কক্সবাজারে পর্যটক বেড়েছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি
Published: 27th, September 2025 GMT
দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতিবছর পর্যটক বেড়েই চলছে, তবে সুযোগ-সুবিধা তেমন বাড়েনি। কক্সবাজার শহরে খাবারের মূল্য, পরিবহনের ভাড়া—সবকিছুই লাগামহীন, রয়েছে নিরাপত্তাঝুঁকিও। শহরজুড়ে যানজটের পাশাপাশি এখন সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় সড়ক। আগে সমুদ্রসৈকতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, তা–ও এখন বন্ধ।
পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের বেশির ভাগই আসেন কেবল সাগরের টানে। সাগরের নোনাজলে গোসল আর বালুচরে সূর্যাস্ত দেখেই তাঁদের সময় কাটে। পর্যটকদের কিছু অংশ দিনে দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, টেকনাফ সীমান্ত, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, মহেশখালীসহ নানা এলাকা ঘুরে বেড়ান। তবে সন্ধ্যার পর শহরে ফিরে এসে অলস সময় কাটে তাঁদের। আগে হিমছড়ি ঝরনা, দরিয়ানগর পর্যটনপল্লির শাহেনশাহ গুহা, উখিয়ার কানারাজার গুহা ও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের কুদুম গুহার প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ থাকলেও এখন সেখানে বেড়ানোর মতো পরিবেশ নেই। পর্যটকদের কাছে প্রিয় এসব স্থান অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ২০২৩ সালে অন্তত ৬০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে এসেছেন। ২০২৪ সালে এসেছেন ৭০ লাখ, এ বছর তা ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বছরে ১০ লাখ করে পর্যটক বাড়লেও তাঁদের জন্য বিনোদনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না, সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে না।
আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আগে সমুদ্রসৈকতে বালুর ভাস্কর্য মেলা, ঘুড়ি উৎসব, বিচ কার্নিভ্যাল, কনসার্ট, বিচ ফুটবল, বিচ ভলিবল, সার্ফিং প্রতিযোগিতা, বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠানসহ নানা উৎসবের আয়োজন করা হতো। নিরাপত্তার অজুহাতে এক দশক ধরে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস-রিসোর্টের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি তারকা হোটেল ও রিসোর্ট বছরে এক-দুবার করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, তা–ও নিজেদের অতিথিদের জন্য।
আগে সমুদ্রসৈকতে বালুর ভাস্কর্য মেলা, ঘুড়ি উৎসব, বিচ কার্নিভ্যাল, কনসার্ট, বিচ ফুটবল, বিচ ভলিবল, সার্ফিং প্রতিযোগিতা, বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠানসহ নানা উৎসবের আয়োজন করা হতো। নিরাপত্তার অজুহাতে এক দশক ধরে সবকিছু বন্ধ রয়েছে।—আবুল কাশেম সিকদার, সভাপতি, কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতিকক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকতের মধ্যে কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার সৈকত কয়েক দশক ধরে অরক্ষিত পড়ে রয়েছে জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, সন্ধ্যার পর মেরিন ড্রাইভে পর্যটক ভ্রমণ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। মেরিন ড্রাইভের পাশে ১০ থেকে ১২টি স্থানে নতুন বিনোদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে শহরের ওপর চাপ কিছু কমত।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ পর্যটকের বিপরীতে পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ১৭টি খাতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এরপরও পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। বিনোদনকেন্দ্রগুলোও সংস্কারের অভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পয়লা অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ উদ্যাপন করবে ডাকসু
পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়ে এলেও এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই এ উৎসব উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। আজ শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দিনব্যাপী নববর্ষের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ।
চারুকলায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে নববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। অনুষ্ঠানটি চারটি পর্বে সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। প্রথম পর্বে হবে রংতুলিতে নবান্ন। দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই ও নবান্ন থিমে ছবি আঁকা হবে। মোট ১৫ জন শিল্পী এই পর্বে ছবি আঁকবেন। পর্বটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। দ্বিতীয় পর্বে হবে আদি নববর্ষ আনন্দযাত্রা। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব এটি। চারুকলার সহযোগিতায় আনন্দযাত্রার জন্য তিনটি মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে। একটি মোটিফ জুলাই নিয়ে। একটি মোটিফ জেলেজীবন নিয়ে এবং অন্যটি কৃষিজীবন নিয়ে। এ ছাড়া গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপনা থাকবে এতে। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময়। বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্য বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে এই পর্বে থাকবে আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীত ও পালাগান।
এ উদ্যাপনের কারণ তুলে ধরে মুসাদ্দিক বলেন, দেশজ সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নববর্ষ উদ্যাপন, যা বর্তমানে পয়লা বৈশাখ হলেও এককালে ছিল পয়লা অগ্রহায়ণ। বাংলা সনের পঞ্জিকায় যে ১২টি মাস আছে, তার মধ্যে ১১টিই নক্ষত্রের নামে। এ ক্ষেত্রে ‘বৈশাখ’ বিশাখা নক্ষত্রের নামে, ‘জ্যৈষ্ঠ’ জ্যাষ্ঠা নক্ষত্রের নামে, ‘আষাঢ়’ আষাঢ়ার নামে এবং এভাবে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র যথাক্রমে শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদা, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, পৌষী, মঘা, ফাল্গুনী ও চিত্রার নামে। যে মাসটি নক্ষত্রের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ; আর এই নামের সঙ্গে মিশে আছে বাংলার কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তথ্য।
মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ বলেন, প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে নববর্ষের উৎসব উদ্যাপিত হতো। নববর্ষের আদি অনুষ্ঠান হিসেবে ‘আমানি’ উৎসব বা ‘নবান্ন’ উৎসবের কথা বলেছেন ঐতিহাসিকেরা, যা পয়লা অগ্রহায়ণে অনুষ্ঠিত হতো। এটি ছিল মূলত কৃষকের উৎসব। সম্রাট আকবরের সময় থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ‘বৈশাখ’ মাসকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রচলন করা হয়। কিন্তু বৈশাখকে বছর শুরুর মাস আর পয়লা বৈশাখকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে বাংলার মানুষ উদ্যাপন করেনি বলে দাবি করেন তিনি।
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। পরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেও এভাবে ধীরে ধীরে পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু উৎসাহ-উদ্দীপনার খবরাদি পাওয়া যায়। ১৯৬৭ সালে এই বংলায় প্রথম পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তানি শাসকেরা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করায় পাকিস্তানবিরোধী মানসিকতার বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মুসাদ্দিক বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আজ ভুলতে বসেছে, এককালে পয়লা অগ্রহায়ণই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নববর্ষ। প্রজন্মকে সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নবান্ন উৎসবকে আদি নববর্ষ উৎসব নামে উদ্যাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি যুবায়ের, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মিনহাজ ও বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সভাপতি মৃন্ময় মিজান উপস্থিত ছিলেন।