লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন। শুক্রবার দুপুরে লালমনিরহাট- বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের উপজেলার বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম মেরাজ হোসেন (২২)। তিনি পাটগ্রাম পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মির্জারকোর্ট এলাকার আলিউল ইসলামের ছেলে। দুর্ঘটনায় আহত অনিক ইসলাম (২৩) একই এলাকার একরামুল হকের ছেলে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে মেরাজ হোসেন ও তার বন্ধু অনিক ইসলাম পাটগ্রাম পৌরসভার মির্জারকোর্ট গ্রামের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে পাশের উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বড়মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। অনিক ইসলাম মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন। তার পেছনে বসা ছিলেন মেরাজ হোসেন। মোটরসাইকেলটি লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের উপজেলার বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে পৌঁছালে নীলফামারী থেকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী মেরাজ হোসেন মারা যান। অনিককে উদ্ধার করে স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য পাটগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে জরুরি বিভাগের চিকৎসক তাকে উন্নত চিকৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আরেকজনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত উপজ ল র ব র জন য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...

বাংলাদেশের শহুরে জীবন যেমন নানা সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি সমস্যারও অন্ত নেই। ঝকঝকে ভবন, আধুনিক অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবকিছুই মানুষকে শহরমুখী করছে। কিন্তু এই আকর্ষণের আড়ালে সবচেয়ে বড় সংকট হলো ভাড়া বাড়ির ক্রমবর্ধমান চাপ। ঢাকার মতো মহানগরে, যেখানে কাজ, শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ সবচেয়ে বেশি, সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে এ সমস্যা গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

প্রতিবছর ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু আয়ের হার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। একজন চাকরিজীবীর বেতনের অর্ধেক বা তার বেশিই চলে যায় ভাড়ার পেছনে। এরপর বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা ও সন্তানের পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে পরিবারগুলোকে কঠিন চাপে পড়তে হয়। কেউ খরচ কমিয়ে চালায়, কেউ ঋণ নেয়। এ কারণে মানসিক অশান্তি বাড়ে, পারিবারিক দ্বন্দ্বও তৈরি হয়।

শহরে নতুন আসা শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভালো এলাকায় থাকতে হলে মোটা অগ্রিম টাকা গুনতে হয়। অনেকে কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়, খরচ ভাগ করে। কিন্তু ঘন ঘন বাসাবদল, নতুন এলাকায় মানিয়ে নেওয়া কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক—সবই একেকটা চাপ।

এ কারণে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ক্রমে শহরের প্রান্তিক বা অস্বাস্থ্যকর এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকায় স্কুল-কলেজ দূরে, পরিবেশ খারাপ, নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এতে শিশুদের পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বড়রা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। জীবনযাত্রার মান পুরোপুরি নেমে যায়।

বাস্তব অভিজ্ঞতা
রাকিব নামের এক তরুণ চাকরিজীবী ঢাকায় একটি কক্ষে থাকেন। বেতনের অর্ধেক চলে যায় ভাড়ায়। বাকি টাকা দিয়ে বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা সব সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন নতুন চাপে পড়েন। মানসিক চাপ এত বেড়ে যায় যে ঘুম কম হয়, কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

শিরিন, একজন কলেজছাত্রী। পড়াশোনার জন্য শহরে এসে এক বন্ধুর সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ার করেন। ভাড়া ও খরচ সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাঁকে খাবার বা বইয়ের খরচ বাদ দিতে হয়। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।

তিন সন্তানের জনক মাহমুদ পরিবার নিয়ে শহরের কেন্দ্রে ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন। নিয়মিত ভাড়া বাড়ানোর কারণে স্কুল, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন ব্যয় সামলানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারে স্থিতি নেই, চাপ কেবল বাড়ছেই।

সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
ভাড়া সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও ভয়াবহ। পরিবারগুলো ঘন ঘন বাসাবদলের চিন্তায় থাকে। শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়, বড়রা কাজে মনোযোগ হারান। ভিড় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে ছোট জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকে, যা স্বাধীনতা কমায় এবং পারিবারিক টানাপোড়েন বাড়ায়।

সমাধান কী হতে পারে
সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প: সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কম খরচের নিরাপদ ফ্ল্যাট বা সরকারি আবাসন বাড়াতে হবে।

আইনগত সুরক্ষা: ভাড়াটিয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে না পারেন।

মানুষকেন্দ্রিক পরিকল্পনা: নতুন ফ্ল্যাট তৈরি যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান আবাসনব্যবস্থায়ও নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা জরুরি।

ভাড়াটিয়া সমিতি: ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় স্থানীয় কমিটি বা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

শেষ কথা
শহুরে জীবনের এই ভাড়া সংকট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। এখনই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিগত পদক্ষেপ। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা গেলে শহরের মানুষ আবার শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। শিশুরা ভালো শিক্ষা পাবে, পরিবারে স্থিরতা আসবে, মানসিক চাপ কমবে। শহর হবে আরও সুন্দর, মানবিক ও সবার জন্য বাসযোগ্য।

আরশী আক্তার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্র হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী এখন যুবদল নেতা!
  • দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে পাঠানো হলো ৫০০ কেজি চিনিগুঁড়া চাল
  • দুর্দান্ত প্রকৌশলী, প্রাণবন্ত মানুষ
  • ‘আপনাদের কার্যক্রম তো সন্ত্রাসীদের মতো’ সাংবাদিকদের বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভিডিও ভাইরাল
  • ‎ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বেরোবির ৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • ব্যাংকিং খাতে আস্থা বাড়াতে নিজের কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগের গল্প বললেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...