​দেশে সেপ্টেম্বরে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন।

মানবাধিকার সংগঠন ​মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রকাশিত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজেদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ এই মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ‌আজ মঙ্গলবার এমএসএফ এ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে।

প্রতিবেদনে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এ বিষয়ে নাগরিকদের জীবনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে।

এমএসএফের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মব সন্ত্রাসের বিপরীতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা চরমে পৌঁছেছে। কিছু ক্ষেত্রে মব সন্ত্রাসে সরকারের উসকানিও আছে বলে মনে হয়েছে।

প্রতিবেদনটি দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা সামান্য বেড়ে আগস্টের ২৩ জন থেকে সেপ্টেম্বরে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার’ এই লাগামহীন প্রবণতা সমাজে বিচারহীনতা ও মানবিক মূল্যবোধের পতনের গভীর সংকটকে স্পষ্ট করে তুলেছে বলে মনে করে এমএসএফ।

​প্রতিবেদনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে চুরির সন্দেহে স্থানীয় লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে চার দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পর হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, সহিংসতা শুরু হয় গণপিটুনি দিয়ে, আর এর জের চলে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে গিয়েও। গণপিটুনির এই সংস্কৃতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার মৌলিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

​নারীর প্রতি সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন

​প্রতিবেদনে নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ব্যাপকতাও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আগস্টে ৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বরে ৫৩টি হয়েছে। এর মধ্যে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ১৩টি এবং ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাও বেড়েছে। চলতি মাসে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে ২৯টি, যা আগস্টে ছিল শূন্য।

পাশাপাশি মাজার বা আখড়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের ১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভরত তিনজন জাতিগত সংখ্যালঘু যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির দুরবস্থা নির্দেশ করে।

​এমএসএফ মনে করে, গণপিটুনির মতো জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রুখতে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর হত র স খ য ম নব ধ ক র পর স থ ত গণপ ট ন ক র পর র ওপর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণ ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে সেপ্টেম্বরে: এমএসএফ

​দেশে সেপ্টেম্বরে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন।

মানবাধিকার সংগঠন ​মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রকাশিত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজেদের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ এই মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ‌আজ মঙ্গলবার এমএসএফ এ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে।

প্রতিবেদনে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এ বিষয়ে নাগরিকদের জীবনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে।

এমএসএফের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মব সন্ত্রাসের বিপরীতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা চরমে পৌঁছেছে। কিছু ক্ষেত্রে মব সন্ত্রাসে সরকারের উসকানিও আছে বলে মনে হয়েছে।

প্রতিবেদনটি দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা সামান্য বেড়ে আগস্টের ২৩ জন থেকে সেপ্টেম্বরে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার’ এই লাগামহীন প্রবণতা সমাজে বিচারহীনতা ও মানবিক মূল্যবোধের পতনের গভীর সংকটকে স্পষ্ট করে তুলেছে বলে মনে করে এমএসএফ।

​প্রতিবেদনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে চুরির সন্দেহে স্থানীয় লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে চার দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পর হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, সহিংসতা শুরু হয় গণপিটুনি দিয়ে, আর এর জের চলে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে গিয়েও। গণপিটুনির এই সংস্কৃতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার মৌলিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

​নারীর প্রতি সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন

​প্রতিবেদনে নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ব্যাপকতাও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আগস্টে ৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বরে ৫৩টি হয়েছে। এর মধ্যে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ১৩টি এবং ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাও বেড়েছে। চলতি মাসে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে ২৯টি, যা আগস্টে ছিল শূন্য।

পাশাপাশি মাজার বা আখড়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের ১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভরত তিনজন জাতিগত সংখ্যালঘু যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির দুরবস্থা নির্দেশ করে।

​এমএসএফ মনে করে, গণপিটুনির মতো জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রুখতে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ