দেশে পর্যটন খাতে অবদান রেখে চলেছেন তৌহিদুল আলম মিল্কি। ছোট একটি উদ্যোগ থেকে, স্বপ্ন এবং উদ্যোম নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন আকাশবাড়ী হলিডেজ। এটি দেশের অন্যতম আলোচিত, জনপ্রিয় পর্যটন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।  

মিল্কি শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি ‘ভ্রমণ বন্ধু’ বা ‘পর্যটক বন্ধু’ হিসেবেও পরিচিত। তিনি মানুষকে শুধু ভ্রমণ পরিকল্পনা দেন না, মানুষের মনে ভ্রমণের স্বপ্ন জাগান, বাস্তবায়নের পথ দেখান। 

তার শুরুটা ছিল একেবারেই সাধারণভাবে। প্রথমদিকে তিনি ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার পরিসর বড় হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তার ব্যবসার শুরুর দিকে মাত্র ৬৬ হাজার টাকায় ৫ রাত ৬ দিনের জন্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর ভ্রমণের ব্যবস্থা করে মানুষের কাছে আলোচিত হন তিনি। আবার মালদ্বীপ কিংবা শ্রীলঙ্কার ভ্রমণ প্যাকেজ মাত্র ৬১ হাজার টাকায় করেন। এই অফারের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন ভ্রমণ বিলাসিতার বিষয় নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনায় সাধারণ মানুষের নাগালের ভেতরও তা সম্ভব।

মিল্কি সবসময় চেষ্টা করেছেন যাতে ভ্রমণ খাতে শ্রেণিবৈষম্য না থাকে। যারা কম খরচে ঘুরতে চান, তাদের জন্য যেমন তিনি ব্যবস্থা করেছেন, তেমনি যারা বিলাসবহুল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাদের জন্যও তিনি বিশেষ প্যাকেজ রেখেছেন। সময়ের সাথে সাথে তার ব্যবসার ব্যাপ্তি বাড়তে বাড়তে আজ ৬টি অফিসে প্রায় ২০০ কর্মী নিয়ে কাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফলো করছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। এভাবেই তিনি শুধু নিজে সাফল্য অর্জন করেননি, অনেককে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়, বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখা অনেক শিক্ষার্থীকেও সহায়তা করেন মিল্কি। কম খরচে ভিসা প্রসেসিং, ডকুমেন্টেশন, টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে যাবতীয় সমন্বয়ের ব্যবস্থা করেন। ফলে, যেসব শিক্ষার্থী একা এসব প্রক্রিয়া সামলাতে ভয় পান, তাদের জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত অভিভাবক। 

কক্সবাজারের টেকনাফে তার প্রতিষ্ঠিত ‘মিল্কি রিসোর্ট’ পর্যটকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিন তারকা মানের এই রিসোর্টে পর্যটকদের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের কক্ষ, আধুনিক সুবিধা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি থাকার সুযোগ। মিল্কি রিসোর্টের সাফল্য প্রমাণ করে, শুধু ভ্রমণ এজেন্সি নয়, আবাসন খাতেও তিনি সমানভাবে মনোযোগী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মিল্কি সবসময়ই আশাবাদী। তার মতে, পর্যটক আকৃষ্ট করতে কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যথেষ্ট নয়। রাতভর বিনোদন, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, বিচ পার্টি, সঙ্গীত ও নৃত্য- এসব কেন্দ্র করেই পর্যটন শিল্পকে নতুনভাবে সাজাতে চান তিনি। কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ‘বিশেষ পর্যটন জোন’, ঝুলন্ত ব্রিজ, কেবলকার এবং নদীভিত্তিক প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছেন। 

এই পথ সহজ নয়, প্রশাসনিক অনুমোদন, অর্থায়ন ও অবকাঠামোগত জটিলতা রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিবন্ধকতাকে তিনি নতুন সম্ভাবনায় রূপ দিতে চান। তার উদ্দেশ্য শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের আনন্দ, আরামের মুহূর্তগুলো সহজ করে দেওয়া। আজ যখন বিশ্বজুড়ে মানুষ বিনোদন ও বিশ্রামের জন্য নানা প্রান্তে ছুটছে, মিল্কি চান আমাদের দেশের মানুষও সীমিত বাজেটে নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণ উপভোগ করুক। বিশ্ব পর্যটন দিবসে তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্প খরচে দেশে-বিদেশের পর্যটন স্পটগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। 

ঢাকা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য ব যবস থ র ব যবস ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

সৌন্দর্যের মায়াবি হাতছানিতে পর্যটকদের কাছে ডাকছে শ্রীমঙ্গল

রোদ ঝলমলে শরতের আকাশ। মাঝে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তার নিচে বিছিয়ে দেওয়া কার্পেটের মতো সবুজ চা বাগান। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রকৃতির এমন মায়াবী রূপ মন কেড়েছে পর্যটকদের। 

“মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখিনি। এখানে এসে মন ভরে গেছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই সবুজ আর সবুজ। এই সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখে মাতোয়ারা হয়ে যাই।” এমনটা বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল মজিদ মোল্লা।

ঢাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক ফারজানা বলেন, “প্রকৃতির অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৌলভীবাজারে।” 

শরতের রোদেলা দুপুরে জেলার ঐতিহ্যবাহী চা কন্যা ভাস্কর্যের কাছে তার সাথে কথা হয়। মৌলভীবাজারের প্রবেশ পথেই পর্যটকদের বিমহিত করে এই দৃশ্য।

দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজ্যখ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ভিড় জমেছে এখানকার হোটেল-রির্সোট গুলোতে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেশকিছু দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখা যায় দল বেঁধে পর্যটকরা সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককেরও দেখা পাওয়া গেল।

প্রতি বছর শেষ শরতে এখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুমের শুরু, অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারা দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে এসেছেন এই চায়ের রাজ্যে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রীযাপন করে থাকেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন।

তারা এখানে অবস্থান করে পুরো জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এবং এ জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকরেন।

শ্রীমঙ্গল রামনগর রিসোর্টে কর্মরত হিরনময় সিং বলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে এরইমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯০% থেকে ৯৫% রিজার্ভ হয়ে গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই হোটেল রিসোর্ট-গুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন। যে কোন ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। আকর্ষণীয় সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।”

পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভালো গাইডের অভাবে এখানে পর্যটকরা এসে এলোমেলো হয়ে যান। গাইড লাইন দিয়ে সেবা দিলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন। কম সময়ে অনেক স্পট দেখতে পারেন।”

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, দুদিন ধরে সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শতাধিক পর্যটক টিকিট নিয়ে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশিয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবাসংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, “মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যে কোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্টে বুকিং রয়েছে ৯০% পার্সেন্ট।” 

শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হোটেলের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন হোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন মান অনুযায়ী সেবা দেন না বরং বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি যেন পর্যটকরা প্রতারিত না হয়।”

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২০০৮ সাল মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে ওঠেনি। রাস্তা ঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশিরভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়রট্যুর গাইড সৈয়দ শিপন আলী বলেন, “আমরা যথাযথভাবে পর্যটকদের সেবা দিতে চেষ্টা করি। গতকয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশি পর্যটক কম আসছেন। দুই-তিন জন বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলেছে গত শুক্রবারে।’’

পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, “টানা ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক আসবেন। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন, সে পরিমাণ থাকার হোটেল রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।” 

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।”

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, “মৌলভীবাজার অপূর্ব সৌন্দর্যের ক্ষেত্র আমরা পর্যটকদের সুবিদা দিতে প্রস্তুত। টুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা সবগুলো ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারি।”

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়
  • ইউনেসকো–ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে কোনগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি টানে
  • উন্মুক্ত কেওক্রাডং, স্বস্তিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা 
  • চালু থাকছে লাইফগার্ড সেবা, পর্যটকদের স্বস্তি
  • সৌন্দর্যের মায়াবি হাতছানিতে পর্যটকদের কাছে ডাকছে শ্রীমঙ্গল