সেপ্টেম্বর মাস মানেই ওয়াশিংটনের জন্য বাজেট নিয়ে টানাপোড়েন। মার্কিন কংগ্রেসকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আর্থিক বছরের বাজেট নিয়ে একমত হতে হবে, নইলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সব সময় এমন ছিল না। একসময় কংগ্রেস এই মাসে হোয়াইট হাউসের বাজেট প্রস্তাব যাচাই, লবিস্টদের বক্তব্য শোনা এবং যেসব স্থানীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে বাজেট পাস সহজ হয়, সেসব সংযোজনের কাজ শেষ করত। ফলে বাজেট আইন সময়মতো পাস হতো। কিন্তু তিন দশক ধরে রাজনীতিতে অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলাই নিয়ম হয়ে গেছে। 

এটি একটি দ্বিদলীয় ব্যর্থতা। শেষবার কংগ্রেস ১২টি বরাদ্দ বিল সময়মতো পাস করেছিল ১৯৯৬ সালে। কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বা কোন দল দুটি কক্ষই নিয়ন্ত্রণ করেছে—এসব কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। এমনকি রিপাবলিকানরা অতীতে আজকের মতো উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করলেও বাজেট প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা, অদূরদর্শিতা ও অচলাবস্থা দেখা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ আকাশছোঁয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৬ সালে ৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার (জিডিপির ৬৪.

৯ শতাংশ) থেকে বেড়ে আজ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারে (জিডিপির ১২০ শতাংশের বেশি) উঠেছে। এ ঋণের বোঝা এখন দেশটির প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ১ লাখ ৯ হাজার ডলারের বেশি।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র এখন সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য হচ্ছে২৫ এপ্রিল ২০২৫

এর জন্য দুই দলই দায়ী। রিপাবলিকানরা বর্তমানে শুধু কংগ্রেসই নয়, বরং নির্বাহী বিভাগ তথা পুরো ফেডারেল আমলাতন্ত্রও নিয়ন্ত্রণ করছে। তবু সিনেটে ফিলিবাস্টার (ফিলিবাস্টার সিনেটে ব্যবহৃত এমন রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সিনেটররা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিল বা প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক চালিয়ে যান, যাতে ভোটে যাওয়া বিলম্বিত হয় বা পুরো প্রক্রিয়াই আটকে যায়) ভাঙতে তাদের অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সমর্থন লাগবে। নইলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সমঝোতায় না গিয়ে তাঁরা মনে করছেন, ডেমোক্র্যাটরা শেষ পর্যন্ত তাঁদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করবেন। 

মার্চ মাসেও এমনটাই ঘটেছিল: তখন সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার একটি অন্তর্বর্তী ব্যয় বিল সমর্থন করতে যথেষ্টসংখ্যক ডেমোক্র্যাটকে রাজি করিয়েছিলেন। এতে শুধু সরকার চালু রাখার নামে প্রতিরক্ষা ব্যয় ছাড়া অন্য খাতে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছিল। 

ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প আর রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে আসল কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা শুধু হইচই করেছেন, কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন আর কিছু নীরস প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অথচ তাঁদের হাতে কিছু হাতিয়ার (যদিও সীমিত) ছিল, যা ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করা যেত।

তবে এবার ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের প্রত্যাশাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে পারেন। সহকর্মী ও জনগণের কাছ থেকে কঠোর সমালোচনা শোনার পর শুমার ও প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিজ আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি বাদ দেওয়াকে তাঁরা ‘রেড লাইন’ ঘোষণা করেছেন। ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাজেট অচলাবস্থা নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে, যদিও ট্রাম্পের সে আহ্বান মানার সম্ভাবনা কম। 

তবু ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর বারবার দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটরা তাঁর এজেন্ডার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি বা চাননি। গত আট মাসে ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মসূচি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান—যেমন ইউএসএআইডি (যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ পর্যন্ত—তহবিল কাটছাঁট করেছে। এমনকি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত অর্থও বাতিল করেছে। তা ছাড়া কোনো বাস্তব মূল্যায়ন ছাড়াই ব্যাপক হারে সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। 

আরও পড়ুনসন্ধিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, গড়ে উঠছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প আর রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে আসল কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা শুধু হইচই করেছেন, কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন আর কিছু নীরস প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অথচ তাঁদের হাতে কিছু হাতিয়ার (যদিও সীমিত) ছিল, যা ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করা যেত। 

কিন্তু তাঁরা সেটা না করে এমন ভান করেছেন, যেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভালোভাবে আলোচনা করে সমাধান পাওয়া সম্ভব। বাস্তবে রিপাবলিকানরা অনেক দিন ধরেই একেবারে একপক্ষীয়ভাবে চলছেন, দ্বিদলীয় সহযোগিতাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। 

এই পুরো প্রক্রিয়ায় আমেরিকান জনগণের ভূমিকা খুবই সামান্য। কারণ, কংগ্রেসের আসনের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতাই জেরিম্যান্ডারিং (এটি নির্বাচনব্যবস্থার একধরনের কারসাজি। এতে কোনো দল বা গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করে, যাতে তারা সহজে জয়লাভ করতে পারে) এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে প্রতিযোগিতা কার্যত আর নেই। 

নির্বাচনী ঝুঁকি থেকে কার্যত মুক্ত হয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা জনগণের চেয়ে ধনী দাতাদের খুশি করতে বেশি আগ্রহী। এটি যেমন ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রেও সত্য। যে রাজনৈতিক শ্রেণি জনগণের বা তাদের প্রয়োজনের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না, তার কাছে আমেরিকানরা বন্দী হয়ে আছে।  

মার্কিন কংগ্রেস টানা ২৯তমবার বাজেট নিয়ে অচলাবস্থায় পড়েছে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর এলে সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু এর কারণ আসলে টাকাপয়সার অভাব নয় বা শুধু নীতিগত মতবিরোধও নয়। আসল সমস্যা হলো, আমেরিকার গণতন্ত্রে এখন দায়বদ্ধতা খুব কমে গেছে। 

রিড গ্যালেন দ্য লিংকন প্রজেক্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র জনগণ র র জন ত আম র ক কর ছ ন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় এনসিপির নিন্দা

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা ও তার কুশপুত্তলিকা দাহের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি।

বুধবার (১ অক্টোবর) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়েছি দলটি।

আরো পড়ুন:

দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি, জানালেন নাসীরুদ্দীন

নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ ২ দল

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ‘সর্বাত্মক প্রতিরোধ’ এর ব্যাখ্যা জানতে চাই আমরা। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে আওয়ামী গণহত্যাকারী লীগ কর্তৃক ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সম্মুখসারির নেতাদেরকে নানা সময় নিজ এলাকায় প্রবেশে বাধাপ্রদান, হুমকি-ধমকি ও হামলা করা হতো। আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি, যারা সেই একই কায়দার রাজনীতি আবার ফেরত আনার চেষ্টা করবে, তারা জনগণের গণপ্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গত রমজানেও চাঁদপুরে নিজ উপজেলায় ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির শিকার হন মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কারো রাজনৈতিক মতামতের প্রতিক্রিয়ায় তার নিজ এলাকাতে ‘সর্বাত্মক প্রতিরোধের’ ঘোষণা কোনো রাজনৈতিক আচরণ নয়; বরং হুমকিমূলক ও আগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। রাজনৈতিক মন্তব্যকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে; ত্রাস ও হুমকি দিয়ে নয়। ত্রাস ও হুমকি-ধমকি মূলত রাজনৈতিক পরাজয় প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে এনসিপি আরো বলেছে, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এমন উচ্ছৃঙ্খল ও আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন নেতাকর্মীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশে যারাই হামলা-মামলা ও ত্রাসের রাজনীতি করবে, তারাই জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবে।

ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই: রাশেদ খান
  • প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে তুলছে: ফারুক
  • ১৭ বছর এক অসুর জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল: নিপুন রায় 
  • নির্বাচিত সরকার না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি: আমীর খসরু
  • অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • চাঁদপুরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় এনসিপির নিন্দা
  • এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
  • পিআরের নামে জামায়াত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে: কায়সার কামাল