বিভ্রান্তি ছড়ালে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা
Published: 27th, September 2025 GMT
জি এম কাদেরকে দলের একজন সাধারণ সদস্য উল্লেখ করে জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গুলশানে জাতীয় পার্টির একাংশের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াতসহ নিবন্ধনহীন দলও সরকারি সুযোগ ভোগ করছে: জিএম কাদের
কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না সরকার: জিএম কাদের
সম্প্রতি লাঙ্গল প্রতীকের মালিকানা খুঁজে পাচ্ছে না সিইসির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ব্যারিষ্টার আনিস।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দলীয় সব কাগজপত্র ইসিতে পাঠানো আছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে লাঙ্গল প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান দাবি করার কোনো অধিকার জি এম কাদেরের নেই মন্তব্য করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “গঠনতন্ত্র ও আইন মেনে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হয়েছে। জিএম কাদের এখন পার্টির একজন সাধারণ সদস্য। এ নিয়ে জি এম কাদের বিভ্রান্তি ছড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে আনিসুল ইসলাম বলেন, “জি এম কাদের এক সময় বলেন, শেখ হাসিনার ফাঁসি চান। আবার বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন বৈধ হবে না। তিনি কখন কি বলেন নিজেও জানেন না। তার মতো একজন দ্বৈতনীতির লোক রাজনীতিতে কতটা প্রাসঙ্গিক তা ভাববার সময় এসেছে।”
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র এবং আরপিও অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট সর্বশেষ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, “উক্ত কাউন্সিলে আমি (ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ) সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলের পর আমরা কমিটি নির্বাচন কমিশনে সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। নতুন কমিটি গঠনের পর জি এম কাদের আর কোনভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দিতে পারে না।”
“তাছাড়া লাঙ্গল প্রতিক কোনো ব্যক্তির নয়। লাঙ্গল প্রতীক নির্বাচনের কমিশনের নিবন্ধিত ১২ নম্বর জাতীয় পার্টির প্রতীক।তাই আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের নেতৃত্বই জাতীয় পার্টির একমাত্র বৈধ নেতৃত্ব এবং লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার।”
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরো বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু পক্ষ নির্বাচন কমিশনে ভিন্ন ভিন্ন আবেদন জমা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আবেদনে নয়, কেবলমাত্র দলীয় গঠনতান্ত্রিক নেতৃত্বের বৈধ আবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন বরাদ্দ দিতে পারে। অতীতেও নির্বাচন কমিশন একই নীতি অনুসরণ করেছে এবং এবারও আইন, সংবিধান ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”
“জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক হলো দলের ঐতিহ্য, জনগণের আস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতীক। এ প্রতীক কেবল বৈধ নেতৃত্বকেই প্রদান করা উচিত। বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী আবেদনগুলো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সিনিয়ার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ।
প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমান খান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, সরদার শাহজাহান, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো.
ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলনতানা রানী, জামাল রানা, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন তোতা, ডাক্তার সেলিমা খান, যুগ্ম মহাসচিব মাসুক রহমান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শারমিন পারভীন লিজা, তাসলিমা আকবর রুনা, মিজানুর রহমান, উর রহমান বিপুল, যুগ্ম সম্পাদক- ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, আবদুস সাত্তার, মাসুম, এস এম হাশেম, সাইফুল ইসলাম শোভন, কেন্দ্রীয় নেতা জাকির মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আল মামুন, আবু জাফর মো.কামাল, বজলুর রহমান মৃধা, হাদিসুর রহমান, ফয়সাল প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র গঠনতন ত র এম ক দ র র রহম ন জ এম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।
অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।
অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’
স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।
এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া