সমুদ্রপথের ম্যাপ

ভুলে গেছি কেমন ছিল তোমার তাকানোর ভঙ্গি।
অনিদ্রার উপকূলে
স্তব্ধ পাথরে ভরা জলাসন
পার হয়ে চলে এসেছি বাকহীন অন্ধকারে।
এখানে তোমার নামগন্ধ নাই।
সন্ধ্যায় নদীর পাড় ভাঙা শব্দের মতো
আকাশজুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে বাজপাখির ঝাঁক।
মনে হচ্ছে আমাদের চোখের ভেতর
কিছুক্ষণ পর গুম হয়ে যাবে সমস্ত আকাশ।
তবু তোমাকে দেখব বলে
প্রতিদিন খুলে রাখি সমুদ্রপথের ম্যাপ।

তুমি একা নও

তুমি একা নও। তোমার মতো পুরোনো বৃক্ষের ভাঙা ডালও। জলের ওপর যখন চন্দ্রালো ঝরে, তখন শ্রেণিবিভক্ত সমাজের অনেক মানুষের মুখের আকৃতি মনে পড়ে। ওই সব মুখও তোমার সঙ্গী। সঙ্গ দেয় তারা। তারা সর্বহারা।

এই মবাক্রান্ত নগরীর যেকোনো কোণ থেকে মেঘহরিণের মতো তুমি উড়ে যেতে পারো দূরে, মেঘান্তরে। যদিও স্বপ্নে তোমার সঙ্গে লেপটে আছে নির্মম দুঃখ, আছে পালকহারা অনেক পাখির খুবলানো দেহ, নিঃসঙ্গ রাতের মাঠ। তবু ফিরে আসছে হাওয়া, ধীরেই, শান্ত হচ্ছে মরা নদীর ঘাট।

এরপরও, হেসে উঠছে আমাদের স্মৃতির ভিতর পুরোনো সিন্দুকে জমিয়ে রাখা তর্জনী, দ্রোহ। মাঝে মাঝেই মনে হয়, তুমিই ইনটিমেসি কো-অর্ডিনেটর। তোমার চোখের সামনে নেমে এসেছে দূরের আকাশ। তোমার মতোই এই অপূর্ণ জীবনও চেখে দেখছে জংলি ফুলের মধু। গায়ে মাখছে সুগন্ধি হাওয়া।

রুমালের বোন

তুমি যেখানে ঘুমিয়ে আছ
পাতাবাহারের মতো
এমনি এমনি
প্রতিদিন সেখানে পাঠাই শুকনো পাতার ধ্বনি

গভীর রাতের নিস্তব্ধ আকাশে
চোখ রেখে
তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে যখনই ঘুমিয়ে পড়ি
তখন অনেক উড়ন্ত মেঘের ভেতর দেখতে পাই—
ছড়িয়ে আছে তোমার হাসি

আমরা দেখি
কোনো কারণ ছাড়াই কেঁদে উঠছে আমাদের রুমালের বোন
তুমি আমাদের মনের ভেতর-বাইরে
দিনের পর দিন আগলে রেখেছ হারানো স্বজন

প্রবর্তনা

তুমি ফুলের দিকে তাক করা কোনো বন্দুক নও।
তোমাকে দেখছি।
একেকটা দিনকে
মনে হচ্ছে পিছনে লুকিয়ে রাখা ছুরি।
এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেরই ছলচাতুরি।
নীরবে দেয়ালে দেয়ালে
ছায়াগুলোও কাঁপছে আতঙ্কে।
আমরা জীবন খুলে দেখছি অসম্পূর্ণ পর্নোগ্রাফি।
তবু নাগরিক কোকিলেরা ছুঁতে চাচ্ছে
ওপরে ওঠার সিঁড়ি।
জীবন ফুরাচ্ছে। নিজের সঙ্গে কথা ফুরাচ্ছে না।

বুদ্ধিজীবী

মরমি গানের শেষে আমরা বাড়ি ফেরার পথে
দেখছি ব্রিজ-কালভার্ট-রাস্তার উন্নয়ন
দিনকে দিন উজাড় হচ্ছে বন
আমরা মরমি গানের শিসে
পথে যেতে যেতে খুঁজে ফিরছি বিদুষী পবন

নাই কোথাও আর বিদুষী পবন
আমাদের চিন্তায় গড়ে উঠছে শুধু বাহারি ভবন
আমাদের ময়লা ভরা মন
উজাড় হওয়া বনের মতো
আমরা দেখছি হরিণ ফিরছে প্রাইভেট চিড়িয়াখানায়
শহরভর্তি বুদ্বিজীবী
তারা হরিণের মতো টিভি চ্যানেলে কথা বলতেছে গরিলার ন্যায়

ডল

সত্য প্রকাশের কোনো ভার নেই
তবু মাঝেমধ্যে কথা বলি মাধবীর সাথে
ভালো লাগে তাঁকে

লাশ পোড়ানো আগুন ঠেলে
উড়ে যেতে দেখি
আয়নার ভেতর ঘুমন্ত মেঘে

কথা শেষে
মাধবীই হয়ে ওঠে উড়ন্ত মেঘের তুলি
আবার মনে হয়
সে–ই দুনিয়ার বিভাজিত কেন্দ্রে কেন্দ্রে
শপিং মলে
দাঁড়ানো বোবা ডলগুলি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র র ভ তর

এছাড়াও পড়ুন:

আমার জীবনটা ট্র্যাজেডিতে ভরা

ছবি: দীপু মালাকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ