু ভর্তা, ডাল ও সালাদ দিয়ে পেটচুক্তিতে ভাত খেলে গুনতে হয় মাত্র ১০০ টাকা। ফার্মের মুরগির স্থলে পাকিস্তানি মুরগির মাংস দিয়ে খেলে ১৫০ টাকা, এক টুকরো মাছ দিয়ে খেলে ১০০ টাকা এবং আলুর ঝোলের সঙ্গে ডিম সিদ্ধ দিয়ে খেলে দিতে হয় ৬০ টাকা। 

ওই হোটেলে খেতে আসা লোকজন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, একদম ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়া যায় এখানে। দামেও সস্তা। ৪-৫ প্লেট ভাত অতিরিক্ত নিলেও দাম একই। তাই, পেট ভরে খাওয়া যাচ্ছে। এখানে এলে আমরা এ হোটেলেই সব সময় খাবার খাই।

হোটেল পরিচালনাকারী আবুল হাসনাত গাজী বলেন, কখনো কখনো শুধু আনলিমিটেড ভাতই নয়, বরং ডাল ও ভর্তাও কয়েকবার নিজের হাতে নিয়ে খাচ্ছে মানুষ। তা দেখে মানসিক তৃপ্তি পাই। এখানে আমার নেতৃত্বে চারজন কাজ করছে। এমন মহৎ উদ্যোগে জড়িত হতে পেরে ভালো লাগছে।

চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো.

শাহজাহান বেপারী বলেছেন, হাটে আনা গরু যিনি কিনেন তার কাছে ৩০০ টাকা এবং যিনি বিক্রি করেন তার কাছে মাত্র ২০০ টাকা হাসিল নেওয়া হয়। এখানে দিনে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। হাটে আসা মানুষের সুবিধার্থে অচিরেই খাবারের মেনুতে আরো কিছু আইটেম যোগ করার পরিকল্পনা আছে। মানুষ যাতে কম দামে আরো ভালো খাবার খেতে পারেন, সে চিন্তা থেকেই আমরা হোটেলটি পরিচালনা করছি।

ঢাকা/জয়/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ