রুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন বিমার আওতায়
Published: 22nd, June 2025 GMT
প্রথমবারের মতো নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা–সুবিধার আওতায় এনেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। এ নিয়ে আজ রোববার বিকেলে রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সেমিনারকক্ষে বিমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাতে রুয়েটের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই বিমার আওতায় বছরে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যসেবা এবং মৃত্যুতে ২ লাখ টাকার জীবনবিমা–সুবিধা পাবেন শিক্ষার্থীরা।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, রুয়েট প্রকৌশল শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আজকের এই স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা–সুবিধা সে রকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই চুক্তি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীবান্ধব এমন আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে রুয়েট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহম্মদ চৌধুরী এবং জেনিথ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন) ও কোম্পানির সচিব আবদুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো.
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহম্মদ চৌধুরী, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মো. ফয়ছাল আরেফিন, একই দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মুক্তার হোসেন এবং জেনিথ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন) আবদুর রহমান, হেড অব গ্রুপ ইনস্যুরেন্স মো. আনোয়ার হোসেন সরকারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধি, বিভিন্ন ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
রুয়েটের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকা কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা বিমাসুবিধা পাবেন। আবার হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা বিমাসুবিধা মিলবে। একজন শিক্ষার্থী বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে বছরে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বিমাসুবিধা পাবেন। এ ছাড়া জীবনবিমার আওতায় থাকা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলে তাঁর পরিবার এককালীন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবে। প্রিমিয়াম জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বিমা দাবি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবেন। ফলে শিক্ষার্থীদের বিমাসুবিধা পেতে জটিলতা কমবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ম র আওত য় ইনস য র ন স জ বনব ম র চ লক ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বরকতের শত্রু অহংকার
আমরা প্রায়ই নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠি। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ‘তুমি অবশ্যই সফল হবে’, এমন উক্তি আমাদের মধ্যে উৎসাহ জাগায়। কিন্তু এই বিশ্বাস আমাদের সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে।
‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।
অহংকারের ক্ষতিআমাদের সম্ভাবনা কী? সাফল্যের রূপ কেমন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকায় আমরা নিজেরাই সাফল্যের সংজ্ঞা তৈরি করি। আমি ভাবি, আমি একটি বড় কোম্পানির সিইও হতে পারি এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। অথবা আমার কোনো বন্ধু, যাকে আমি নিজের চেয়ে কম প্রতিভাবান মনে করি, একটি বিশাল ব্যবসা শুরু করেছে। তাই আমি ভাবি, আমি তার চেয়ে ভালো করতে পারি।
অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।রায়ান হলিডেযখন আমি নিজেকে মহান মনে করি, আমি সেই অনুযায়ী কাজ করি। সামান্য অনৈতিক পথও বেছে নিতে পারি। কারণ, আমি ভাবি, এটি আমার ‘নির্ধারিত’ সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে রাতে কাজের ভেতর সর্বদা ডুবে থাকা আমাদের ন্যায্য মনে হয়। এটি আমাদের স্বার্থপর করে তোলে।
আরও পড়ুনসম্পদের অহংকার ধ্বংস করে কারুনকে১৯ মার্চ ২০২৪রায়ান হলিডে অহংকারের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের নিজেদের গুরুত্বের ওপর অতিরিক্ত জোর দেয়। এটি আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, আমাদের চাহিদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা এতটাই ব্যতিক্রমী যে নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’
ইসলামি শিক্ষায় নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারণা আছে। আবু আলিয়া সুরখিল ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘এটা হলো আত্মার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সংগ্রাম, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রলোভন, শারীরিক আকাঙ্ক্ষা ও শয়তানের প্রবঞ্চনা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।’
নফস আল–আম্মারা বা ‘মন্দের দিকে প্ররোচনাকারী আত্মা’ আমাদের সম্পদ, খ্যাতি, ক্ষমতা বা শারীরিক তৃপ্তির দিকে ঠেলে দেয়, যা আমাদের আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।
‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াইঅহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সাফল্যের ধারণাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দুনিয়ার সাফল্যের পরিবর্তে আখিরাতের পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া এবং ফলাফলের পরিবর্তে কাজের প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেওয়া। ‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।
আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫নিজেকে কিছুর ‘প্রাপ্য’ মনে করার ধারণা থেকে মুক্ত হতে হবে। নবীজি (সা.), যিনি সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রাপ্য ছিলেন, তিনিও বলেছেন, ‘সঠিক পথ অনুসরণ করো, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করো এবং সুসংবাদ দাও। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ শুধু তার কাজের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবিরা বললেন, ‘এমনকি আপনিও নন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)?’ নবীজি বললেন, ‘এমনকি আমিও নয়, যদি না আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত দান করেন। জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা ছোট হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৮)
‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।এই হাদিসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর সামনে আমাদের অবস্থান স্বীকার করা, মানে আল্লাহ আমাদের রিজিক দান করেন, কিন্তু তিনি আমাদের কিছু দিতে বাধ্য নন। দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়ার ওপর মনোযোগ দেওয়া—জান্নাতে প্রবেশ একটি অসাধারণ অর্জন, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ছোট ও নিয়মিত কাজ। এটি আমাদের তাড়াহুড়ার সংস্কৃতি থেকে বরকতের সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যায়।
কর্মক্ষেত্রে বরকতের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না নিয়ে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখা, দক্ষতা বাড়িয়ে অন্যদের সেবা করা এবং নিজের পরিবর্তে অন্যদের অবদানের কৃতিত্ব দেওয়া এর অন্যতম উপায় হতে পারে।
সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম
আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪