বুন্দেসলিগায় উড়ছে চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ। শতভাগ জয়ের ধারা বজায় রেখে গতকাল রাতে তারা ৪–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ভেরডার ব্রেমেনকে। বায়ার্নের জয়ের রাতে নতুন রেকর্ড গড়েছেন হ্যারি কেইন। জোড়া গোল করে বায়ার্নের হয়ে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার।

ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে একটি ক্লাবের হয়ে দ্রুততম এক শ গোলের রেকর্ড গড়লেন কেইন। বায়ার্ন ফরোয়ার্ড এই মাইলফলকটি গড়লেন ১০৪ ম্যাচে। এর আগে রেকর্ডটি যৌথভাবে দখলে রেখেছিলেন ১০৫ ম্যাচে শত গোল করা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও আর্লিং হলান্ড। ২০১১ সালে রোনালদো রেকর্ডটি গড়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। গত বছর তাঁর রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন হলান্ড।

ঘরের মাঠ আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ২২ মিনিটে জোনাথন টাহ প্রথম গোল করেন বায়ার্নের হয়ে। ৪৪ মিনিটে ব্রেমেনের বক্সে হ্যারি কেইন ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বায়ার্ন। পেনাল্টিতে লক্ষ্যভেদ করে বায়ার্নকে ২–০ গোলে এগিয়ে দেন কেইন।

আরও পড়ুনঅবশেষে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হ্যারি কেইন০৪ মে ২০২৫

বিরতির পর বক্সের ভেতর লুইস দিয়াজের পাস থেকে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোল করেন কেইন। চলতি মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ৫ ম্যাচে ১০ গোল করলেন কেইন। ৮৭ মিনিটে বায়ার্নের হয়ে শেষ গোলটি কনার্ড লাইমারের।

৫ ম্যাচের সবগুলো জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে বুন্দেসলিগা টেবিলের শীর্ষে বায়ার্ন। বড় হারে মাঠ ছাড়া ভেরডার ব্রেমেন ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১৪ তম। ৫ ম্যাচে ১টি জয় পেয়েছে তারা। হেরেছে ৩ ম্যাচ এবং ড্র করেছে অন্য ম্যাচে।

রেকর্ড গড়ার পর কেইন বলেছেন, ‘আমার নিজের কাছেও এটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। দারুণ এই ক্লাবের হয়ে ১০০ গোল করা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের। আর এত দ্রুত এটা করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।’

আরও পড়ুনরোনালদোর রেকর্ড ছোঁয়া হলান্ডের গোল করার অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কেইনকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বায়ার্ন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি বলেছেন, ‘আমি সবসময় মানুষকে মনে করিয়ে দিই, রক্ষণে ওর ভূমিকা রাখার কথা। পাশাপাশি কতটা পেছনে দৌড়ে গিয়ে দলকে সে সাহায্য করে সেটাও দেখতে বলি। সে রেকর্ড ভেঙেছে, কিন্তু সেটা করেছে দলকে অনেক কিছু দিয়ে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হল ন ড ন ক ইন র কর ড গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ