জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জে এক পোলট্রি খামারি ও হ্যাচারি ব্যবসায়ীর বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত দলের সদস্যরা ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে একটি কক্ষে বেঁধে আটকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা লুট করেছে। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে ডাকাতির এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।

ডাকাতদের মারধরে শিকার ব্যবসায়ীর নাম ইসমাইল হোসেন (টুকু) ও তাঁর স্ত্রী বিলকিস আরা। তাঁদের জামালগঞ্জ বাজারের পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সড়কের পাশে নীড় নামক একটি বাসা রয়েছে। সেখানেই ঘটেছে ডাকাতির ঘটনা।

বিলকিস আরা দাবি করেন, ডাকাতেরা নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও দেড় শ ভরি স্বর্ণালংকার, তিন লক্ষাধিক টাকার ছয়টি ঘড়ি লুট করেছে। তবে মামলায় শুধু ৩০ ভরি স্বর্ণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার বাদী ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাসেল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে বলেছে, সেভাবেই আমরা মামলা করেছি। স্বর্ণের পরিমাণ বড় বিষয় নয়, আমরা খোয়া যাওয়া স্বর্ণগুলো দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।’
আজ শনিবার সকালে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আরিফ হোসেন, আক্কেলপুর থানার ওসি মাসুদ রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আজ সকাল ১০টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার রান্নাঘরের একটি জানালার গ্রিল খোলা। ইসমাইল হোসেনের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাসায় ভিড় করছিলেন। ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী বিলকিস আরা স্বজন ও প্রতিবেশীদের ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইসমাইল হোসেন পোলট্রি ও হ্যাচারি ব্যবসায়ী। জামালগঞ্জ বাজারের মধ্যে তাঁর বাসাটি বেশ সুরম্য। ওই বাসায় ইসমাইল হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও গৃহপরিচারিকা থাকেন। গতকাল রাতে তাঁরা খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমিয়ে যান। দিবাগত রাত দুইটার পর ছয়জন মুখোশধারী ডাকাত ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাসায় ঢুকে ইসলামইল ও তাঁর স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। এরপর তাঁদের সবাইকে মারপিটের পর একটি ঘরে বেঁধে রেখে ডাকাতেরা বাসার নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় গিয়ে আসবাব ভেঙে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও তিন লাখ টাকা দামের ছয়টি হাতঘড়ি লুট করে পালিয়ে যায়। বাসার সিসিটিভি ক্যামেরায় ডাকাতির ঘটনার ফুটেজ ধরা পড়েছে।

গৃহকর্ত্রী বিলকিস আরা বলেন, ‘মুখোশধারী পাঁচজন ডাকাত আমাদের ঘরে ঢুকেছিল। একজন বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। ডাকাতেরা আমাকে ও আমার স্বামীকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এরপর তারা আমাদের মারপিট করে একটি ঘরে আটকে রাখে। প্রথম তলায় আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকি। দ্বিতীয় তলায় ছেলের পরিবার থাকে। আমার ঘরের আলমিরাতে নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা, এক শ ভরি স্বর্ণ ও আমার ছেলের ঘরে আরও ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিল। ডাকাতেরা সব স্বর্ণালংকার ও দামি ঘড়ি নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

গৃহকর্তা ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাসেল বলেন, ‘আমি বগুড়া ছিলাম। বাসায় ডাকাতির কথা জেনে ছুটে এসেছি। ডাকাতেরা আমার মা-বাবাকে মারধর করেছে। বাসার সিসিটিভির ফুটেজে ডাকাতদের দেখা গেছে। ডাকাত দলের সদস্যদের সবার মুখ বাঁধা ছিল। তাদের হাতে চাপাতি ছিল। ডাকাতদের সবার বয়স ৩০ মধ্যে হবে বলে মনে হচ্ছে।’

আক্কেলপুর থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এ ঘটনায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ইসমাইল হোসেন থানায় এসেছিলেন। একটি মামলা করেছেন। মামলায় নগদ টাকা, ৩ লাখ টাকার ৬টি ঘড়ি ও ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গৃহকর্ত্রী বিলকিস আরা দাবি করেছেন, ডাকাতেরা তাঁদের দেড় শ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করেছে, এমন প্রশ্নে ওসি মাসুদ রানা বলেন, ‘প্রথমে এ রকম কথা আমাদেরও বলেছিলেন। তবে গৃহকর্তা ৩০ ভরি স্বর্ণের কথা বলেছেন। তিনি মামলার এজাহারেও ৩০ ভরি স্বর্ণের কথা বলেছেন। পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র স বর ণ র গ হকর ত ব যবস য় ল ট কর

এছাড়াও পড়ুন:

গান-কথামালায় বিশ্ব সংগীত দিবস উদযাপন

গান, কথামালায় উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব সংগীত দিবস। আজ শনিবার ২১ জুন সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালায় দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ আয়োজন করে অনুষ্ঠান ‘সুরের সম্মিলন’। 

জাতীয় নাট্যশালার সম্মুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। এছাড়াও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের বক্তব্যের পর বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব সংগীত  দিবসের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এরপর একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংগীতশিল্পীরা এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।  

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন,‘আজ হচ্ছে উৎসবের দিন। যারা সংগীত চর্চায় মনোনিবেশ করেছেন, যাঁদের জীবন অতিবাহিত করেছেন বা করছেন আজ তাঁদের উৎসবের দিন। বিশ্ব সংগীত দিবসের একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সূতিকাগার হচ্ছে ফ্রান্স। সেখানে এই দিবসের সূচনা হয়েছিল। আমাদের অস্থিরতা ও সুস্থতার জন্য সংগীত কতটুকু নিরাময় ভূমিকা পালন করে- এই বৈশ্বিক দিবস পালনের মাধ্যমে সেটি আমরা বুঝতে পারি। যারা সংগীত এবং ফুলকে ভালোবাসেন তারা কখনো অন্যায় করতে পারেন না। আমাদের ভেতরের যে তাড়না, ভেতরের যে কালো অধ্যায়, ভেতরের যে কুলষিত রূপ সেটি আমরা মুছে দিতে পারি শুধুমাত্র সংগীতের মাধ্যমে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ দেখছি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রের ঝনঝনানি, ক্ষমতার দম্ভ, ক্ষমতার দাপট। মানবতাকে ভুলে, মানবতাকে ভুলন্ঠিত করে আজ শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে হত্যা করছেন। আমি মনে করি, যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হবে বিশেষ করে সংগীতের চর্চা হবে সে দেশে যুদ্ধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শুধু সংগীত চর্চাকে নয় সাংস্কৃতিক সমস্ত মাধ্যমকে লালন করে, পালন করে এবং বিকশিত করার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সংগীতের সাথে জড়িত সকল ধরণের শিল্পীদের আন্তরিক অভিবাদন ও কৃতজ্ঞা জানিয়ে সংগীত দিবসটি সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাক, সকলের মাঝে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাক সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মূল আয়োজনে শুরুতেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ ‘অর্কেস্ট্রা’ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ‘কোলাজ’ সংগীত পরিবেশন করেন। আদিবাসী গান পরিবেশন করেন ব্যান্ডদল ‘চিম্বুক’ ও ‘বম শিল্পীগোষ্ঠী’। এরপর জনপ্রিয় তারকা শিল্পীরা পরপর কয়েকটি সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন। সবশেষে জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীরা ‘কোলাজ’ সংগীত পরিবেশন করেন। 

এদিকে ,সুরের ছোঁয়ায় শান্তি ও সুস্থতা এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং সংগীতকে বিশ্বের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয়ে এবং সারা বিশ্বব্যাপী সংগীতপ্রিয় মানুষের সাথে একাত্ম হতে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’ আজ উদযাপন করেছে বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীতের নানান ধারা উপস্থাপন মাধ্যমে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন একমাত্র সঙ্গীতই পারে যুদ্ধ বিধ্বস্ত হানাহানি মুক্ত সাম্য ও শান্তির পৃথিবী গড়তে। মানুষের স্নিগ্ধ শান্ত অনুভুতিগুলো প্রকাশ হোক এটাই তাঁর প্রত্যাশা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদযাপন পর্ষদ এর আহবায়ক সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সদস্য সচিব অলক দাশগুপ্ত। বক্তব্যে তারা বলেন প্রতিবছরের ন্যায় আগামীতেও এই দিবসটি পর্যায় ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে চর্যাপদ থেকে পদ, আবৃত্তি এবং জনপ্রিয় ও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে একটি কম্পোজিশন সুরের ছোঁয়ায় শান্তি উপস্থাপনা করে শিল্পীরা। এতে অংশ নেন লাইসা বিনতে কামাল, রত্ন দত্ত, সন্দীপা বিশ্বাস, রাইসা, অনন্যা, বর্ষা, পূজা, নওশীন জাফরিন, নাজিয়া আলম মমতা, আফিয়া তাইয়েবা, সানজিদা রহমান মুন, সাদিকা রহমান মেধা। এরপর নৃত্য উপস্থাপন করে শিল্পী অংকিতা অথৈ। দলীয় সংগীত পরিবেশ করে সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা, ভিন্নধারা, সপ্তকলি, আনন্দন।
আবৃত্তি উপস্থাপন করেন ফয়সাল আহমেদ ও মাহফুজা আক্তার মীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী বর্ষা রাহা, রজত শুভ্র বিশ্বাস, সন্দিপা বিশ্বাস, মনি গোমেজ, শান্তা সরকার, সানোয়ারা জাহান নিতু, মার্টিনা এম সংমা তৃষ্ণা, আবিদা রহমান সেতু ও জাকারিয়া সুমন প্রমুখ।
ছিল ব্যান্ডদল ‘ ব্রেখলেস’ এর পরিবেশনা।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রূপমঞ্জরি আর্যা ও শান্তনু তালুকদার। সব শেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। 
প্রসঙ্গত, ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীত দিবসের সূচনা হয়েছিল ফ্রান্সে। সেখানে এই উৎসবের নাম দেয়া হয় ‘ফেট ডে লা মিউজিক’। যার অর্থ ‘বিশ্ব জুড়ে সংগীতের দিন’। ১৯৮২ সালে বিশেষ এই সংগীত উৎসবের দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সংগীতের সুরে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ইতিবাচক চিন্তা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিয়ে সবার সাথে মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ