ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি হলো- বেআইনি বিদেশি অভিবাসীদের নাম চিহ্নিত ও অপসারণ করা।

এনআরসি আতঙ্কে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ায় ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কাটেনি। এরই মধ্যে একই আতঙ্কে নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা আরো এক ব্যক্তির। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার জেলার দিনহাটা-২ ব্লকের বুড়িরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতপুর গ্রামে। 

আরো পড়ুন:

আসামে কংগ্রেস নেতার ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে তোলপাড়

৯ দিনে রাশমিকার সিনেমার আয় কত?

মঙ্গলবার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে চালু হয়েছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা (এসআইআর)। নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী, ভারতীয় ভোটারদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

কিন্তু সেই তালিকায় নাম বিভ্রাট-এর কারণে বিষ খেয়ে জীবন শেষ করার চেষ্টা করলেন বুড়িরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতপুর গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল শেখ নামে এক ব্যক্তি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ‘খাইরুল শেখ’ এর পরিবর্তে রয়েছে ‘খইরুল শেখ’। ফলে খাইরুল ও খইরুল- নাম বিভ্রাটে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে আশঙ্কায় ছিলেন ওই প্রৌঢ়। 

এরপরই বুধবার দুপুরে ঘাস মারার ওষুধ খেয়ে নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের লোকেরা দ্রুত তাকে কোচবিহার মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছেন খায়রুল। 

খবর পেয়ে এদিন হাসপাতালে যান তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, বুড়িরহাট-২ নম্বর অঞ্চল সভাপতি দীপক বর্মনসহ জেলার শীর্ষ তৃণমূল নেতারা। খায়রুলের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তারা। যদিও গোটা ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল জেলার রাজনৈতিক মহলে। 

অভিজিৎ দে ভৌমিক জানান, “এসআইআর ভয়ঙ্কর রকমের একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে। ওই ব্যক্তির আসল নাম খাইরুল, যদিও ভোটার তালিকায় তার নাম এসেছে খইরুল। ফলে কেবলমাত্র একটি ‘আকার’ না থাকার কারণে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার মনে ভয় ঢুকেছিল যে তাকে হয়তো ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হতে পারে বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। সেই আতঙ্ক থেকেই তিনি বিষ পান করেছিলেন। আমরা চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি। তিনি এখন ভালো আছেন।” 

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২ রাজ্যে এসআইআরের ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে দ্বিতীয় দফায় ১২টি অঞ্চলে এসআইআর-এর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। তালিকায় রয়েছে সেই সব রাজ্য, যেখানে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।

এর আগে, প্রথম পর্যায়ে ভারতের বিহারে এসআইআর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিকেলে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে প্রথম দফার এসআইআর।

আরো পড়ুন:

সিনেমাটির ভরাডুবি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে: অনুপমা

আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে চিরঞ্জীবীর মামলা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানান, দ্বিতীয় দফায় এসআইআর হবে- পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পুদুচেরি, আন্দামান-নিকোবর, গোয়া, গুজরাট, তামিলনাড়ু, লাক্ষাদ্বীপ এবং কেরালায়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক যোশীও।

ভোটার তালিকা সংশোধনের মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি হলো- বেআইনি বিদেশি অভিবাসীদের নাম চিহ্নিত ও অপসারণ করা। এজন্য ভোটারদের জন্মস্থান যাচাই করার কাজেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আগত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে এই সংশোধন প্রক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

দেশের মধ্যে প্রথম বিহারে এসআইআর করে কমিশন। সেই সময় কমিশন জানিয়েছিল, গোটা দেশে ধাপে ধাপে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হবে। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করে কমিশন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বুথ লেভেল কর্মকর্তাদের। পশ্চিমবঙ্গে শেষবার ২০০২ সালে এসআইআর হয়েছিল।

আগামী বছর শুরুর দিকে যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে আসামে আপাতত এসআইআর হচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দাবি, আসামের এনআরসির কাজ প্রায় শেষের দিকে। পরবর্তীতে সেখানে হবে এসআইআর।

বিহারে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ৭ কোটি ৪২ লাখ নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ দুই দফায় হবে- ৬ ও ১১ নভেম্বর, ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর। স্থানীয় নির্বাচনের কারণে ভারতের কিছু রাজ্যে দেরিতে এসআইআর শুরু করা হবে জানা গেছে।

এসআইআর নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে প্রথম থেকেই নিশানা করছে বিরোধী দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, বিহারে আরজেডি, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর ডিএমকে এসআইআরের বিরোধিতা করেছে। এর আগে বিহারে এসআইএর নিয়ে তুমুল ঝামেলা দেখা যায় বিজেপি ও বিরোধীদের মধ্যে। বিহারে এসআইআর-এর পরে তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিল ৬৫ লাখ নাম।

এসআইআর-এর পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে। বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করার অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। যদিও সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন, বিহারে এসআইআর- এর বিরোধিতা করে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২ রাজ্যে এসআইআরের ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের