জি এম কাদেরকে দ‌লের একজন সাধারণ সদস‌্য উল্লেখ ক‌রে জাতীয় পা‌র্টি নি‌য়ে কো‌নো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ালে তার বিরু‌দ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গুলশানে জাতীয় পার্টির একাংশের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা ব‌লেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপি-জামায়াতসহ নিবন্ধনহীন দলও সরকারি সুযোগ ভোগ কর‌ছে: জিএম কাদের

কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না সরকার: জিএম কাদের

সম্প্রতি লাঙ্গল প্রতী‌কের মা‌লিকানা খুঁজে পা‌চ্ছে না সিইসির এই মন্ত‌ব্যের প্রেক্ষি‌তে নি‌জে‌দের বৈধ মা‌লিক দা‌বি ক‌রে এই সংবাদ স‌ম্মেলন ডা‌কেন ব‌্যা‌রিষ্টার আনিস।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দলীয় সব কাগজপত্র ইসিতে পাঠানো আছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে লাঙ্গল প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান দাবি করার কোনো অধিকার জি এম কাদেরের নেই মন্তব্য করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “গঠনতন্ত্র ও আইন মেনে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হয়েছে। জিএম কাদের এখন পার্টির একজন সাধারণ সদস্য। এ নিয়ে জি এম কাদের বিভ্রান্তি ছড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে আনিসুল ইসলাম বলেন, “জি এম কাদের এক সময় বলেন, শেখ হাসিনার ফাঁসি চান। আবার বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন বৈধ হবে না। তিনি কখন কি বলেন নিজেও জানেন না। তার মতো একজন দ্বৈতনীতির লোক রাজনীতিতে কতটা প্রাসঙ্গিক তা ভাববার সময় এসেছে।”

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র এবং আর‌পিও অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট সর্বশেষ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে দা‌বি ক‌রে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, “উক্ত কাউন্সিলে আমি (ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ) সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলের পর আমরা কমিটি নির্বাচন কমিশনে সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। নতুন কমিটি গঠনের পর  জি এম কাদের আর কোনভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দিতে পারে না।”

“তাছাড়া লাঙ্গল প্রতিক কোনো ব্যক্তির নয়। লাঙ্গল প্রতীক নির্বাচনের কমিশনের নিবন্ধিত ১২ নম্বর জাতীয় পার্টির প্রতীক।তাই আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের নেতৃত্বই জাতীয় পার্টির একমাত্র বৈধ নেতৃত্ব এবং লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার।”

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরো বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু পক্ষ নির্বাচন কমিশনে ভিন্ন ভিন্ন আবেদন জমা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আবেদনে নয়, কেবলমাত্র দলীয় গঠনতান্ত্রিক নেতৃত্বের বৈধ আবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন বরাদ্দ দিতে পারে। অতীতেও নির্বাচন কমিশন একই নীতি অনুসরণ করেছে এবং এবারও আইন, সংবিধান ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”

“জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক হলো দলের ঐতিহ্য, জনগণের আস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতীক। এ প্রতীক কেবল বৈধ নেতৃত্বকেই প্রদান করা উচিত। বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী আবেদনগুলো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,” ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাগত বক্তব‌্য রা‌খেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার,  সিনিয়ার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ।

প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমান খান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, সরদার শাহজাহান, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো.

বেলাল হোসেন।

ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলনতানা রানী, জামাল রানা, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন তোতা, ডাক্তার সেলিমা খান, যুগ্ম মহাসচিব মাসুক রহমান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শারমিন পারভীন লিজা, তাসলিমা আকবর রুনা, মিজানুর রহমান, উর রহমান বিপুল, যুগ্ম সম্পাদক- ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, আবদুস সাত্তার, মাসুম, এস এম হাশেম, সাইফুল ইসলাম শোভন, কেন্দ্রীয় নেতা জাকির মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আল মামুন, আবু জাফর মো.কামাল, বজলুর রহমান মৃধা, হাদিসুর রহমান, ফয়সাল প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র গঠনতন ত র এম ক দ র র রহম ন জ এম ক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক

দক্ষিণ এশিয়ার ভূগোল এক হলেও স্বাস্থ্য খাতের মর্যাদা ও আর্থিক কাঠামোয় বাংলাদেশের অবস্থান যেন এক পরিহাস। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল কিংবা শ্রীলঙ্কায় চিকিৎসক ও নার্সরা যেখানে তুলনামূলকভাবে সম্মানজনক বেতন ও সুবিধার অধিকারী, সেখানে বাংলাদেশে তাঁদের উপার্জন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

রাজধানীতে ‘অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ’-এর সাম্প্রতিক আলোচনায় প্রকাশিত তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে একজন চিকিৎসক বেতন পান তিন লাখ টাকা। আর একজন নার্স পান ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে একজন চিকিৎসক বছরে বেতন পান ১৬ লাখ টাকার বেশি; অন্যদিকে নার্স পান প্রায় ৭ লাখ টাকা। নেপালে একজন চিকিৎসক বছরে বেতন পান ১০ লাখ টাকার বেশি আর একজন নার্স পান ৫ লাখ টাকা। একইভাবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক কম আর্থিক সুবিধা পান। দেশে স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো নেই। এ তথ্য শুধু পরিসংখ্যান নয়; বরং এক গভীর হতাশার প্রতিচ্ছবি।

চিকিৎসক ও নার্সদের পেশা কেবল চাকরি নয়; বরং এটি এক অনন্ত মানবিক ব্রত। তাঁরা মানুষের দুঃখ লাঘব করেন, প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। অথচ এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁদের যে স্বল্পতম আর্থিক প্রতিদান দেয়, তা এক অর্থে তাঁদের শ্রমের অবমাননা।

একজন চিকিৎসক যখন জানেন তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য প্রাপ্তি নেই, তখন তাঁর মনে জন্ম নেয় বঞ্চনার বোধ। এই বঞ্চনাই কর্মস্পৃহা নিঃশেষ করে এবং অগণিত মেধাবী চিকিৎসক-নার্সকে প্রবাসমুখী করে তোলে।

এভাবে যদি শ্রমের অবমূল্যায়ন হতে থাকে এবং মেধাপ্রবাহ যদি বহমান থাকে, বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো একসময় দক্ষ জনশক্তিহীন হয়ে পড়বে। প্রতিদিন যে বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসার প্রত্যাশায় হাসপাতালে ভিড় করেন, তাঁদের সেবার মান অবধারিতভাবে হ্রাস পাবে। চিকিৎসা তখন আর মানবিকতার প্রতীক থাকবে না; বরং তা নিছক যান্ত্রিকতায় পরিণত হবে। এমনিতেই আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যার বিপরীতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বহু আগে থেকে।  

সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায্য মজুরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সদের ক্ষেত্রে এ প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটছে। সমাজ দর্শনের এক পুরোনো সত্য এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ‘যেখানে চিকিৎসক অসম্মানিত, সেখানে সমাজের রোগ নিরাময় অসম্ভব।’ স্বাস্থ্য খাতের এ অবমাননা কেবল চিকিৎসকদের নয়, গোটা জাতির জন্যও। 

এ কারণে রাষ্ট্রীয় নীতিতে মৌলিক সংস্কার এখনই প্রয়োজন। চিকিৎসক-নার্সদের জন্য আলাদা ও সময়োপযোগী বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। পেশার ঝুঁকিপূর্ণ চরিত্রকে স্বীকৃতি দিয়ে ঝুঁকি ভাতা চালু করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ন্যূনতম বেতন, বাসস্থানসুবিধা ও অবসরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা নয়; বরং মানবিক দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কর্মীদের বেতন এমন হওয়া উচিত, যাতে তাঁকে অতিরিক্ত আয়ের জন্য বিকল্প খুঁজতে না হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীর দায়িত্ববোধ বাড়বে এবং সেবার মানও বাড়বে।

স্মরণ রাখা দরকার, একটি জাতি কীভাবে তার জ্ঞানবাহক ও জীবন রক্ষাকারীদের মর্যাদা দেয়, তার দ্বারা সেই জাতির সভ্যতার মান নির্ণীত হয়। চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা করা মানে মানবিকতাকেই অবহেলা করা। তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধীরে ধীরে অকার্যকরতায় নিমজ্জিত হবে এবং একদিন কেবল রোগীর দেহ নয়, জাতির মননও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • ‘বাংলাদেশ জাতীয় লীগ’: নিবন্ধন পেতে যাওয়া দল গঠনতন্ত্র দেখাতে চায় না
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • দল থেকে বহিষ্কৃত ওসমান পরিবারের দোসররা আপনার আশপাশে : টিপু 
  • বৃদ্ধা মাকে তালাবদ্ধ করে ৮ দিন ধরে নির্যাতন করলো দুই ছেলে, উদ্ধার  
  • ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
  • ১ থেকে ১২ অক্টোবর নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত