শেখ হাসিনাকে লেখা হলো ‘প্রধানমন্ত্রী’, আ.লীগ নেতার পত্রিকা অফিসে
Published: 9th, May 2025 GMT
খুলনার আঞ্চলিক ‘দৈনিক দেশ সংযোগ’ পত্রিকার অফিসে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যার দিকে নগরীর ছোট মির্জাপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের জেরে অফিসটিতে হামলা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকাটির ১২তম বর্ষের ৩৫তম সংখ্যার প্রথম পাতার ৭ ও ৮ নং কলামে ‘কাজী এনায়েতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আ’লীগের শোক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
আরো পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে: দার
ট্রাম্প চান, ভারত-পাকিস্তান থেমে যাক
দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকাটির সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ। তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক।
খুলনা থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, “বিক্ষুব্ধ জনতা পত্রিকা অফিসের কিছু মালামাল বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেন।”
স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে পত্রিকা অফিসটি ভাঙচুর করেন এবং বিভিন্ন ধরনের মালামালে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগেও জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে পত্রিকাটিতে একাধিক সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা হয়। যে কারণে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
দেশ সংযোগ পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে দেখা যায়, পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগের নাম রয়েছে। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন আবু নুরাইন খন্দকার। পত্রিকায় প্রকাশকের কোনো নাম উল্লেখ নেই। নগরীর ৪০, সিমেট্রি রোডস্থ (বেনিবাবু রোড) জাহান মঞ্জিলের দেশ প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স নামে প্রেস থেকে পত্রিকাটি মুদ্রিত এবং নগরীর ১৬৩ নং পশ্চিম বানিয়াখামার মেইন রোডস্থ ‘দুর্জয়’ নামক ভবন থেকে প্রকাশিত।
পুলিশ জানায়, পত্রিকাটির সম্পাদক মাহাবুব আলম সোহাগের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তিনি কারাগার থেকে জামিনে বের হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর ডিবির ইনচার্জ তৈমুর আলম।
এদিকে, হামলার ঘটনার পর পত্রিকার সম্পাদক মাহাবুব আলম সোহাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘প্রকাশিত সংবাদ প্রত্যাহার ও কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন।
পোস্টে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি উল্লেখ করেন, “বৃহস্পতিবার দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় ৭ ও ৮ এর কলামে ‘কাজী এনায়েতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আ’লীগের শোক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি প্রত্যাহার করেছে সম্পাদকসহ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। আওয়ামী লীগের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুলক্রমে এডিট না করে হুবহু ছাপিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং কয়েকজন নেতার নামের সঙ্গে এমপি লেখা রয়েছে। যা ছাপা অনুচিত এবং নিয়ম পরিপন্থি হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক এবং পত্রিকার বার্তা বিভাগ অনুতপ্ত হয়ে আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।”
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ব আলম স হ গ উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
অবশেষে জামিন পেলেন বেরোবি শিক্ষক মাহমুদুল হক
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন।
এর আগে দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো. সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে তিনি আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। পরবর্তীতে মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য শরনাপন্ন হলে বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ জুলাই হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।
মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকে চেনেনও না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেপ্তার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি। তিনি জানান, প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত বক্তব্য শোনার পর পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে জামিন আবেদনের আগে ও পরে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা মাহমুদুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান এবং এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং ঘটনাটিকে স্বাধীন চিন্তার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দেন।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তারা এর নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান।
মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে এ বছরের ৩ জুন রংপুর নগরের হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
অন্যদিকে ওই মামলায় বেরোবি শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শনিবার হাজীরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আবদুল আল মামুন শাহ রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁকে রংপুর মহানগর পুলিশের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজীরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।