ওয়ালটন বাংলাদেশের গর্বের প্রতিষ্ঠান, বললেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
Published: 30th, September 2025 GMT
“ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টসে ৫০ হাজারেরও বেশি ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। ওয়ালটন যে কত বড় কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে, এখানে না এলে তা জানতে পারতাম না। তাদের এত বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে আমরা অত্যন্ত অভিভূত। ওয়ালটন এখন বাংলাদেশের এক গর্বের প্রতিষ্ঠান।”
গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গাজীপুরের চন্দ্রায় দেশের সর্ববৃহৎ ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স পরিদর্শন শেষে এমন মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
আরো পড়ুন:
ওয়ালটন লিফটসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন প্ল্যান্টস পরিদর্শন করলেন ডেভেলপাররা
বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে আবারো বর্ষসেরা ওয়ালটন
এদিন তারা ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন পণ্যের প্রোডাকশন প্ল্যান্টস ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনকালে তারা ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও রপ্তানি কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
এর আগে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে পৌঁছালে তাদেরকে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।
হেডকোয়ার্টার্স প্রাঙ্গণে অতিথিরা প্রথমে ওয়ালটনের বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর নির্মিত ভিডিও ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন। এরপর তারা ওয়ালটনের সুসজ্জিত প্রোডাক্টস ডিসপ্লে সেন্টারসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফ্রিজ, ভিআরএফ এসি, মোল্ড অ্যান্ড ডাই ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টসসহ সারফেস মাউন্টিং টেকনোলজি বা এসএমটি প্রজেক্ট ঘুরে দেখেন।
এরপর তারা ওয়ালটনের তৈরি বিভিন্ন পণ্যে সুসজ্জিত ডিসপ্লে সেন্টার প্রত্যক্ষ করেন। পরে অতিথিরা দিনব্যাপী ওয়ালটনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফ্রিজ, ভিআরএফ এয়ার কন্ডিশনার, সারফেস মাউন্টিং টেকনোলজি বা এসএমটি প্রজেক্ট ও মোল্ড এবং ডাই পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “সরকারের একার পক্ষে দেশের শিল্প, আর্থ-সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানে সরকারও প্রস্তুত। এভাবে সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দ্রুত উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে সক্ষম হব।”
ওয়ালটনের তৈরি মাদারবোর্ড দেখছেন প্রধান উপদেষ্টার দুই বিশেষ সহকারী।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, “এই প্রথম ওয়ালটনে এলাম। ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে এসে আমাদের দেশীয় ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা ও অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ পেলাম। দেশের উন্নয়নে ওয়ালটন অভাবনীয় কাজ করে চলছে। ওয়ালটনের প্রোডাকশন প্ল্যান্টগুলো ঘুরে দেখার পর ওয়ালটন সম্পর্কে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গেল। বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে ওয়ালটন যে অতি দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।”
হেডকোয়ার্টার্স পরিদর্শনকালে অতিথিদের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) ইউসুফ আলী, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের এএমডি লিয়াকত আলী, হেডকোয়ার্টার্সের হেড অব অ্যাডমিন মেজর (অব.) জাহিদুল হাসান প্রমুখ।
ঢাকা/মাহফুজ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল য ন টস ইন ড স ট র আম দ র সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’