নিয়োগের কথা সাত শিক্ষক ২০ জনকে নিতে সুপারিশ
Published: 17th, May 2025 GMT
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাঁচ বিভাগে মোট সাত শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও সুপারিশ করা হয়েছে ২০ জনকে।
এ ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাদ পড়েছেন মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা। এ নিয়ে চলছে আলোচনা। ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু আজও সেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর একসঙ্গে বেশ কিছু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলা, নৃবিজ্ঞান, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) ও লোকপ্রশাসন বিভাগে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা। এর পর ৭ জানুয়ারি আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বন ও পরিবেশ বিদ্যা (এফইএস) বিভাগে তিন প্রভাষক নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এসব পদের বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড বাংলা বিভাগে তিন, নৃবিজ্ঞানে তিন, এফইটি বিভাগে তিন, লোকপ্রশাসনে পাঁচজন এবং এফইএস বিভাগে ছয়জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে। নিয়োগ বোর্ড থেকে সুপারিশ করা অধিকাংশ পদ ইউজিসি থেকে ছাড়কৃত নয়।
এ বিষয়ে ২৯ এপ্রিল ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কমিশন থেকে ছাড় দেওয়া হয়নি– এমন পদে বিজ্ঞাপন দিয়ে এর বিপরীতে ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলা বিভাগে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে তিন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নৃবিজ্ঞান বিভাগে একজনের বিপরীতে তিনজন, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে একজনের বিপরীতে পাঁচজন এবং ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে তিনজনের বিপরীতে ছয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এফইএস বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের দিকে একটি পদে প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিনজন নেওয়া হয়। এ নিয়ে ওই বিভাগে বর্তমানে ২৮ শিক্ষক আছেন। তবে ওয়েবসাইটে ২৫ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এক শিক্ষক ছুটিতে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় তিনটি পদে কমিশন থেকে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি পেলেও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড প্রভাষক পদে ছয়জনকে সুপারিশ করেছে। এফইটি বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত একজনের বিপরীতে তিনজনকে সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের মেধাক্রম– ১৭, ১৯ ও ২০।
এদিকে বাংলা, এফইটি, লোকপ্রশাসনসহ বেশ কিছু বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েক প্রার্থী নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, কয়েকজনকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সুপারিশ করা হয়েছে, যারা জামায়াত-শিবিরের সমর্থক।
এসব বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘ইউজিসির চিঠির জবাব কর্তৃপক্ষ দেবে। আমি বাছাই বোর্ডের সভাপতি। সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হওয়ার আগে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারি না। সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে যাবে এবং সেখানে যা হবে, তা পাবলিক করা হবে।’ আগামী ১৭ মে সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স প র শ কর র ব পর ত ইউজ স
এছাড়াও পড়ুন:
সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাজা দিলে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করা হবে।
আজ রোববার সকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এ কথা বলেন। তাঁকে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন। ইন্টারপোল কোনো রকম সাড়া দেয়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে প্রসিকিউশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল। কালকে (সোমবার) যদি রায় হয় এবং রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে ইন্টারপোলে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করবে প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেবেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ কাউকেই দেননি। যেটা আইনজীবী বোধ হয় এই আদালতে খানিকটা বলেছিলেন।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। সামাজিক দৃষ্টিতে বক্তব্য। প্রসিকিউশন মনে করে, এখানে যে মামলা হয়েছে, এটা তিনি জানেন না বা জানতেন না, এটা বলার আর সুযোগ থাকছে না শেখ হাসিনার। তাঁর ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে, যা সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে এই আদেশটা দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। অপরাধী পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি যে তারা অপরাধী। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন যে শেখ হাসিনা আদৌ অপরাধী, কি অপরাধী নন।
ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি কি শুধু শেখ হাসিনার বিষয়ই থেকে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টি প্রসিকিউশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে। প্রসিকিউশন বা বিচারব্যবস্থা এটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) কোনো আমলে নিচ্ছে না।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ মেনে নেবে প্রসিকিউশন
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে প্রসিকিউশন। শুধু তা–ই নয়, এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এই মামলায় বা এই ঘটনায় যাঁরা ভুক্তভোগী আছেন, শহীদ আছেন, আহত পরিবার আছে, তাঁদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনাও জানানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দেবেন, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, চব্বিশের আগের ট্রাইব্যুনালের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো প্রযোজ্যতা ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের পর আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইন, অর্থাৎ রোম স্ট্যাটিউটে যে আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা এবং অ্যাপ্লিক্যাবিলিটি (প্রযোজ্যতা) আছে, সেটা এখানে প্রযোজ্য করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যে কয়েকটি অভিযোগ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে, একই অভিযোগ যদি দেশের অন্য কোনো আদালতে কোনো মামলা থেকে থাকে, সেগুলো আর চলবে না। কারণ, সাংবিধানিক অধিকার হলো একই অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে দুবার শাস্তি বা দুবার বিচার করা যাবে না। এর বাইরে যদি অন্য কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, সেটি চলতে পারে।
পলাতক অবস্থায় শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না
এ মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁদের সাজা হলে আপিল করার সুযোগ থাকবে কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, অবশ্যই না। এ মামলার যেসব আসামি পলাতক আছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন না।
মামলার প্রধান আসামি একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে আইনে বিশেষ কোনো সুবিধা তিনি পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসিতে জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক, শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি বিবেচনা করে শাস্তি প্রদান করা হবে বা মামলা প্রমাণ না হলে খালাস প্রদান করা হবে।