চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

তবে সরকার বর্ধিত মাশুল কার্যকরের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। গতকাল নৌপরিবহনসচিব বলেছেন, মাশুল কমানোর সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’–এর ব্যানারে গতকাল রোববার সভার আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে এ সভায় বিভিন্ন খাত ও সংগঠনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।

ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই মাশুল আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে নতুন মাশুল কার্যকর করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে।

গতকালের সভায় আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি অপারেটররা চায় ট্যারিফ বাড়িয়ে দেওয়া হোক। মাশুল বৃদ্ধির নেপথ্যে যারা আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বর্ধিত মাশুল স্থগিত রেখে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, মোংলা ও পায়রায় মাশুল বাড়ানো হয়নি, বাড়ানো হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কোনো খাতে ছয় গুণ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন দিনমজুর, শ্রমিক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের জনগণ। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধার জন্য মাশুল বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড, মায়ের্সক লাইনের পেছনে কারা, এজেন্ট কারা, অফিসে কারা যায়, আমাদের কাছে খবর আছে। বলে দেব কিন্তু। তখন লজ্জা পাবেন। আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে টার্মিনাল দিয়ে দেবেন, সেটা হবে না। পতেঙ্গা টার্মিনাল যারা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের পরিণতি আমরা দেখেছি।’

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে কখনো লোকসান করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে? ব্যবসায়ীরা বাড়তি খরচ কতটুকু নিতে পারবে, সেটা বিবেচনা করা হয়নি। আমরা তো নিউমার্কেটে পণ্য বিক্রি করি না, ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য বিক্রি করি। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের ব্যবসার খরচ এমনিতেই বেশি। এই বাড়তি মাশুল স্থগিত করুন।’

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বড় ভুক্তভোগী হবে ভোক্তা ও রপ্তানিকারকেরা। মাশুল বাড়িয়ে আমরা যেন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ি।’ মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, নতুন বর্ধিত মাশুল কার্যকর হলে ক্রেতারা পোশাক নেবে না। তারা ভিয়েতনাম ও ভারতে চলে যাবে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দর ও ডিপোর মাশুল বাড়ানোর পর একটি ২০ ফুটের কনটেইনারে কাঁচামাল এনে আবার রপ্তানি করতে হলে এখন ১০০ ডলারের বেশি বাড়তি খরচ হবে। এ অবস্থায় ছোট রপ্তানিকারকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাশুল কার্যকর হলে ভিয়েতনামের চেয়ে খরচ তিন গুণ বাড়বে। এটা সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, বন্দরের নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে এ অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত হবে চট্টগ্রাম বন্দর।

বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (বেপজিয়া) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, চীন, ভারত ও কম্বোডিয়া ব্যবসার খরচ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। আর আমরা খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছি। এটা হতাশাজনক।’

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কাউকে লাভ করানোর জন্য অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, মার্কিন ট্যারিফ কমাতে বিদেশে গিয়ে তদবির করেছেন, কিন্তু দেশে ট্যারিফ না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়ে দিলেন, এটা কীভাবে হয়?

সচিব বললেন, মাশুল কমানোর সুযোগ নেই

নৌপরিবহনসচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, গত প্রায় ৪০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে মাশুল বাড়ানো হয়নি। ১৯৮৬ সালের পর এবার প্রথম মাশুল বাড়ানো হয়েছে। তাই এই মাশুল কমানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পাঁচ বছর পরপর এটা বাড়ানো উচিত ছিল।

গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এই নিয়োগ হয়ে যাবে। তাদেরও মুনাফার বিষয় আছে। তাই মাশুল কমানোর সুযোগ নেই। সমীক্ষার ভিত্তিতে এই মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে নৌপরিবহনসচিব বললেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দুটিসহ দেশের মোট তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য এই অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়িয়ে লিড টাইম কমিয়ে আনতে বিদেশি অপারেটর ছাড়া উপায় নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম শ ল কম ন র স য গ ন ই ম শ ল ক র যকর বর ধ ত ম শ ল ব যবস য় দ র র ব যবস হ ম মদ আম দ র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘৫ দফা দাবি মেনে নিন, অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবি করায় বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন চাই না। অথচ এক বছর আগেই ২০০ আসনে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বড় দলটির একটি আসনে এখানো ১০ জনের বেশি প্রার্থী কাজ করছেন। প্রার্থী ঘোষণা করে দেখেন না, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে সিলেটে জামায়াতের কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব এ কথা বলেন। নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে সিলেট মহানগর জামায়াত।

অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে এহসানুল মাহবুব আরও বলেন, ‘কেউ কেউ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বোঝেন না। সময় গেলে এটাও বুঝবেন। কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পদ্ধতির মতো পিআর পদ্ধতিও এ দেশে কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে।’

আরও পড়ুন‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই, উপদেষ্টা অনেকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ: গোলাম পরওয়ার২ ঘণ্টা আগে

এহসান মাহবুব বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। অথচ পিআর পদ্ধতি হলে বেশি ভোট কাস্ট হবে। মনোনয়ন–বাণিজ্য বন্ধ হবে। জনগণের ভোটের সঠিক মূল্যায়ন থাকবে। তাই আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। স্বৈরশাসকের সঙ্গে থাকা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কোর্ট পয়েন্ট থেকে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা মোড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য সিলেট জেলার আমির হাবিবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জেলার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি জামিল আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে গণমিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে সিলেট নগরের বন্দরবাজার থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা এলাকায় গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের সিলেট মহানগরী সভাপতি তাজুল ইসলাম হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদু হান্নান। মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরে মাওলার সঞ্চালনায় গণমিছিল ও সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগরের সহসভাপতি শাহ আশিকুর রহমান, সিলেট জেলার সহসভাপতি মুখলিসুর রহমান, মহানগরের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলয়াস, আবদুল হান্নান তাপাদার, মুহাম্মদ ফয়জুল হক, ইমদাদুল হক নোমানী, জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্যানেলের বাইরের প্রার্থীকে সমর্থন, ছাত্রদল নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
  • ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা
  • বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের সভাপতি খোরশেদ আলম
  • ‘৫ দফা দাবি মেনে নিন, অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে’