বিশেষ বিবেচনায় চবির হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমালোচনা
Published: 30th, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন ছাত্রদল-শিবির ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, বিশেষ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থাকা এসব ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাগছাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কারো কারো নেই হলে ওঠার ন্যূনতম অ্যাকাডেমিক ফলাফল। ফলে ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আসন না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরো পড়ুন:
জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসন-পরিবহনে ভোগান্তি চরমে, বাড়ছে শুধু বিভাগ
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি হলেই বিশেষ বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীকে আসন দেওয়ার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে তার অ্যাকাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি বাড়ির দুরত্ব ও আর্থিক অক্ষমতার দিকটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
বিশেষ বিবেচনায় থাকা শাখা ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি ও হল সংসদ নির্বাচনে হলটির সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবরার ফারাবি বলেন, “আমি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হলে এক সিনিয়র ভাইয়ের সিটে উঠি। তিনি হলে থাকতেন না, তাই তার সিটে থেকেছি। পরবর্তীতে, গত মাসে সর্বশেষ অ্যালটমেন্টে ছাত্রত্ব না থাকায় ওই ভাইয়ের সিট বাতিল হয়। এ হিসেবে আমারও সিটে থাকা অবৈধ হয়ে পড়ে। পরে আমি হলের প্রাধ্যক্ষ স্যারকে আমার আর্থিক অক্ষমতা এবং হলে আমার বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির কথা জানালে তিনি আমাকে বিশেষ বিবেচনায় থাকার সুযোগ দেন।”
তিনি বলেন, “আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। মূলত এ সময়টা হলে থাকার জন্য আবেদন করেছিলাম। হল প্রাধ্যক্ষ আমাকে অনুমতিও দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, বরং একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমি তো অবৈধভাবে হলে থাকছি না।”
একই হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও চাকসুতে স্বতন্ত্র থেকে ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, “প্রতিটা হলে আসন বরাদ্দের সময় প্রাধ্যক্ষের হাতে ১০টি আসন থাকে। আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে যখন হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন প্রশাসন নিয়ম করেছিল, আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিল, আহত হয়েছে এবং আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিবেচনার কয়েকটা আসন বরাদ্দ থাকবে। আসন বরাদ্দের সময় আন্দোলনে আহত আমার বিভাগের ছোট ভাই মশিউর না থাকায় আমি আমার নামে আসন নিয়েছিলাম। এখন সিটে সে থাকে, আমি শহরে থাকি। তবে কিছুদিন ধরে আমি ওই সিটে থাকছি।”
চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক মো.
সোহরাওয়ার্দী হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা হল সংসদে ভিপি প্রার্থী জমাদিউল আওয়াল সুজাত বলেন, “আমি একটি আসনে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ডাবলিং করছি।”
তবে জানা গেছে, ওই সিটে বিশেষ বিবেচনায় শুধু তিনিই থাকেন। অন্যজন অভ্যুত্থানের পর প্রথম অ্যালটমেন্ট পেয়েছিলেন। তবে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা এবং দুষ্কৃতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে হল থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ওই আসনে বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন সুজাত। আগে তিনি ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের রাজনীতি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, “প্রাধ্যক্ষর ১০টি আসন বরাদ্দের ক্ষমতা আছে। ফারাবী নিয়মিত ডাইনিং ও ক্রীড়া কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। এছাড়া তার আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয়টি জানিয়েছে। এজন্য তাকে আসন দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নয়।”
বাগছাস নেতা মাহফুজ রহমানের আসনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আসলে আন্দোলনে তাদের যে অবদান ছিল, যার কারণে দেশে একটা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসছে। আর প্রশাসন থেকেও বলা ছিল, আন্দোলনে সক্রিয়দের বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে। তখন হয়তো মাহফুজকে আসনটা দেওয়া হয়েছে।”
অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রাধ্যক্ষ এজিএম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, “কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটি থেকেই আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় প্রশাসনের সাপেক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিবেচনা আসন দেওয়া হয়। আমার হলেও এ রকম কয়েকজনকে আসন দেওয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে সংখ্যাটা বলতে পারছি না।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত আর থ ক আসন ব ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।