উত্তাল নদীতে চলছে স্টিলবডি ট্রলার, ঝুঁকিতে যাত্রীরা
Published: 29th, September 2025 GMT
চাঁদপুরের পুরান বাজার থেকে শরিয়তপুরের চরাঞ্চলে যেতে পার হতে হয় উত্তাল পদ্মা ও মেঘনা নদী। যাতায়াত করতে হয় স্টিলবডি ট্রলারে করে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকায় এসব ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও দিনের পর দিন চলছে এসব ট্রলার। এছাড়া, অবৈধভাবে স্থাপন করা ঘাট থেকে টোল হিসেবে যেসব অর্থ আদায় করা হয়, তা থেকে রাজস্ব পায় না সরকার।
এসব বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সম্প্রতি সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন চাঁদপুরে নদীতে চলছে লক্কর ঝক্কর স্টিলবডি ট্রলার। অনুমোদনহীন এসব ট্রলারের মালিক ও চালকরা অবৈধভাবে ঘাট তৈরি করে যাত্রী পারাপার করছেন।
এমনই একটি ঘাট আছে চাঁদপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান বাজারের মদিনা মসজিদ এলাকায়। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ট্রলার শরীয়তপুরসহ আশপাশের চরাঞ্চলে নিয়মিত যাত্রী পারাপার করে।
ট্রলারচালকরা বলছেন, প্রতিবার ঘাট ব্যবহারের জন্য একটি মহলকে দিতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে, এর বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা।
ট্রলারচালক বসু গাজী জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের মাস্টার ঘাটে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। মোটরসাইকেল কিংবা অন্য ছোট যানবাহন সঙ্গে থাকলে তার পরিবহন খরচও নেওয়া হয়। ঘাট ব্যবহারে ট্রলারকে দিতে হয় ৮০ টাকা। তবে, এর বিপরীতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না।
আরেক চালক নাদিম জানান, ট্রলার ঘাটে ভিড়লেই টাকা দিতে হয়। বস্তাভর্তি মালামাল ওঠালে তার জন্যও ১৫-২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। মদিনা মসজিদ ঘাট থেকে চরাঞ্চলের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ট্রলারের যাত্রীদের জন্য কিছু লাইফ জ্যাকেট রাখলেও তারা সেগুলো ব্যবহার করতে না চাওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি থাকে। বৃষ্টির সময় চলন্ত ট্রলারে যাত্রীদের জন্য ত্রিপল টাঙানো হয়।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের মধ্যে সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই স্টিলবডি ট্রলারে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ৩০-৪০ জন নিলেই একটি ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অথচ, অনেক সময় ৮০ থেকে ১০০ জনও নেওয়া হয় একটি ট্রলারে।
সুমাইয়া নামের এক নারী যাত্রী জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের মানুষ মূলত কেনাকাটার জন্য চাঁদপুরে আসা-যাওয়া করেন। যোগাযোগের জন্য এখানে সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। এখানে দৃশ্যমান ঘাট না থাকা, অবৈধ ঘাটে যাত্রী ছাউনি ও টয়লেট না থাকা, ট্রলারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়াসহ নানা অনিয়ম যেন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ছে না। ট্রলারগুলোতে লাইফ জ্যাকেট অপর্যাপ্ত। যেগুলো আছে, সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় কেউই এগুলো গায়ে পরতে চায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
মদিনা মসজিদ ঘাটে ট্রলার প্রতি ৭০-৮০ টাকা টোল নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্বশীল কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
পুরান বাজার মদিনা মসজিদ ঘাটের দোকানদার মো.
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বছির আলী খান বলেছেন, এই মদিনা মসজিদ এলাকার দেওয়ান ঘাট ইজারাবিহীন এবং এখানকার যাতয়াতকারী স্টিলবডি ট্রলার সবই অবৈধ। বছর বছর এ ঘাট থেকে যে ১৩-১৪ লাখ টাকা টোলের নামে নেওয়া হচ্ছে, তা থেকে কোনো রাজস্বই আমাদের বিআইডব্লিউটিএর দপ্তার উত্তোলন করেনি। দ্রুত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ৮০ ট ক র জন য মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
প্রমোদতরী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে শনিবার (১৫ নভেম্বর) চালু হয়েছে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাজধানীর সদরঘাটে শতবর্ষী এ প্যাডেল স্টিমার যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আরো পড়ুন:
‘নৌপথ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে নৌপরিবহন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়’
শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ
আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্য তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পিএস মাহসুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নৌ-পর্যটনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করবে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত পর্যটন সেবা শুরু করবে জাহাজটি।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিআইডব্লিউটিসির শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’কে সংস্কার ও পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।”
সাখাওয়াত বলেন, “পিএস মাহসুদ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি বাংলাদেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম দেখুক, একসময় নদীই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।”
তিনি জানান, নদী ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নৌ-পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়াতে পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরনো স্টিমার মেরামতের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণে মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে, ইঞ্জিন, নিরাপত্তা ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আধুনিক করা হয়েছে।
এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক ও ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং প্রতি শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা যাবে। সকাল ৮টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাতে বরিশালে পৌঁছাবে।
আগে স্টিমারটি শুধু রাতেই চলত। এবার দিনের ভ্রমণ চালু হওয়ায় পর্যটকরা নদী ও নদীর তীরের সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি