পরিচ্ছন্ন শহর মানেই বাসযোগ্য শহর। নগরের প্রতিটি কোণে যদি পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে, তা শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না– মানুষের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশও রক্ষা করে। আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা এখন একান্ত জরুরি। চট্টগ্রাম নগরী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমের ফলে তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। একটি পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি।
নগরবাসীর জন্য পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নিয়মিতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত নগরায়ণের ফলে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম নগরে কঠিন, প্লাস্টিক, চিকিৎসা, নির্মাণসহ নানা ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যা জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আধুনিক প্রযুক্তি, পরিকল্পিত কৌশল এবং সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো– বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ ও পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন এবং চার হাজারেরও বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত রয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ভ্যান, কম্প্যাক্টর, স্কিড লোডারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। হালিশহর, খুলশী ও পতেঙ্গা এলাকায় নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন এবং আরেফিন নগরে পরিচালিত হচ্ছে দুটি ল্যান্ডফিল।
এতকিছুর পরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় অনেক এলাকায় খাল-নালায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ। শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য পৃথককরণ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলেও কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা)-এর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় ৪১টি ওয়ার্ডে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এই উদ্যোগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ লক্ষ্যে সোর্স সেগরিগেশন সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বাসাবাড়িতে প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করে রাখার গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য পরিচালিত হচ্ছে স্কুল ক্যাম্পেইন। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা শুরু থেকেই পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিখছে।
তরুণ প্রজন্মকেও এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক তরুণদের অংশগ্রহণে বর্জ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে, তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্যাম্পেইনে অংশ নিচ্ছেন এবং সচেতন আচরণ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে সেফটি গিয়ার, হ্যান্ড গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম, যা তাদের কাজের ঝুঁকি কমিয়ে আনছে এবং কাজের দক্ষতা বাড়াচ্ছে। এতে সার্বিকভাবে পরিবেশের মানোন্নয়ন ঘটছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে– এসটিএস নির্মাণ, শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ, ‘ওয়েস্ট-টু-এনার্জি’ প্রকল্প এবং বর্জ্য থেকে জৈব সার ও জ্বালানি উৎপাদনের মতো টেকসই উদ্যোগ। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিবেশবান্ধব, বাসযোগ্য ও সবুজ চট্টগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এই লক্ষ্য অর্জনে নাগরিকদের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ সবচেয়ে জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, নাগরিকদের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে গড়ে তুলতে পারব একটি পরিচ্ছন্ন, টেকসই ও উন্নত চট্টগ্রাম। v 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত বর জ য স ক বর জ য লক ষ য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে বিলে শাপলা তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বিলে শাপলা তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মিজানুর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার উপাদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া মিজানুর রহমান ওই এলাকার মৃত শিক্ষক আবদুর রহিমের মেজ ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামের ছোট ভাই। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা মিজানুর মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে মিজানুর রহমান বাড়ির পাশে একটি বিলে শাপলা তুলতে যান। এরপর তিনি আর ফেরেননি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্বজনেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তাঁর হদিস পাননি। এরপর খুঁজতে খুঁজতে গতকাল রাত ৯টায় ওই বিলের পানিতে তাঁর ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্বজনেরা। পরে তাঁরা মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

মিজানুর রহমানের বড় ভাই সফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছিলেন। খুব সহজ-সরল স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। সাঁতার জানতেন না। ভাইয়ের মৃত্যুতে পরিবার গভীর শোকাহত।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহাম্মদ বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা মামলা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ