শাহরিয়ার হত্যা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুললেন বড় ভাই শরীফুল
Published: 18th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা-পরবর্তী কিছু ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম। শাহরিয়ার যে আবাসিক হলে (স্যার এ এফ রহমান হল) থাকতেন, সেই হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল, এ কথা উল্লেখ করে তিনি পুলিশকে এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ছাত্রদলের অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শরীফুল ইসলাম এ কথা বলেন। ‘শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে’ ছাত্রদল আজ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে। কিন্তু পরে তারা পৌনে দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে।
আজ শাহরিয়ার আলমের সহপাঠী এবং বিভাগের শিক্ষকেরা শাহবাগ থানায় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে শরীফুল ইসলামও ছিলেন। সেই প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ঘটনার সময় সাধারণ জনগণ দুজনকে আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বলা হয়, ঘটনার চার ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে সাত-আট কিলোমিটার দূরে কোনো এক হাসপাতাল থেকে সেই দুই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রশ্ন হলো, পুলিশ পরে তাঁদের কেন ওই হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার দেখাল? এখানে প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার দুজনকে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়। কোনো চাপের কারণে পুলিশ ওই দুজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল কি না, জানতে চান শরীফুল।
শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘গভীর রাতে দুজনকে গ্রেপ্তারের পুরস্কারস্বরূপ সরকার তাদের (পুলিশ) এক লাখ টাকা উপহার হিসেবে দিয়েছে। আমি পুলিশকে বলতে চাই, যদি আপনাদের উপহারের দরকার হয়, আজকের এই সমাবেশে আমি ঘোষণা দিলাম, যদি দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হয়, আমি পাঁচ লাখ টাকা উপহার দেব, ইনশা আল্লাহ।’
হত্যাকাণ্ডের পর শাহরিয়ারের চরিত্রহননের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন কিছু কিছু ফেসবুকে দেখছি, আমার ছোট ভাইয়ের চরিত্রহননের জন্য ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের সাবধান করে দিতে চাই, “মনে রাখবা, আজকে তোমরা যদি এ রকম সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাও, ভবিষ্যতে তোমাদের মধ্যেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই দল-মতনির্বিশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটাকে নিরাপদ করার জন্য তোমাদের সচেষ্ট হতে হবে।”’
শাহরিয়ার হত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করায় ছাত্রদলের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান শরীফুল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল শ হব গ দ জনক
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাকায় জমি বিরোধের জেরে দুইপক্ষের দ্বন্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি হয়েছেন মোল্লা ফারুক হাসান নামে এক সাংবাদিক।
তবে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলাটি এজাহারভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ
‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন
ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা এবং সময়ের কন্ঠস্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালের স্থানীয় প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েকদিন আগে কটকস্থল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে স্থানীয় হারুন-অর রশিদ বেপারী ও মো. হিরা মাঝি গংদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন থানা পুলিশ। এরপর সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। পরবর্তীতে পুরো ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।”
তিনি বলেন, “ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারুন-অর রশিদ বেপারী তার প্রতিপক্ষ মো. হিরা মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই অভিযোগের মধ্যে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই আমাকে আসামি করে ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত করেন।”
তিনি আরো বলেন, “যেখানে সাধারণত হুমকি-ধামকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে আগে তদন্ত প্রসঙ্গটি উত্থাপণ করে থানা পুলিশ। সেখানে ঘটনার সময় থানা পুলিশ ওই ফিলিং স্টেশনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রহস্যজনক।” মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি (সাংবাদিক) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি হারুন-অর রশিদ বেপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “একটা মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, “পেট্রোল পাম্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ সংবাদকর্মীদের দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এবং গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত করিয়েছে। একটি পক্ষ ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির এজাহার দায়ের করা হয়।”
তিনি বলেন, “তদন্ত করার আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার কারণে মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে এক সাংবাদিক রয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক মোল্লা ফারুক যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তার কিছুই হবে না।”
তিনি আরো বলেন, “ওই সাংবাদিক (মোল্লা ফারুক) আমার কাছে এসেছিল। তাকে আমি বলেছি, আপনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ খোঁজবেও না, আপনি নিশ্চিত থাকেন।”
অপরদিকে, তদন্ত ছাড়া গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মামলায় আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ও বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। তারা অনতিবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।
এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি করেছেন বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন, গৌরনদী প্রেসক্লাব, কালকিনি সাংবাদিক ফোরাম, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দরা।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী