নিউইয়র্কে ডিমকাণ্ড: হার্ড লাইনে এনসিপি, ‘প্রভাব পড়বে রাজনীতিতে’
Published: 26th, September 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে হেনস্থার ঘটনায় দেশীয় রাজনীতির ময়দান যেমন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে, তেমনি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারসহ ফ্যাসিস্ট শক্তি দমনে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করছে এনসিপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিশ্লেষক ও রাজনীবিদরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তা না দিতে পারা অন্তবর্তী সরকারের ব্যর্থতা। তা ছাড়া এই ঘটনার প্রভাব রাজনীতির অঙ্গন ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশির ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলবে।
আরো পড়ুন:
দারোয়ান পরিবর্তন করে আমরা ৫০ বছর দেখেছি: হাসনাত
পরাজয়কে সম্মানিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান হাসনাতের
গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা। তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যান। বিমানবন্দর থেকে বের হওযার সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিম নিক্ষেপ এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.
এনসিপির আখতার ও জারাকে দম্ভের সঙ্গে উল্লাস করে হেনস্থা করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে সুদূর পশ্চিমের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে দলটির নেতাকর্মীরা সুযোগ পেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দুজন নেতা আখতার ও জারাকে অপদস্থ করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনে দলটি যাদের দায়ী করে, আবার যারা পতন ঘটানোর কৃতিত্ব উপভোগ করেন, তাদের মধ্যে এনসিপির শীর্ষ নেতারা প্রথম সারির। ফলে আখতার ও জারার ওপর হামলাকে মূলত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন তারা।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল
নিউইয়র্কে আখতার ও জারার ওপর হামলা এবং ডিম নিক্ষেপের ঘটনার দিনেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এনসিপি।
সমাবেশগুলোতে এনসিপির নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই হামলায় জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দল হিসেবে অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
এনসিপি নেতাদের কড়া হুঁশিয়ারি
আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসানাত আবদুল্লাহ।
২৩ সেপ্টেম্বর তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “হাসিনার পুলিশ লীগ, কোর্ট-কাচারিও আখতারকে দমন করতে পারেনি। আর এসব উচ্ছিষ্ট, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত দালালরা বিদেশে বসে প্রতিবাদের প্রতীক আখতারকে দমন করতে পারবে?”
গণঅভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা বলেন, “আওয়ামী দালালদের পক্ষে টকশো আর যুগলবন্দি কলামে যারা ‘সম্মতি’ উৎপাদন করে, তাদেরকেও কেন প্রত্যাখ্যান করা উচিত, এটা না বুঝলে কিছুদিন পর এই আক্রমণের শিকার হতে আপনি প্রস্তুত থাকুন।”
যুক্তরাষ্ট্রে আখতারের ওপর হামলাকারীদের আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
২৩ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, “এই পা-চাটা দালাল এবং জনতার ভয়ে জান নিয়ে পালিয়ে যাওয়া তাদের মা হাসিনা হাজারের অধিক খুনের নির্দেশদাতা। বিগত ১৭ বছরে এই দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, ধর্ষণ থেকে শুরু করে এমন কোনো ঘৃণিত কাজ ও অন্যায় নেই, যা তারা করেনি।”
আখতারের ওপর হামলাকারীদের ‘অসভ্য জানোয়ার’ আখ্যা দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা লিখেছেন, “এই অসভ্য জানোয়ারদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। দালালি করতে করতে আর পা চাটতে চাটতে এরা এদের বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলেছে। এরা এদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য অভিশাপ। এই নরপশুদের আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।”
নিউইয়র্কে আখতারের ওপর হামলায় জড়িতদের যারা আশ্রয় দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে সারজিস লিখেছেন, “যারা অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে এই শয়তানদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন তারা সাবধান হয়ে যান। সুযোগ পেলে এই কালো সাপগুলো আপনাদেরকেই ছোবল মারবে।।”
“পিঠ বাঁচিয়ে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করা যাবে না। প্রবাসে রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এই হামলা দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক সহিংসতাকে বিদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক,” যোগ করেন সারজিস।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়ে আখতারের মতো নিউইয়র্কে রয়েছেন এনসিপির জারা। আখতার আক্রান্ত হওয়ার সময় তার পাশে ছিলেন তিনি।
জারা ফেসবুকে লিখেছেন, “এই হামলা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল পরাজিত শক্তির ভয় ও হতাশা কতটা গভীর। আমি নিশ্চিত এই আক্রমণ আখতার হোসেনকে একবিন্দুও দুর্বল করবে না, তার দৃঢ়তা আরো বাড়িয়ে দেবে।”
“এটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়, তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে করা হয়েছে। কারণ, তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন সেই দলকে, যে দল ফ্যাসিবাদের কাঠামো ভেঙে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে,” যোগ করেন জারা।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ
নিউইয়র্কে আখতারের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ঘটনার দিন জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, “যখন উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর আক্রমণ হয়েছিল, তখনো আমরা বলেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা জড়িত। ভেতর থেকে এই ইনফরমেশনগুলো লিক করা হয়।”
নাহিদের অভিযোগ, সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা যথাযথ ছিল না।
“ফলে আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সরকার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতা চাইছি। আমরা সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে বলতে চাই, এই যে ক্রমাগত হামলা, ষড়যন্ত্র এবং অপতৎপরতা চলমান রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,” বলেন নাহিদ।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতা নাহিদ বলেন, “মাহফুজ আলম যখন এর আগে বিদেশ গিয়েছিলেন, লন্ডনে এবং আমেরিকায়, তখন তার ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগ্রামী সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ড. তাসনিম জারাকে লক্ষ্য করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীরা হামলা ও ভর্ৎসনা করে।”
“ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশে ও বিদেশে যে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে- দেশকে অস্থিতিশীল করা, গণঅভ্যুত্থানের নেতা, শহীদ পরিবার ও আহতদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করা, সাইবার জগতে তাদের নিয়ে নানা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো; এসবই চলমান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্কে ঘটনা দেখতে হলো।”
নাহিদের ভাষ্য হলো, সরকারের পক্ষ থেকে যে বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি তারা বারবার বলে আসছেন, সেই জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ এত তৎপরতা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা
নিউইয়র্কের ঘটনায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লেখেন, “নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা আবারো প্রমাণ করল, আওয়ামী লীগ তাদের অন্যায়ের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না।”
“আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যা করেছে, সবকিছুর বিচার আইনের মাধ্যমে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে ধৈর্য ধরুন,” নেতাকর্মীসহ সব দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্ক রয়েছেন মির্জা ফখরুল। আরো রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
পৃথক এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. তাহের বলেন, “এটা হতাশাজনক হলেও নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের নেগেটিভ কালচার চলে আসছে। বিদেশ সফরে গেলে বিরোধী পক্ষ প্রায়ই স্লোগান বা বিক্ষোভ করে থাকে। তবে ডিম নিক্ষেপ অবশ্যই একটি ব্যাড কালচার।”
ডা. তাহেরের ভাষায়, আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে ১০-২০ জন মানুষ বিক্ষোভ করতে বা স্লোগান দিতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কাজ শেষ পর্যন্ত যারা করছে, তারা তাদেরই অপমানিত করছে। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক এবং এ ধরনের নেগেটিভ কালচারের অবসান হওয়া উচিত।”
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছাড়াও নিউইয়র্কের ডিম কাণ্ড নিয়ে দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গত বছরের পরাজয়ে তাড়িত। কিন্তু মুখ খারাপ করে গালাগাল করলে রাজনীতিতে কিছু অর্জন হয় না। নিউইয়র্কে তাদের এই অশ্লীলতা প্রদর্শন প্রমাণ করে, তারা এখনো জনগণের ক্ষোভ উপলব্ধি করতে পারেনি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক বিবৃতিতে বলেছে, “জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা আখতার হোসেন ও ডা. তাসনিম জারার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আওয়ামী লীগ। এই সন্ত্রাসী দলকে বাংলাদেশের মাটিতে আর ফিরতে দেওয়া হবে না।”
নিউইয়র্কের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের যথাযথ নিরাপত্তা দেননি।”
“নিউইয়র্কের মতো জায়গায় এ ধরনের অব্যবস্থাপনা শঙ্কিত করে। নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার চিত্রও প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দেওয়া গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির জন্য গুরুতর হুমকি,” যোগ করেন তিনি।
বিবৃতিতে আতাউর রহমান লেখেন, “এ ধরনের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। পাশাপাশি ঘটনার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দ্রুত তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
গণঅধিকার পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির জন্য একটি সতর্কবার্তাও বটে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়ে বিদেশে পালিয়েছে। গণহত্যায় জড়িত থাকার কারণে এই দলকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ”
এ ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, “এ ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ আশা করছি। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
নিউইয়র্কে আখতারের ওপর হামলা, ২৯ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না দলটি। ভবিষ্যতে এমন আরো ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে গণঅধিকার পরিষদ বিবৃতিতে লিখেছে, সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব যাদের ছিল, তাদের একইসাথে তার সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা।
সাকি ও রুবেল মনে করেন, এই হামলার ঘটনা প্রমাণ করে, তারা সফররত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণের ওপর গত ১৫ বছর যাবত এক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা আওয়ামী লীগ তার নিপীড়ক চরিত্র যে বহাল রেখেছে, এই ধরনের আক্রমণ বারবার হওয়া তারই প্রকাশ।
“একইসাথে সরকারের বিভিন্ন অংশ বিশেষভাবে আমলাতন্ত্রে কোনো সংস্কার ছাড়াই ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বহাল করা এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে কাজ করতে, যাতে ফ্যাসিবাদীরা নতুন করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করতে ও বিভক্তির সুযোগ নিতে না পারে,” লেখা হয় বিবৃতিতে।
আখতার কী বলছেন?
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে আক্রান্ত আখতার হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় নিজেকে লড়াকু হিসেবে বর্ণনা করেছেন; বলেছেন, “এই প্রজন্ম হাসিনার ছোড়া বুলেটে ভয় পায়নি। ওদেরই ছোড়া ডিমে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
তবে তিনি বলেন, “এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আওয়ামী লীগ জন্মগতভাবে এবং প্রকৃতিগতভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা সন্ত্রাস করবে।”
আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিচারে অন্তর্বর্তী সরকারের গাফিলতি দেখছেন এনসিপির এই মহাসচিব। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের যারা স্বাধীনতাকামী মানুষ, জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মানুষ, তাদের ওপর এভাবে হামলে পড়বে, এতে আমরা অবাক হই না। বরং আমরা মনে করি, এই এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল, সেটা সামান্য অগ্রসর হয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী যারা পালিয়ে এসেছে, তারা বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস করছে।”
নিউইয়র্কে আ. লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আখতারের মামলা
ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্থার শিকার হওয়ার পর ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর-সংলগ্ন থানায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আখতার হোসেন।
ওই থানার সামনে দাঁড়িয়ে এক ভিডিও বার্তায় আখতার বলেন, “মার্কিন পুলিশকে আমরা অবহিত করেছি যে, যারা এ ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ঘটাচ্ছেন, তারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, যারা গত বছর বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছেন। জাতিসংঘের রিপোর্টের ব্যাপারে আমরা তাদের অবহিত করেছি।”
“আমরা মনে করি যে, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশে হোক, দেশের বাইরে যেখানেই হোক, আমরা তাদের ব্যাপারে আইনগত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা এ কথা বিশ্বাস করি যে, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যত ধরনের অপরাধ করেছেন, সে অপরাধগুলোকে আইনগতভাবেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস নিয়ে বাংলাদেশে আর ফিরে আসার সুযোগ পাবে না,” বলেন তিনি।
নিউইয়র্কের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
অবশ্য নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট জেনারেলের কার্যালয় প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তায় কী করেছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কী নির্দেশনা গেছে, এমন প্রশ্ন তুলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছেন।
প্রভাব পড়বে রাজনীতি ও বহির্বিশ্বেও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমি মনে করি এই ধরনের আচরণ ঠিক হয়নি। এভাবে রাজনৈতিক ক্ষোভ প্রকাশের সংস্কৃতি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।”
“আমরা বাংলাদেশের মানুষ যখন অন্য দেশে থাকি, সেখানে উন্নত দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। যারা বিদেশে থাকেন, তারা একেকজন বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। তাদের কার্যক্রম সেদেশে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। ভবিষ্যতে যারা ওইসব দেশে যাবে, তাদের ভাগ্য নির্ভর করে তাদের কার্যক্রমের ওপরই।”
“তো আমরা যদি ভালো কাজ না করতে পারি, ভালো আচরণ দেখাতে না পারি; ভালো সংস্কৃতি চর্চার প্রকাশ ঘটাতে না পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রভাবিত হবে; এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,” বলেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।
ক্ষোভ প্রকাশের বৈধ মাধ্যম আছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, “বিদেশে আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে আমরা কী করছি, কী করছি না। যা-ই করি বাংলাদেশকে মাথায় রেখে করতে হবে। ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম আছে। যেসব বৈধ মাধ্যম আছে, সেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা উচিত।”
সহিংসতার মাধ্যমে অপমান করে ক্ষোভ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, “কাউকে চরমভাবে অপমান করে ক্ষোভ প্রকাশ করাটা সঠিক নয়। তারা দেশের অতিথি হিসেবে গিয়েছেন। এই অতিথিদের এভাবে অপমান করাটা ঠিক হয়নি। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছেন, তাদেরকে মানুষ ঘৃণা করছে এবং তাদের প্রতি মানুষ বিরক্ত হচ্ছে।”
নিউইয়র্কের ওই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে করেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “আমাদের সবার উচিত বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের সম্মান উঁচুতে রাখা।”
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প আওয় ম ল গ জ ল ই গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন র ন ত কর ম দ র য ক তর ষ ট র র ন ত কর ম র র জন ত ক ন ত আখত র হ স ন ছ ন এনস প র আখত র ও জ র ন উইয়র ক র ন শ চ ত কর আহ ব ন জ ন র র জন ত ক স প ট ম বর এক ব ব ত ত ন উইয র ক ম হ ম মদ র আহ ব ন সন ত র স এ ধরন র সরক র র ব যবস থ র ঘটন য় দল র ন আম দ র ন র জন কর ছ ন ত কর র গ কর ন ফ সব ক ক র পর র জন য য গ কর আওয় ম ইসল ম ঘটন র স গঠন অপম ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।
নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এই তথ্য জানান।
এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক এমদাদ আরিফুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।
সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। একই দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রপুঞ্জবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নিউইয়র্ক সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান, কসোভোসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন।