হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ জানায়, ওই গ্রামের ডা.

রেজাউল করিম ও জলসুখা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ খেলুর লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম্য বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে মাসখানেক পূর্বেও তাদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয। সর্বশেষ সোমবার (১২ মে) উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়। যদিও বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয় মুরুব্বিদের মাধ্যমে শেষ হয়। এরই জের ধরে মঙ্গলবার সকালে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারীসহ অন্তত  ৫০ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে সাইকুল বেগম (৫০), জিয়াউর রহমান (৩৫), তকদির মিয়া (৪২), ইমন (২২), নাইম মিয়া (২৪), শামীম মিয়া (১৯), মছদ উল্লা (৬০), জয় (২০), মুসকুদ উল্লা (৫০), আলী নুর (১৪), ফয়সলকে (১৪) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে ডিপ্লোমা-বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ১০

মাদারীপুরে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ

ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে প্রতিপক্ষরা আমার উপর হামলা করে। এ ঘটনায় আমি একটি মামলা দায়ের করি। সোমবার ওই মামলায় পুলিশ আসামি ধরতে গ্রামে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের লোকজনকে মারধর করে। মঙ্গলবারও তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা করলে এলাকার অধিকাংশ লোকজন একত্রিত হয়ে তা প্রতিহত করে।’’

ফয়েজ আহমেদ খেলুর পক্ষের সাবেক ইউপি সদস্য লিবাছ মিয়া অভিযোগ করেন, ‘‘ডা. রেজাউলের লোকজন আমাদের পক্ষের এক নারীকে রাস্তায় একা পেয়ে মারপিট করে। এরই জের ধরে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিপক্ষরা আমাদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।’’

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 
 

ঢাকা/মামুন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র ল কজন র আম দ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ