চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনী আমেজ এবার কাগজের পোস্টার বা ‘ঝুপড়ি’তে দেওয়া বক্তৃতায় আটকে নেই; সেটি ঢুকে পড়েছে শিক্ষার্থীদের হাতের মোবাইল স্ক্রিনে। ফেসবুকে চলছে জোর প্রচারণা।

ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ ভেসে উঠছে প্রার্থীর ভিডিও বার্তা, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই, আপনাদের গবেষণার কথা বলব, প্রশ্ন তুলব, দায়িত্ব নেব। আপনাদের ভোট প্রত্যাশা করি।’ ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে কেউ সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ আবার পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। আবার কোনো প্রার্থীর পোস্টার ও স্লোগান ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইনে।

দ্রোহ পর্ষদ’, ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘চাকসু ফর স্টুডেন্টস রাইটস’—প্রতিটি নামের সঙ্গে পেজ, প্রতিটি পেজে হাজারো অনুসারী।

আগামী ১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন। ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হলেও পরদিন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছুটিতে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা নেমে যান বাড়ির পথে। কিন্তু প্রার্থীরা থেমে থাকেননি। ফাঁকা ক্যাম্পাসের বদলে বেছে নিয়েছেন ফেসবুকের বিশাল ভার্চ্যুয়াল আঙিনা।

৬২ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’। এটি এখন যেন অনলাইন নির্বাচনী মাঠ। ভোট চেয়ে এখানে কেউ ভিডিও দিচ্ছেন। কারও পোস্টার নজর কাড়ছে। গতকাল শনিবার দুপুরে গ্রুপটিতে ঢুকে দেখা গেল, আলোচনার কেন্দ্রে মো.

তালিফ মিয়ার ভিডিও। গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের এই শিক্ষার্থী ভিডিও বার্তায় বললেন, ‘আমি ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে চাই না। গবেষণার প্রতিটি প্রশ্ন আমি আপনাদের হয়ে তুলব। উপকূলরেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছি। দিনের পর দিন ল্যাবে থেকেছি।’

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন আয়োজনে বাজেট কত, খরচ যেসব খাতে১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একই গ্রুপে চোখে পড়ল তানিয়া রহমানের পোস্টারও। তিনি ছাত্রীদের হল ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ থেকে স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পোস্টারের সঙ্গে ছোট একটা লেখাও দিয়েছেন তানিয়া।’

অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনিও অনলাইনে বেশ সক্রিয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের ভিডিও দিচ্ছেন নিয়মিত। দোয়া ও সমর্থন চাইছেন।

সেকালের ‘লিফলেট’, একালের ‘লাইভ’

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে প্রচারণার মাধ্যম ছিল হাতে ছাপানো লিফলেট আর দেয়ালে সেঁটে দেওয়া পোস্টার। প্রার্থীরা হলে হলে, শাটল ট্রেনে, ঝুপড়িতে গিয়ে ভোট চাইতেন। ইন্টারনেট তখনো বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।

সর্বশেষ চাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ছিলেন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মাহবুবের রহমান (এখন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক)। তিনি পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৯১ ভোট। স্মৃতি ঘেঁটে মাহবুবের রহমান বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে যেতে। এখনকার মতো অনলাইন থাকলে হয়তো আরও অনেক বেশি ভোট পাওয়া যেত।’

এবারের চিত্র ভিন্ন। ফেসবুকে একের পর এক পেজ খুলে প্রচারণা চালাচ্ছে প্যানেলগুলো। কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভও দিচ্ছেন। ‘দ্রোহ পর্ষদ’, ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘চাকসু ফর স্টুডেন্টস রাইটস’—প্রতিটি নামের সঙ্গে পেজ, প্রতিটি পেজে হাজারো অনুসারী।

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর ফেসবুক পেজের অনুসারী ইতিমধ্যে ছাড়িয়েছে ২৪ হাজার। পেজে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেল, প্রার্থীরা হলে ঘুরছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, দোয়া চাইছেন। প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন বললেন, ‘প্রথম দিন প্রচারণা করেছি অনুষদ, শাটল ট্রেন, ঝুপড়িতে। তবে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি। এখানে একসঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যায়।’

অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনিও অনলাইনে বেশ সক্রিয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের ভিডিও দিচ্ছেন নিয়মিত। দোয়া ও সমর্থন চাইছেন।

অভিনব প্রচারণা

বাম সংগঠনের প্যানেল দ্রোহ পর্ষদ প্রচারে এনেছে অভিনবত্ব। তাদের পেজে পোস্ট করা ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে প্রার্থীরা টিভি নিউজ উপস্থাপকের মতো খবর পড়ছেন। শিরোনাম, ‘চাকসু সংবাদ’। দুই প্রার্থী উপস্থাপকের ভঙ্গিমায় সব প্রার্থীর পরিচয় দিচ্ছেন। পুরোটাই নিউজের আদলে। এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বললেন, ‘প্রচারের সবচেয়ে বড় মঞ্চ এখন ফেসবুক। তাই ভিডিও ও পোস্টার দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের মন্তব্য থেকেই বুঝতে পারছি তাঁদের চাওয়া-পাওয়া।’

অনলাইন প্রচারের ‘আলো-আঁধারি’

ভোটাররা এই ডিজিটাল প্রচারণায় মজা পাচ্ছেন, তবে অস্বস্তিও রয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন জাহান বললেন, ‘ফেসবুকে প্রতিদিন নতুন পোস্ট দেখি, অনেক প্রার্থীর স্লোগান ও পোস্টার ভালো লাগছে। কিন্তু কিছু নারী প্রার্থী অরুচিকর মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন। এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি।’

গতকালও ফেসবুকে এক নারী প্রার্থী আপত্তিকর মন্তব্যের সম্মুখীন হয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আরেক ছাত্রী অভিযোগ দিয়েছিলেন। ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি একটি পদে নির্বাচন করছেন। ফেসবুকে তাঁর পোস্টগুলোতে নানা রকম আপত্তিকর মন্তব্য করছেন অনেকেই। সেগুলোর প্রমাণসহ তিনি অভিযোগ করেছেন।

অবশ্য এসব ঘটনা তদারকে তদারকি সেল গঠন করেছে চাকসু নির্বাচন কমিশন। সেলের আহ্বায়ক ও নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ এলেই দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। তদারক করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ছ ত রদল ফ সব ক করছ ন সমর থ বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

এটাই ‘শক্তিশালী’ স্কোয়াড, সুযোগ দেখছেন জামাল

২০১৩ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯২ ম্যাচ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৬ ম্যাচ। কিন্তু এই ৬ ম্যাচের কোনোটিতেই জেতেনি বাংলাদেশ। এবার অন্তত সেই গেরো খুলতে চাইছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

জামালের চোখে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই এবার ভারতকে হারানোর সুযোগও দেখছেন তিনি, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে।’

২০২৫ সালে সাত ম্যাচ খেলে শুধু ভুটানের সঙ্গে জিতেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে বছরটা অন্তত জয় দিয়ে শেষ করার প্রত্যাশা জামালের, ‘এটা অনেক আবেগের ম্যাচ, উত্তেজনার ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জন্য অনেক লম্বা বিরতি আছে। বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে।’

জয় দিয়ে বছর শেষ করতে চান জামাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ