সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতা ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ
Published: 23rd, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিরাজুল আলম খানের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বিকেল ৭টা নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস জুইস সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদ নিউইয়র্ক শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক সভার সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব শাহাব উদ্দীন। সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস, লিগ্যাল কনসালটেন্ট মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা.
সভার আলোচনা পর্বে সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তিনি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে অনার্স পাশ করলেও সেই সময় কনভেকশোনাল মুভমেন্টে যোগদানের কারণে কারাবরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় মাস্টার্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি তার। তা সত্ত্বেও রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছিল অসীম লেখাপড়া। সে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতেন। তিনি ছিলেন আজীবন দেশের মানুষ ও জনগণের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণপুরুষ।
রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বক্তরা বলেন, ১৯৬৩ সালের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের পর তিনি আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেননি। কিন্তু মূল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সারাজীবন ছিলেন একজন অগ্রসর রাষ্ট্রচিন্তক। যে কারণেই ’৬৩ সালেই আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমদকে নিয়ে স্বাধীন বাংলার নিউক্লিয়াস গঠন করেন। তাদের নেতৃত্বেই ’৬৬ সালের ছয় দফা ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলেন। তাদের চিন্তার কারণেই পাকিস্তানের আপোষকামী ধারা থেকে বেরিয়ে বাঙ্গালীর মুক্তির জন্য আলাদা রাষ্ট্র করেন। সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ ইত্যাদি সংযোজন করে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে ‘ডিকলারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ ঘোষণা করা হয়েছিল।
তারা বলেন, স্বাধীনতার পর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বৃটিশ ভাবধারার দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সেদিন সিরাজুল আলম খানসহ তরুণ মেধাবী ও সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা না শুনে বৃটিশ পাকিস্তানের সেই প্রশাসন দিয়েই দেশ শাসন শুরু করলেন। বরং যারা এই প্রস্তাবনা করেন তারাই বঙ্গবন্ধুর বিরাগভাজন হন। যে কারণেই ৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের জন্ম হয়। পথহারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ এবং জাসদের অস্থির রাজনীতির কারণই স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পরে ও দেশকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সিঙ্গাপুর ,মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের পরে স্বাধীন হওয়ার পর ও অনেক উন্নত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস, ন্যূনতম প্রতিষ্ঠা হয়নি। দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
সিরাজুল আলম খানের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে বক্তরা বলেন, রাষ্ট্রচিন্তক সিরাজুল আলম খান জাতির স্বার্থে বিভিন্ন সময় লেখনীর মাধ্যমে জাতির দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বুঝতে অসুবিধে অথবা হীনমন্যতার কারণে তার চিন্তাধারাকে আমলে নেওয়া হয়নি। তা নাহলে নব্বইয়ের দশকে প্রথম দিকে তিনি, রাষ্ট্র কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থা সম্বলিত ১৪ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জাতীয় সংসদে দু’কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট (৩০০+২০০ মোট ৫০০ আসনের)। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য; সংবিধানের ৭০ ধারাসহ কালাকানুন বাতিল করে সংবিধান সংস্কার; বাংলাদেশকে ৭-৯ টি প্রদেশে বিভক্ত করে আমলাতন্ত্র মুক্ত, নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা দেশ পরিচালনা করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, স্থায়ী জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন, মাইক্রো ক্রেডিট এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবনা পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ছিল। এর মধ্যে কিছু দফা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঐক্যমত্য কমিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
সিরাজুল আলম খানের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করার দাবি জানিয়ে বক্তরা বলেন, মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তার জীবনেও ভুল থাকতে পারে। কিন্তু আমরা জাতির স্বার্থে ভালো দিকগুলো আলোচনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারি। তিনি জীবনে কখনো ভোগের রাজনীতি করেননি। জাতির সামনে ত্যাগের রাজনীতির এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। ঢাকার সাধারণ একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মৃত্যু, কোনো বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পরিবার-উত্তরাধিকার কিছুই রেখে যাননি। তার অছিয়ত অনুযায়ী কোনো শোকসভা নয়, পুষ্পমাল্য বা শহীদ মিনারে লাশের ডিসপ্লে নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনারও চাননি। শুধু মায়ের একটা সাদা শাড়ি দিয়ে মুড়ে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কবরের পাশে যেন পুতে দেওয়া হয়। তাই হয়েছে। এইসব ক্ষণজন্মা মানুষের ইতিহাস আমাদের স্কুল, কলেজ, পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা একান্ত জরুরি। তবেই আগামী প্রজন্ম খাঁটি দেশপ্রেমিক হয়ে গড়ে উঠবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স মরণসভ স র জ ল আলম খ ন য ক তর ষ ট র স র জ ল আলম খ ন র ম হ ম মদ র জন ত র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী এপস্টেইনের বাড়িতে এবার পাওয়া গেল সৌদি যুবরাজের ছবি
কুখ্যাত শিশু যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের নিউইয়র্ক নগরের বাড়িতে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি ছবি পাওয়া গেছে। এই ছবি নিয়ে অনলাইনে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন ওই ঝড় উসকে দিয়েছে। প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক নগরে জেফরি এপস্টেইনের প্রাসাদতুল্য বাসভবনের ভেতরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ফ্রেম করা ছবি পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রয়াত এপস্টেইনের ম্যানহাটানের সাততলা বাড়ির ভেতরের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
শিশুদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে হওয়া মামলায় ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এপস্টেইন। তাঁর বিচারকাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের একটি কারাগার থেকে এপস্টেইনের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। পরে বিচার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন।
এক শিশুকে যৌনকর্মের জন্য পাচার করার অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় ২০০৮ সালের দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এপস্টেইন। কিন্তু বিতর্কিত একটি সাজা হ্রাস আইনের অধীনে তাঁকে মাত্র ১৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।এপস্টেইনের বাড়ির ভেতরের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, তাঁর শয়নকক্ষ ও সংলগ্ন কক্ষে বসানো রয়েছে নজরদারি ক্যামেরা। বাড়ির ভেতরে রয়েছে স্টাফ করা প্রাণীর দেহ, উসকানিমূলক শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য।
ভবনের ভেতরে সৌদি যুবরাজের ছবি থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
যদিও অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এতে মোটেও অবাক হননি বলে মন্তব্য করেছেন। একজন তাঁর মন্তব্যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আরেকটি ছবির প্রসঙ্গ টানেন, যে ছবিতে জর্জ আরেফ নাদেরের সঙ্গে সৌদি যুবরাজকে দেখা যায়।
জেফরি এপস্টেইনের বাড়িতে সাজিয়ে রাখা ছবিতে তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে দেখা যাচ্ছে