দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না
Published: 13th, October 2025 GMT
দেশে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেই চাহিদাকে সামনে রেখে ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চট্টগ্রামের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এনএসইজেডে ১০০ একর জায়গায় ২০২২ সালে এই কারখানার কাজ শুরু হয়েছিল। নতুন এই কারখানা তৈরিতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত জুনে কারখানাটির কাজ শেষ হয়েছে। তবে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, সব মিলিয়ে কারখানাটি তৈরিতে ৭৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ১০ ব্যাংক। বাকি টাকা উদ্যোক্তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ। ২০২২ সালে কারখানা তৈরির কাজ শুরু হলেও এর মধ্যে মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়েছে। অবকাঠামো তৈরির পণ্যের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া কাঁচামাল ও বিদেশি যন্ত্রাংশ আমদানিতে জটিলতায় পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েক মাস কারখানা তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। শুরুতে ২০২৪ সালের মার্চে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে কারখানার নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়। পরে চলতি বছরের জুনে শেষ হয় কারখানার কাজ। তাতে কারখানাটির নির্মাণ ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানার উৎপাদন চালু করতে আমাদের গ্যাসের চাহিদা ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৩৩ ঘনমিটার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সুপারিশে গত বছরের মার্চে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছি। কেজিডিসিএল ইতিমধ্যে আমাদের কারখানা পরিদর্শন করেছে। এখন তারা যত দ্রুত সংযোগ দেবে, তত দ্রুত আমরা উৎপাদনে যেতে পারব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সদস্য মেজর জেনারেল (অব.
গ্যাস সংযোগের বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ আবু নসর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট নেই। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছে। আমরা বিভিন্ন কাগজপত্র পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই কারখানাটিতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।’
বছরে তৈরি হবে ২৫ হাজার গাড়ি
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ মূলত ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। মিরসরাইয়ের কারখানাটিতে প্রতিষ্ঠানটি মূলত বৈদ্যুতিক গাড়ির মূল কাঠামো (বডি), ব্যাটারি, মোটর ও চার্জার তৈরি করবে। এতেই খরচ হবে গাড়ির তৈরির প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থ। বাকি অর্থ আমদানিতে খরচ হবে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ যে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করবে, তা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের। প্রতিষ্ঠানটি ইলেকট্রিক টু–হুইলার, ইলেকট্রিক থ্রি–হুইলার, ফোর–হুইল কারগো ভেহিক্যাল ও ফোর–হুইল ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল বাজারে আনবে। বছরে ১৫ হাজার ফোর–হুইল কারগো ভেহিক্যাল, ফোর–হুইল ২৫ হাজার ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ৫০ হাজার ইলেকট্রিক থ্রি–হুইলার ও ১ লাখ ইলেকট্রিক টু–হুইলার উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির। এটি চালু হলে তাতে কর্মসংস্থান হবে দেড় হাজার মানুষের, পরে উৎপাদনক্ষমতা বাড়লে সব মিলিয়ে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
দেশেই তৈরি হবে যন্ত্রাংশ
একই জায়গায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি ও ম্যাঙ্গো টেকনোলজিস নামের তিনটি কারখানা তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি হবে গাড়ির মূল কাঠামো (বডি)। এতে সেডান কার, এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল), মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও বাসের মূল কাঠামো তৈরি করা হবে। বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানায় তৈরি হবে লিথিয়াম ব্যাটারি। এই কারখানাও বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের। এই কারখানা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ম্যাঙ্গো টেকনোলজিসের কারখানায় তৈরি হবে মোটর, মোটর নিয়ন্ত্রণ ও চার্জিংয়ের যন্ত্রপাতি। এ কারখানা তৈরিতে খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা। আপাতত উদ্যোক্তারা এই অর্থের জোগান দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবীর বলেন, উৎপাদনে না যাওয়া পর্যন্ত গাড়ির দাম কত হবে, তা বলতে পারছি না। তবে ফোর–হুইল সেডান গাড়ি পাওয়া যাবে ১৫ লাখ টাকার কমে। এসইউভি অথবা জিপের দাম হবে ৪০ লাখ টাকার মধ্যে। দেশে সঠিক চার্জিং অবকাঠামো তৈরি না হওয়ায় আমরা ফাস্ট চার্জার বা দ্রুততম গতির চার্জার তৈরির চেষ্টা করছি। ফলে কয়েক ঘণ্টায় আমাদের গাড়িগুলো চার্জ দেওয়া যাবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র জ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ আমলের তিন নির্বাচনে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ জানতে চায় তদন্ত কমিশন
আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) সংগঠিত বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বা তথ্য জানতে চায় জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন।
দেশের যেকোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সরাসরি, কমিশনকে ই-মেইল করার মাধ্যমে, কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘মতামত ও সুপারিশ’ অপশন-এর মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে তথ্য বা অভিযোগ দিতে পারবেন। আজ রোববার পত্রিকায় প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ২৬ জুন রাতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক, আইনজীবী তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম।
জানতে চাইলে মুঠোফোনে কমিটির সদস্য মো. আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ কমিশনে তথ্য বা অভিযোগ দিতে পারবে। এরপর কমিশনের একটি প্রতিবেদন হবে, সেখানে এর একটি প্রতিফলন থাকবে।
এদিকে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচনধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) তদন্ত কমিশন’ গঠন করেছে। চলমান তদন্ত কার্যক্রমে অংশ নিতে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি প্রতি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সশরীর কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বা তথ্য জানাতে পারবেন।
এতে বলা হয়েছে, কমিশনের ই-মেইলে ([email protected]) অথবা ওয়েবসাইটে (www.neic-bd.org) উল্লেখিত ‘মতামত ও সুপারিশ’ অপশন-এর মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে অভিযোগ বা তথ্য প্রদান করতে পারবেন। এ ছাড়া টেলিফোনে বা সশরীর কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ বা তথ্য দিতে অফিস চলাকালে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। টেলিফোনে যোগাযোগ করার নম্বর ০২-২২২২১৫৬৪৭ আর মোবাইল নম্বর ০১৫৫০০৪২০০।