আরাকান আর্মির বাধায় সাগরে যেতে ভয় টেকনাফের জেলেদের
Published: 23rd, June 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরায় বাধা দেওয়া, নৌযান নিয়ে যাওয়া ও মাছ লুট করার অভিযোগ উঠছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে ৯ দিন ধরে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন কক্সবাজারের টেকনাফের বেশির ভাগ জেলে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অলস পড়ে রয়েছে চার শতাধিক মাছ ধরার নৌযান। জেলে, নৌযানের মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
১৩ জুন গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে টেকনাফের তিনটি মাছ ধরার নৌযান অস্ত্রের মুখে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। জেলেদের দাবি, ওই তিন নৌযানে থাকা মাছ, জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রী লুট করেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এরপর নৌযান তিনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সময় আরও কয়েকটি ট্রলারকেও ধাওয়া করে আরাকান আর্মি। এ ঘটনার পরদিন ১৪ জুন থেকে জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পার্শ্ববর্তী সাগর উপকূলে ছোট আকারের কিছু নৌকা মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। এসব নৌকার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
‘কোনো কারণ ছাড়া বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরতে যেতে বাধা দিচ্ছে আরাকান আর্মি। ট্রলারে লুটপাট করা হচ্ছ। তাই টেকনাফের চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই’সাজেদ আহমদ, সভাপতি, টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতিটেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়া বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরতে যেতে বাধা দিচ্ছে আরাকান আর্মি। ট্রলারে লুটপাট করা হচ্ছ। তাই টেকনাফের চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
গতকাল রোববার বিকেলে টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালিয়া ঘাট ও শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়াঘাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নৌঘাটগুলোতে সারি বেঁধে নোঙর করা হয়েছে মাছ ধরার নৌযান। ঘাটে জেলেদের পরিচিত ভিড়ও নেই। কয়েকজন শ্রমিক নৌযান পাহারা দিচ্ছেন। আর কিছু জেলেকে জাল মেরামত করতে দেখা যায়। কায়ুকখালিয়া ঘাটে কথা হয় হাবিবুর রহমান ও আবদুল আজিজ নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এখন সাগরে ইলিশ ধরার মৌসুম। কিন্তু মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বাধার মুখে তাঁরা মাছ ধরতে পারছেন না। সাগরে মাছ ধরায় সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আরাকান আর্মির এমন তৎপরতায় টেকনাফের অধিকাংশ জেলে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়া ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে মাছ ধরার নৌযান। গত শনিবার তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র ব ম ছ ধরত
এছাড়াও পড়ুন:
এক নীতির বাংলাদেশ হবে, বিদেশি কোনো প্রভু থাকবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই বাংলাদেশ হবে এক নীতির বাংলাদেশ। সবার আগে বাংলাদেশ। বিদেশি কোনো প্রভু থাকবে না, বন্ধু থাকবে। এই বাংলাদেশ তাবেদারমুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিজয় র্যালি-পূর্ব সমাবেশে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজধানী ঢাকায় এই ‘বিজয় র্যালি’ করেছে বিএনপি। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই ঐক্য হবে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য হবে আমাদের শক্তি। এই শক্তিকে সমুন্নত রেখে এই জাতিকে শীর্ষ উচ্চতায় নিয়ে যাব। সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যাব। আমাদের শক্তি হবে আমাদের ঐক্য।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে তাঁরা কোনো বিভেদ চান না। যারা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তারা বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি না। যারা নির্বাচনের বিপক্ষে কথা বলছে, তারা বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি না। যারা ঐক্য ভঙ্গের চেষ্টা করছে, তারা বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি না। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে, গণতন্ত্রের সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কারের সঙ্গে সবাই মিলে এগিয়ে যেতে হবে। এই রাষ্ট্রকে পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধি ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে।
শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যখনই দেশে গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা হয়েছে, তখনই জনগণ তা প্রতিহত করেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যার পক্ষে ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, ‘অতি দ্রুত আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করবে বলে আশা করছি।’ তবে নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধী শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলেও মনে করেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে যেন কেউ ষড়যন্ত্র না করতে পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই ঘোষণাপত্রে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস। সমাবেশে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নাম না থাকার বিষয়টি তাঁকে পীড়া দিয়েছে। এরপরও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কারণে স্বাগত জানান তিনি।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর সহযোগিতার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে, মাথা নত করেনি।
র্যালি-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে দোদুল্যমানতা কেটে গেছে: সালাহউদ্দিন আহমদ১৯ ঘণ্টা আগে