ভিসা জটিলতায় ৩ বছর ধরে আটকে আছেন কঙ্গো নাগরিক, জিম্মির অভিযোগ
Published: 1st, October 2025 GMT
ভিসা জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না বগুড়ায় আটকে পড়া কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে। ভিটো বর্তমানে বসবাস করছেন বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
ভিটো দাবি করছেন, তাকে আটকে রাখা হয়েছে একটি বাড়ির মধ্যে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভিটো প্রায় প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন, যাচ্ছেন যেখানে খুশি সেখানে।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, ভিটো এখন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশে। ভিসা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, ভিসা জটিলতার মধ্যে পড়েছেন ভিটো।
জানা গেছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান পলাশ ‘মায়ের দোয়া’ নামের একটি পাখি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। আর ভিটো বলি নিজ দেশ কঙ্গো থেকে পেশায় পাখি রপ্তানিকারক। পাখি আমদানি করতে গিয়ে ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গের সঙ্গে পলাশের পরিচয় হয়।
ভিটো কঙ্গোর এভিগামার কিউ-ইলোসুড কালামু কিনসাশা গ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর পাখির ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে বাংলাদেশের বগুড়ায় পলাশের বাড়িতে আসেন ভিটো। তার ভিসার মেয়াদ ছিল ১ মাস। এরপর থেকেই তিনি বগুড়ায় রয়েছেন।
পাখি আমদানিকারক পলাশের দাবি, সাধারণত বিদেশ থেকে পাখি নিয়ে আনার ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের আমরা ইনভাইট করি। এর আগেও অনেক বিদেশি রপ্তানিকারক তার এখানে এসেছেন। পাখি বুঝিয়ে দিয়ে রপ্তানিকারকরা চলে যান।
তিনি জানান, ভিটো যখন আসেন, তখন পাখি আমদানি-রপ্তানিতে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এ কারণে নিজের ভিসার মেয়াদের মধ্যে ভিটো পাখি নিয়ে আসতে পারেননি। সেক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদের জন্য আবেদন করে সবাই মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। সেটাও খুব সাধারণত বিষয় বলে আমরা জানি। এ জন্য এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
পলাশ বলেন, “পরে কয়েক দফা ভিসার জন্য আবেদনের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ থেকে কঙ্গোতে সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করা যায় না। ভারতের মাধ্যমে করতে হয়। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্টের পর অনেক কিছু বদলে যায়। এখন তার ভিসা পেতে অনেক টাকা লাগবে, যা ভিটোর কাছে নেই।”
এ আবেদনের বিষয়টি ভিটো বলিও স্বীকার করেন। তিনি জানান, পলাশের মাধ্যমে দুইবার আবেদনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখন দেশে যেতে পারছেন না। তিনি দ্রুত তার দেশে ফেরত যেতে চান।
বগুড়ার গোকুল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাখি ব্যবসায়ী পলাশের বাড়ি গোকুল মেধের উত্তর-পশ্চিম পাশে। পাকা সড়ক থেকে ১০০ মিটার পূর্ব দিকে গেলে পুকুরের পাশে তিন তলা বাড়ি। এই বাড়ির একটি কক্ষে ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে বর্তমানে বসবাস করছেন। তবে পলাশের বাড়িতে ভিটো জিম্মি হয়ে আছেন- এমন কথা এলাকার কেউ বলছে না।
কারণ স্থানীয়রা ভিটোকে কখনো ওই বাড়িতে আটকে থাকতে দেখেননি। এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। আশেপাশের দোকানে নিয়মিত যান, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও গেছেন বহুবার।
পলাশের চাচাতো ভাই শফিক আহমেদ বলেন, “ভিটো প্রায় ৩ বছর ধরে আমাদের এখানে আছেন। আমাদের সঙ্গে চলাফেরা করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন। আবার অনেক সময় নিজেই রান্না করেন। বাজার থেকে মুরগি কেনেন। তাকে কখনো বন্দি অবস্থায় রাখা হয়নি। আমরা একসঙ্গে চলাফেরা করলেও ভাষাগত সমস্যার জন্য আলাপ খুব একটা হয় না।”
একই এলাকার আবু সাইদ নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জানান, পলাশের এখানে ব্যবসায়িক কাজে ভিটো এসেছেন, এটা সবাই জানে। তার সঙ্গে ভিটোর নিয়মিত দেখা হয়। তার অটোরিকশায় চড়ে ভিটো মমইন, বগুড়া শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনো তাকে মনে হয়নি তিনি জিম্মি হয়ে আছেন।
পলাশের কাছে জানা যায়, তারা মূলত কনভেনশনের ‘সংরক্ষণ’ তালিকায় নেই এমন পাখি বা যেসব পাখি বিপন্ন নয় এমন পাখি আমদানি করে থাকেন। এ ধরনের পাখিদের সংক্ষেপে ‘নন সাইটিস’ পাখি বলা হয়।
পাখি আমদানিকারক পলাশ বলেন, “ভিটো দেশে আসার পর যে পাখি দেওয়ার কথা, সেটা দিতে পারেননি। এভাবে কয়েক দফা পাখি দেওয়ার কথা বলে চাহিদা মোতাবেক দিতে পারেননি তিনি। এসব আমদানির প্রতিটির প্রকৃত কাগজপত্র আমার কাছে আছে। একবার মাত্র ছয়টা পাখি এনে দিয়েছে। এর জন্য আমাকে ২৩০০ ডলার শুল্ক দিতে হয়েছে। কারণ এলসিতে (লেটার অব ক্রেডিট) যে পরিমাণ আমদানির সংখ্যা থাকবে তার সবটুকুর শুল্ক দিতে বাধ্য আমি। এ জন্য আমার লোকসান আমি মেনে নিয়েছি। তারপরেও সে আমার কাছে টাকা দাবি করে। ভিটো বলে আমার কাছে নাকি পাখির মূল্যবাবদ ১২০০ ডলার পাবে। আমি সেটিও মেনে নিয়েছি।”
ভিটোকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে পলাশ বলেন, “আমি তাকে কোনোভাবে আটকে রাখিনি। সে এখনো আমাদের সঙ্গেই থাকে, খায়। তাকে সবচেয়ে ভালো ঘর দেওয়া হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, তুমি খুশি থাকলে আমিও খুশি।”
ভিটোর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি আমার দেশে যেতে চাই। এখানে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমার পাসপোর্ট নেওয়া হয়েছে। সে বলে, দেখতেছি, অপেক্ষা করো। কিন্তু আমি আমার দেশে যেতে পারছি না।”
ভিটো ও পলাশের কাছে জানা যায়, এ বছরে আবার আবেদনের জন্য পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। তার পাসপোর্ট ঢাকায় আছে। এটাকে সে বলছে তার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। ভিটো নিজেও ওই ভিসা এজেন্সির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
ভিসার আবেদনের জন্য লাল্টু হোসেন নামে এক ব্যক্তির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন পাখি আমদানিকারক পলাশ। লাল্টুর বাড়ি বগুড়ায় হলেও থাকেন ঢাকায়। লাল্টু হোসেনের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন।
লাল্টু বলেন, “ভিটোর পাসপোর্ট ভিসার আবেদনের জন্য প্রায় ৩ মাস আগে আমার কাছে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি হাইকমিশনে যোগাযোগ করি। কিন্তু তার ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আবার ৫ আগস্টের পর এই কাজগুলোতে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। এজন্য ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। কঙ্গোর ওই ব্যক্তির পাসপোর্ট মোটেও আটকে রাখা হয়নি।”
পুলিশ ও পাখি ব্যবসায়ী পলাশের কাছে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পলাশের বাড়ি থেকে আরেক পাখি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বের হন ভিটো। ওই পাখি ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া সদর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, পলাশ ভিটোকে আটকে রেখেছেন। স্থানীয় পাখি ব্যবসায়ী পলাশ আমার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র সব আটকে রেখেছেন। এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চান তিনি।
এ বিষয়ে বগুড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হুসেইন মোহাম্মদ রায়হান জানান, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেছে। পাখি ব্যবসায়ী পলাশের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে এসব ঘটানো হয়েছে। ভিটো নামে কঙ্গোর ওই নাগরিকের ভিসার মেয়াদ যেহেতু নেই। তাই বাংলাদেশে তিনি এখন অবৈধ অভিবাসী। তাকে এখানে রেখে বরং পাখি ব্যবসায়ী পলাশ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করণীয় প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “এখন এ বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি। ভিটোকে প্রথমে আমরা কোনো একটা সেফহোমে নেওয়ার চেষ্টা করব। পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে তার দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
ঢাকা/এনাম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পল শ র ব ড় আম র ক ছ ব যবস য় র জন য করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে