গল্পের শুরুটা হয়েছিল এক সাধারণ গৃহিণীর ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তা থেকে—চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে। কিন্তু কে জানত, সেই সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা একদিন বাংলাদেশের সৌন্দর্য জগতে ‘ন্যাচারালস বাই রাখি’ নামের এক সফল ব্র্যান্ডের জন্ম দেবে! যশোরের উদ্যমী দুই ভাইবোন রাখি সাহা ও ভিক্টর সাহার হাত ধরে বেড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি কেবল তাঁদের নিজেদের স্বপ্নকেই সত্যি করেনি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে শতাধিক মানুষের।
একচিলতে ঘরোয়া উদ্যোগ থেকে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের চার হাজার বর্গফুটের আধুনিক কার্যালয়—তাঁদের এই পথচলা যেকোনো নবীন উদ্যোক্তার জন্য এক দারুণ অনুপ্রেরণা। সম্প্রতি যশোরের মেহেদিপাতা ও জবা ফুলের অপরূপ এক বাগানে বসে ভিক্টর সাহার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁদের এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনের গল্প।

সংকট থেকে সম্ভাবনার শুরু

মূল সূচনা হয়েছিল রাখি সাহার (৩৭) ব্যক্তিগত এক সংকট থেকে। ২০২০ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর মারাত্মক চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মায়ের কাছ থেকে শেখা ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সাধারণ উপাদান, যেমন মেথি, কালিজিরা, জবা ফুল, নিমপাতা, অ্যালোভেরা, আমলকি ও খাঁটি নারকেল তেল দিয়ে একটি বিশেষ তেল তৈরি করেন। এই তেল ব্যবহারে তিনি এতটাই উপকার পান যে তাঁর চুল পড়া তো কমেই, সঙ্গে নতুন চুলও উঠতে শুরু করে।

রাখি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সাফল্যই আমার নিজের জন্য কিছু একটা করার আত্মবিশ্বাস জোগায়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ছোট ভাই ভিক্টর সাহাকে (৩১) আমি এই ইচ্ছার কথা জানাই। তত দিনে ভিক্টর ফ্রিল্যান্সিংয়ে (ডিজিটাল বিপণন) বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। আমার এই সাফল্যের গল্পে সে একটি ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখতে পায়। তখন ভিক্টরই “ন্যাচারালস বাই রাখি” নামটি ঠিক করে এবং একটি ফেসবুক পেজ ও লোগো তৈরি করে এর যাত্রা সূচনা করে।’ এভাবেই শুরু হয় ভাইবোনের সাফল্যের যাত্রা।

নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রাখি সাহা ও ভিক্টর সাহা (ডানে).

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ফল য

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ