পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে এসে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আক্কাস আলী ভুঁইয়া।

রবিবার (২২ জুন) রাতে দেবীগঞ্জ পৌরসভার সবুজপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থান মাঠে পৌর জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এক সহযোগী সমাবেশে তিনি জামায়াতের সহযোগী ফরম পূরণ করে দলটিতে যোগ দেন। 

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও আক্কাস আলী ভুঁইয়ার যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তার সঙ্গে এ সময় আরো ২০ থেকে ৩০ জন ব্যক্তি দলটির সহযোগী ফরম পূরণ করেন বলে জানানো হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের শুভেচ্ছা পোস্টার

শরীয়তপুরে ছাত্রলীগের তাজিমের ‘চমকপ্রদ ঘূর্ণি’

জামায়াতে যোগ দেওয়া আক্কাস আলী ভুঁইয়া সর্বশেষ দেবীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত দেবীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

জামায়াতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আক্কাস আলী ভুঁইয়া বলেন, “আমি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি, আদর্শ ও কর্মকাণ্ড ভালো লাগায় আমি এখন জামায়াতে যোগ দিয়েছি।”

আক্কাস আলী ভূঁইয়ার দল বদলের বিষয়টি নিয়ে বিএনপির অবস্থান অস্পষ্ট। দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল গণি বসুনিয়া বলেন, “তিনি (আক্কাস আলী ভুঁইয়া) জামায়াতে গেছেন কিনা আমি জানি না। তবে, তিনি বিএনপি করতেন, এটা সত্য।”

দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসেন বলেন, “আক্কাস আলী ভুঁইয়া কিছুদিন আগে জামায়াতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। গতকাল রবিবার তার এলাকায় সহযোগী সমাবেশ ছিল, সেখানে তিনি ফরম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন।”

রবিবার  রাতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুল বাছেদ সভাপতিত্বে করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পঞ্চগড়-২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মুহাম্মদ সুফিউল্লাহ সুফি। প্রধান আলোচক ছিলেন পঞ্চগড় জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আবুল বাশার বসুনিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, পৌর জামায়াতের আমির শেখ ফরিদ হাসানসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বকে যুদ্ধক্ষেত্র বানাতে চান ট্রাম্প

গতকালই তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ‘কূটনৈতিক সমাধান’ চাইছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ আক্রমণে যোগ দিয়েছে। শনিবার দেশটি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যা ট্রাম্প ‘অত্যন্ত সফল আক্রমণ’ বলে গর্বভরে তুলে ধরেছেন। 

ইসরায়েলি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমর্থক নয় এমন যে কারও কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট– ইরানের ওপর মার্কিন আক্রমণের ফল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভোগ করবেন। তিনিই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে এক ঢিলে সব পাখি মারছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নেতানিয়াহু দেশে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগে নিজের জড়িত থাকার বিষয়ও ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন গণহত্যায় খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্যের খোঁজে বের হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। 
ইরানের সঙ্গে কূটনীতির বিনিময়ে ট্রাম্পের প্রাথমিক জেদ স্বাভাবিকভাবেই নেতানিয়াহুর হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এক রাতে বোমা হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি এখন বদলে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এরই মধ্য দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে।  

নিশ্চিতভাবেই ইরান দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের কোপদৃষ্টিতে আছে। বহু মার্কিন প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা দেশটিতে বোমা হামলার অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় বেশি প্রকাশ্যে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশও করেছেন। যেমন জাতিসংঘের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে অল্পকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ২০১৫ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত পাতায় লিখেছিলেন– ‘ইরানের বোমা থামাতে ইরানে বোমা ফেলুন।’

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী এমন স্পষ্ট আহ্বানের ক্ষেত্রেও মার্কিন পত্রিকার সম্পাদকরা চোখ রাঙাননি। এতে বোঝা যায়, মার্কিন সমাজ ও সংবাদমাধ্যমে ইরান কতটা ভয়াবহভাবে নিন্দিত। স্মরণ করুন, ২০০২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ইরানকে তার কুখ্যাত বাণী ‘অশুভ অক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চোখের একটি অবিরাম কাঁটা হলেও ইরানের আচরণ স্পষ্টতই অন্যান্য আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের ভূমিকার তুলনায় কম ‘মন্দ’ ছিল। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। ইরান বর্তমানে কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করে কোনো গণহত্যায় অর্থায়ন করছে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েক দশক ধরে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বোমা হামলা এবং মানুষকে বিরক্ত করছে না। লাতিন আমেরিকায় ডানপন্থি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে শুরু করে ভিয়েতনামে গণহত্যা চালানো পর্যন্ত নানা অপকর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র গোপন পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তিধর রাষ্ট্র ইরান নয়, বরং ইসরায়েল। এই দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তাদের স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘ সুরক্ষা ব্যবস্থার কখনও অনুমোদন করেনি।

যারা ইরান সরকারের ‘নিপীড়নমূলক’ আচরণের কথা বলে ইরানের ওপর হামলার প্রশংসা করেন, তাদের উচিত ইরানে নিপীড়নকে ইন্ধন দেওয়ার মার্কিন ট্র্যাক রেকর্ড পুনর্বিবেচনা করা। ১৯৫৩ সালে সিআইএ ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিল, যা নিপীড়নবাদী শাহের দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বের পথ প্রশস্ত করেছিল।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ‘ইতিহাস বদলে দেবে’, যেন বিশ্বকে আরও যুদ্ধক্ষেত্র করে তুলতে এগুলো নতুন কিছু। আর যখন মার্কিন মিডিয়া একটি সার্বভৌম জাতির ওপর অবৈধ আক্রমণকে ন্যায্যতা দেওয়ায় তৎপর, তখন দুটি ভারী পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের পারমাণবিক ‘হুমকি’র নজরদারির ভণ্ডামি অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 
স্বতঃস্ফূর্ত ও উন্মত্ত আচরণের জন্য গর্বিত ট্রাম্প পরে কী করবেন, তা যে কেউ অনুমান করতে পারেন। তবে নিশ্চিত থাকুন, যা-ই ঘটুক না কেন, অস্ত্রশিল্পে শিগগিরই দুর্ভিক্ষ আসবে না। 

বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার কলামিস্ট; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ