উনিশ শতকের আগে বাংলা ভাষায় কোনো আত্মজীবনী লেখা হয়নি। এক ধরনের আত্মপরিচয় তুলে ধরার ব্যক্তিগত প্রয়াস দেখা গেছে; যা কাহিনিকাব্যের মতো। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে মুকুন্দরাম এবং পদ্মাবতীতে আলাওলের আত্মকাহিনি বাংলা ভাষায় পেয়েছি। পরবর্তী উনিশ শতকের শুরুতে জাতীয়তাবাদ বিকাশের মধ্যদিয়ে জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা যখন নাগরিকদের মাঝে জন্মে, সেই সাথে ব্যক্তি মানুষ শিকড় অন্বেষী হয়ে নিজেকে উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে আত্মজীবনী লিখতে শুরু করে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি ও নাট্যজন অভীক ওসমানের আত্মজীবনী ‘আমি অকৃতি অধম’ । তিনশোর বেশি পৃষ্ঠাজুড়ে লিখিত বইয়ের পাতায় পাতায় লেখকের নানাবিধ কর্মের দৃষ্টান্ত নক্ষত্রের আলো ছড়িয়েছে।
শৈশব থেকে তার প্রায় সত্তর বছর অতিবাহিত যে জীবন, তার অনুপুঙ্খ সাবলীল বয়ানে আমরা সেই জীবনে পাবো সংগ্রামশীলতা, নিজেকে প্রতিষ্ঠার অদম্য বাসনা, মেধা ও শ্রমের যৌথ লড়াইয়ের আত্মদহনকাল।
আত্মজীবনীতে অকপটে তিনি সবকিছুই প্রকাশ করেছেন, কোনো ভণিতা না করে। সমাজ অধ্যয়ন তার চিন্তার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ছাত্রজীবনে কিভাবে তিনি সচেতনভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী তারুণ্যের উন্মাদনায় ভেতরের আগুনে জ্বলে পুড়ে নির্মাণ করতে চাইলেন বাঙালির জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পথে যে তরুণ মহাসাগর পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন, বাংলা সাহিত্যের ছাত্র সেই তিনি বেছে নিলেন কবিতা, নাটক এবং লেখালেখির নানা মাধ্যমকে। এখানে ভাবনার কেন্দ্রে নারী, প্রেম সর্বোপরি মানুষের স্বপ্নভঙ্গের .
অনুন্নত একটি উত্তর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক কী কেবল লেখালেখি করে জীবন যাপন করতে পারেন? শুধু প্রশ্নের জন্য প্রশ্ন নয় এটা। এটা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার গলদ যা পাঁচ দশক ধরে বিদ্যমান বাস্তবতা। একজন মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা অদম্য শক্তির যুবক পরাজিত হলেন পচনশীল রাজনৈতিক কাঠামো এবং রোমান্টিক বিপ্লবী বাসনার কাছে। তিনি নিজেকে সমর্পণ করলেন করপোরেট কোম্পানির গিলোটিন-ব্যবস্থার কাছে। অধিকাংশ মেধাবী তরুণ যেভাবে অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনভোগের নিশ্চয়তা চায়, কবি অভীক ওসমানও নিশ্চিন্ত সেই পেশাকে বেছে নিয়েছেন। যে সমাজ কাঠামোয় সুবিধাবাদী এবং সুবিধাভোগীদের জন্ম দেয়। সে বিবেচনায় অভীক ওসমানের আত্মজীবনী একইসাথে বিগত সত্তর বছরের সমাজ ও রাষ্ট্রের রেখাচিত্রও বটে।
অভীক ওসমানের আত্মজীবনী গ্রন্থটি পাঠ করে তাকে নানাভাবে আবিষ্কার করা যায়। এই বইয়ে তিনি সহজ সরলতার সঙ্গে নিজেকে এবং পরিপার্শ্বকে তুলে ধরলেন। অযথা দুর্বোধ্যতার আশ্রয় বা সত্য এড়িয়ে কল্পকাহিনি লিখতে যাননি।
নিজের জন্ম-বৃত্তান্তের পাশাপাশি শিক্ষা জীবন, ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে নিজের জন্মস্থানে বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা তিনি লিখেছেন। তিন দশকের সাহিত্য আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চট্টগ্রামের সাহিত্য আড্ডা নিয়েও লিখেছেন। এ গ্রন্থ সাবলীলভাবে কবি ও নাট্যজন এবং বাংলাদেশের চলিষ্ণু সময়কে সুলিখিত এবং সরল গদ্যে উপস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিগুণ পারিশ্রমিক চাইছেন শ্রীলীলা
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার অভিনেত্রী শ্রীলীলা। ২০১৯ সালে ‘কিস’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন। তবে ২০২১ সালে ‘পেলি সানড়া ডি’ সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের নজর কাড়েন এই অভিনেত্রী। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন রোশান মেকা।
৮ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা বক্স অফিসে আয় করে ২০ কোটি রুপি। সিনেমাটির জন্য ৫ লাখ রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন শ্রীলীলা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়ে যায় তার চাহিদা, বৃদ্ধি পায় তার পারিশ্রমিকও। গত বছর শ্রীলীলা একটি সিনেমার জন্য ১ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন। একই বছর একদফা পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেন। এবার দ্বিগুণ পারিশ্রমিক চাইছেন এই অভিনেত্রী।
সিয়াসাতের তথ্য অনুসারে, পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তেলেগু সিনেমার অভিনেত্রী শ্রীলীলা। এর আগে সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিতেন। এই তারকা এখন তার পরবর্তী প্রকল্পগুলোর জন্য ৭ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি) পারিশ্রমিক দাবি করছেন।
আরো পড়ুন:
প্রাক্তন অভিনেত্রী সানা খানের মা মারা গেছেন
কুবেরা: কে কত কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিলেন?
বহুল আলোচিত সিনেমা ‘পুষ্পা’। এ সিনেমার দ্বিতীয় পার্টের আইটেম গানে পারফর্ম করেন শ্রীলীলা। গানটি মুক্তির পর দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তবে শ্রীলীলা তার পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসা কুড়ান। আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্প টু’ সিনেমার আইটেম গানের জন্য শ্রীলীলা ২ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেন।
শ্রীলীলার হাতে বর্তমানে বেশ কটি সিনেমার কাজ রয়েছে। এর মধ্যে তেলেগু ভাষার ‘জুনিয়র’, ‘ম্যাস যাত্রা’ সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন। হিন্দি ভাষার ‘আশিকি থ্রি’, তামিল ভাষার ‘পরাশক্তি’, তেলেগু ভাষার ‘ওস্তাদ ভগত সিং’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তেলেগু ভাষার ‘লেনিন’ সিনেমার ঘোষণা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
২০০১ সালের ১৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে জন্মগ্রহণ করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রীলীলা। সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভারতে ফিরে বড় পর্দায় নাম লেখান শ্রীলীলা।
ঢাকা/শান্ত