প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কে তাঁর হোটেল স্যুটে একত্র হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা। তাঁরা বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিজামি গঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) সহসভাপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এনজিআইসির নামকরণ করা হয়েছে খ্যাতনামা একাদশ শতকের পারস্য কবি নিজামি গঞ্জাভির নামে।

উচ্চপর্যায়ের এই দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্তোইয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্লাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

বৈঠকে কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, একাধিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসির সহসভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

নেতারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সারা জীবনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনার পাশে আছি।’

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি, শোষণ ও অপশাসনের কারণে দেশটি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

বিভিন্ন নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যেকোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে জানাবেন।’

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সফরকারী কেরি কেনেডি বাংলাদেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আপনাদের অর্জন অসাধারণ।’

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনাদের প্রয়োজন হলে আমরা আছি।’

সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস এভাবে অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়ে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমাদের সমর্থনে একসঙ্গে আপনাদের দাঁড়ানো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি একেবারেই মুগ্ধ।’ তিনি বাংলাদেশের অবস্থা তুলনা করেন একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে ফেরার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘দেশটি গত ১৬ বছর ধরে একটি ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমিত সম্পদের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ‘মানুষ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের অবশ্যই তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে—তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’

অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।  তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য।’ সভায় এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘৫ দফা দাবি মেনে নিন, অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবি করায় বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন চাই না। অথচ এক বছর আগেই ২০০ আসনে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বড় দলটির একটি আসনে এখানো ১০ জনের বেশি প্রার্থী কাজ করছেন। প্রার্থী ঘোষণা করে দেখেন না, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে সিলেটে জামায়াতের কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব এ কথা বলেন। নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে সিলেট মহানগর জামায়াত।

অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে এহসানুল মাহবুব আরও বলেন, ‘কেউ কেউ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বোঝেন না। সময় গেলে এটাও বুঝবেন। কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পদ্ধতির মতো পিআর পদ্ধতিও এ দেশে কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে।’

আরও পড়ুন‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই, উপদেষ্টা অনেকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ: গোলাম পরওয়ার২ ঘণ্টা আগে

এহসান মাহবুব বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। অথচ পিআর পদ্ধতি হলে বেশি ভোট কাস্ট হবে। মনোনয়ন–বাণিজ্য বন্ধ হবে। জনগণের ভোটের সঠিক মূল্যায়ন থাকবে। তাই আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। স্বৈরশাসকের সঙ্গে থাকা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কোর্ট পয়েন্ট থেকে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা মোড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য সিলেট জেলার আমির হাবিবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জেলার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি জামিল আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে গণমিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে সিলেট নগরের বন্দরবাজার থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা এলাকায় গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের সিলেট মহানগরী সভাপতি তাজুল ইসলাম হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদু হান্নান। মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরে মাওলার সঞ্চালনায় গণমিছিল ও সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগরের সহসভাপতি শাহ আশিকুর রহমান, সিলেট জেলার সহসভাপতি মুখলিসুর রহমান, মহানগরের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলয়াস, আবদুল হান্নান তাপাদার, মুহাম্মদ ফয়জুল হক, ইমদাদুল হক নোমানী, জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্যানেলের বাইরের প্রার্থীকে সমর্থন, ছাত্রদল নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
  • চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সভা: বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত করে আলোচনার আহ্বান
  • ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা
  • বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের সভাপতি খোরশেদ আলম
  • ‘৫ দফা দাবি মেনে নিন, অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে’