ভেঙে পড়ছে গণতন্ত্র, হুমকির মুখে মার্কিন অর্থনীতি
Published: 27th, September 2025 GMT
সেপ্টেম্বর মাস মানেই ওয়াশিংটনের জন্য বাজেট নিয়ে টানাপোড়েন। মার্কিন কংগ্রেসকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আর্থিক বছরের বাজেট নিয়ে একমত হতে হবে, নইলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সব সময় এমন ছিল না। একসময় কংগ্রেস এই মাসে হোয়াইট হাউসের বাজেট প্রস্তাব যাচাই, লবিস্টদের বক্তব্য শোনা এবং যেসব স্থানীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে বাজেট পাস সহজ হয়, সেসব সংযোজনের কাজ শেষ করত। ফলে বাজেট আইন সময়মতো পাস হতো। কিন্তু তিন দশক ধরে রাজনীতিতে অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলাই নিয়ম হয়ে গেছে।
এটি একটি দ্বিদলীয় ব্যর্থতা। শেষবার কংগ্রেস ১২টি বরাদ্দ বিল সময়মতো পাস করেছিল ১৯৯৬ সালে। কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বা কোন দল দুটি কক্ষই নিয়ন্ত্রণ করেছে—এসব কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। এমনকি রিপাবলিকানরা অতীতে আজকের মতো উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করলেও বাজেট প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা, অদূরদর্শিতা ও অচলাবস্থা দেখা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ আকাশছোঁয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৬ সালে ৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার (জিডিপির ৬৪.
এর জন্য দুই দলই দায়ী। রিপাবলিকানরা বর্তমানে শুধু কংগ্রেসই নয়, বরং নির্বাহী বিভাগ তথা পুরো ফেডারেল আমলাতন্ত্রও নিয়ন্ত্রণ করছে। তবু সিনেটে ফিলিবাস্টার (ফিলিবাস্টার সিনেটে ব্যবহৃত এমন রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সিনেটররা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিল বা প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক চালিয়ে যান, যাতে ভোটে যাওয়া বিলম্বিত হয় বা পুরো প্রক্রিয়াই আটকে যায়) ভাঙতে তাদের অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সমর্থন লাগবে। নইলে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সমঝোতায় না গিয়ে তাঁরা মনে করছেন, ডেমোক্র্যাটরা শেষ পর্যন্ত তাঁদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করবেন।
মার্চ মাসেও এমনটাই ঘটেছিল: তখন সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার একটি অন্তর্বর্তী ব্যয় বিল সমর্থন করতে যথেষ্টসংখ্যক ডেমোক্র্যাটকে রাজি করিয়েছিলেন। এতে শুধু সরকার চালু রাখার নামে প্রতিরক্ষা ব্যয় ছাড়া অন্য খাতে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছিল।
ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প আর রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে আসল কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা শুধু হইচই করেছেন, কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন আর কিছু নীরস প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অথচ তাঁদের হাতে কিছু হাতিয়ার (যদিও সীমিত) ছিল, যা ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করা যেত।তবে এবার ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের প্রত্যাশাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে পারেন। সহকর্মী ও জনগণের কাছ থেকে কঠোর সমালোচনা শোনার পর শুমার ও প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিজ আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি বাদ দেওয়াকে তাঁরা ‘রেড লাইন’ ঘোষণা করেছেন। ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাজেট অচলাবস্থা নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে, যদিও ট্রাম্পের সে আহ্বান মানার সম্ভাবনা কম।
তবু ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর বারবার দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটরা তাঁর এজেন্ডার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি বা চাননি। গত আট মাসে ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মসূচি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান—যেমন ইউএসএআইডি (যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ পর্যন্ত—তহবিল কাটছাঁট করেছে। এমনকি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত অর্থও বাতিল করেছে। তা ছাড়া কোনো বাস্তব মূল্যায়ন ছাড়াই ব্যাপক হারে সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই করেছে।
আরও পড়ুনসন্ধিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, গড়ে উঠছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প আর রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে আসল কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা শুধু হইচই করেছেন, কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন আর কিছু নীরস প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অথচ তাঁদের হাতে কিছু হাতিয়ার (যদিও সীমিত) ছিল, যা ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করা যেত।
কিন্তু তাঁরা সেটা না করে এমন ভান করেছেন, যেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভালোভাবে আলোচনা করে সমাধান পাওয়া সম্ভব। বাস্তবে রিপাবলিকানরা অনেক দিন ধরেই একেবারে একপক্ষীয়ভাবে চলছেন, দ্বিদলীয় সহযোগিতাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় আমেরিকান জনগণের ভূমিকা খুবই সামান্য। কারণ, কংগ্রেসের আসনের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতাই জেরিম্যান্ডারিং (এটি নির্বাচনব্যবস্থার একধরনের কারসাজি। এতে কোনো দল বা গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করে, যাতে তারা সহজে জয়লাভ করতে পারে) এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে প্রতিযোগিতা কার্যত আর নেই।
নির্বাচনী ঝুঁকি থেকে কার্যত মুক্ত হয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা জনগণের চেয়ে ধনী দাতাদের খুশি করতে বেশি আগ্রহী। এটি যেমন ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রেও সত্য। যে রাজনৈতিক শ্রেণি জনগণের বা তাদের প্রয়োজনের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না, তার কাছে আমেরিকানরা বন্দী হয়ে আছে।
মার্কিন কংগ্রেস টানা ২৯তমবার বাজেট নিয়ে অচলাবস্থায় পড়েছে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর এলে সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু এর কারণ আসলে টাকাপয়সার অভাব নয় বা শুধু নীতিগত মতবিরোধও নয়। আসল সমস্যা হলো, আমেরিকার গণতন্ত্রে এখন দায়বদ্ধতা খুব কমে গেছে।
● রিড গ্যালেন দ্য লিংকন প্রজেক্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র জনগণ র র জন ত আম র ক কর ছ ন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করলে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশকে বা জনগণকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ কিংবা গাড়িতে আগুন দিলে হামলাকারীকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে বেতার বার্তায় মাঠ পর্যায়ে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের এমন নির্দেশনা দেন তিনি। ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আরো পড়ুন:
অতিরিক্ত আইজি-ডিআইজিসহ পুলিশের ৩১ কর্মকর্তাকে বদলি
ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরা হলো না শিক্ষকের
নাশকতাকারীদের লক্ষ্য করে গুলির নির্দেশ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, “হ্যাঁ, বলেছি। বলেছি, বাসে আগুন দিলে, পুলিশ ও জনগণের গায়ে আগুন দিয়ে গুলি করে দিতে বলেছি।”
এটা কি আইনে কাভার করে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একশ’তে একশ’ কাভার করে। চাইলে আপনিও পারেন এটা!”
পুলিশ কিংবা নাগরিক নাশকতাকারীর বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৪ ধারাতে যা বলা আছে, সে অনুযায়ী, আপনিও পারেন এটা। তাতে বলা আছে যে, যেকোনো লোকের সম্পদ বা জানের হেফাজতের জন্য সে গুলি করতে পারে, তার যদি গান থাকে।”
তিনি বলেন, “সে আইন অনুযায়ী এই বার্তাটা আমি স্মরণ করায় দিলাম আমার কলিগদের যে, যে কোনো বাসে আগুন দিবে, তোমার গায়ে ককটেল মারবে, জনগণের গায়ে ককটেল মারবে, তুমি গুলি করে দিবা।”
উল্লেখ্য, দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনোকিছুই অপরাধ নহে।’
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর দিশেহারা নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে বেতার বার্তার মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেন সিএমপি কমিশনার।
এর পরদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিএমপি কমিশনারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানায় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি বলেছে, দেশের সংবিধান যেকোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঢাকা/এমআর/রফিক