আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী রূপ নেওয়ার পর অবশেষে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা তাঁর সরকার ভেঙে দিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ গতকাল পর্যন্ত চলেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, গত কয়েক দিনে বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১০০ জনের বেশি। বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশই তরুণ। মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভোয় জীবনযাপনের মান ক্রমেই অবনতির দিকে থাকায় সরকারবিরোধী ওই বিক্ষোভ শুরু হয়।

বিবিসির খবরে একে বলা হচ্ছে, ‘জেন–জেড’ প্রজন্মের তরুণদের বিক্ষোভ। গত বৃহস্পতিবার থেকে মাদাগাস্কারের বিভিন্ন শহরে হাজারো তরুণ–তরুণী রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের স্লোগান—‘আমরা বাঁচতে চাই, শুধু টিকে থাকতে নয়’।

২০২৩ সালে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন রাজোয়েলিনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজোয়েলিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এই বিক্ষোভ তাঁর সামনে আসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া পরিস্থিতিকে গত কয়েক বছরে দ্বীপদেশটির দেখা সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভের আয়োজকেরা বলেছেন, তাঁরা কেনিয়া, নেপাল ও মরক্কোর তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। আন্তানানারিভোর বিক্ষোভকারীরা এমন একটি পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন, যা চলতি মাসের শুরুতে নেপালে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। নেপালে ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

স্থানীয় টিভি চ্যানেল ২৪২৪ ডটএমজিতে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, গতকাল আন্তানানারিভোর প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের ভিড় জমেছিল। তাঁরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রের দিকে মিছিল করার চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহ থেকে কারফিউ জারি রেখেছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কারফিউ কার্যকর থাকছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী রাবার বুলেটও ব্যবহার করেছে।

মাদাগাস্কারের রাজধানী শহরে ১৪ লাখ মানুষের বসবাস। সেখানে সুপারমার্কেট, ইলেকট্রনিকসের দোকান ও ব্যাংকে লুটপাট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত কয়েক দিনে রাজনীতিবিদদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুনমাদাগাস্কারে খিদের জ্বালায় মানুষ পোকা খাচ্ছে: বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি২৯ নভেম্বর ২০২০

গতকাল রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম টেলিভিজিওনা মালাগাসিতে (টিভিএম) দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা জনরোষের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরকারের ব্যর্থতার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। রাজোয়েলিনা বলেন, ‘সরকারের কেউ যদি তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে থাকেন, তাহলে আমরা তা স্বীকার করে নিচ্ছি এবং ক্ষমা চাইছি।’

দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট থেকে তৈরি হওয়া হতাশাই এই বিক্ষোভের মূল কারণ। আফ্রিকার দক্ষিণ–পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দ্বীপদেশ মাদাগাস্কার এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটির তিন কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল।

প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় ক্ষতির মুখে পড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম গড়ে তোলার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
রাজোয়েলিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যাকে কেন্দ্র করে জনগণের রাগ–ক্ষোভ, কষ্ট আর দুর্ভোগের কথা আমি বুঝতে পারছি। আমি তাঁদের আহ্বান শুনেছি, ভোগান্তি অনুভব করেছি এবং দৈনন্দিন জীবনের ওপর এর প্রভাবটা বুঝতে পেরেছি।’

দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট থেকে তৈরি হওয়া হতাশাই এই বিক্ষোভের মূল কারণ। আফ্রিকার দক্ষিণ–পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দ্বীপদেশ মাদাগাস্কার এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটির তিন কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল।

জীবনযাত্রার মান ভালো করতে না পারায় অনেক বিক্ষোভকারী রাজোয়েলিনার সরকারকে দায়ী করছেন। বিশেষ করে বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, গত কয়েক দিনে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী ও সাধারণ মানুষেরা আছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ মারা গেছেন লুটপাট ও সহিংসতার সময়, যা বিক্ষোভের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দেওয়া নিহতের ওই সংখ্যা সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়নি; বরং তা ‘গুজব বা ভুল তথ্য’–এর ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে।

বিক্ষোভের আয়োজকেরা বলেছেন, তাঁরা কেনিয়া, নেপাল ও মরক্কোর তরুণ নেতৃত্বের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আন্তানানারিভোর বিক্ষোভকারীরা এমন একটি পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন, যা চলতি মাসের শুরুতে নেপালে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। নেপালে ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর ওই ব ক ষ ভ দ শট র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ