বেতন বাড়ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও
Published: 23rd, June 2025 GMT
আগামী জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমপিওভু্ক্ত শিক্ষক–কর্মচারী, যৌথ বাহিনীর নির্দেশনাবলীর আওতায় বেতন–ভাতা ও পেনশনভোগী এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসকে বিশেষ সুবিধার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এসব প্রজ্ঞাপন জারি করে। আগামী ১ জুলাই থেকে যা কার্যকর হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড.
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, জাতীয় বেতনকাঠামোর আওতাভুক্ত সরকারি (বেসামরিক), স্ব-শাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের (পুনঃস্থাপনকৃত) জন্য এ বিশেষ সুবিধা কার্যকর হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানো হলে ১১তম গ্রেডের বেতন বাড়ে ৮৭৫ টাকা। ১২তম গ্রেডের বাড়ে ৬৯৫ টাকা। এভাবে ১৩তম গ্রেডের ৬৫০ টাকা, ১৪তম গ্রেডের ৫৩০ টাকা, ১৫তম গ্রেডের ৪৫৫ টাকা, ১৬তম গ্রেডের ৩৯৫ টাকা, ১৭তম গ্রেডের ৩৫০ টাকা, ১৮তম গ্রেডের ৩২০ টাকা, ১৯ তম গ্রেডের ২৭৫ টাকা ও ২০ তম গ্রেডের ২৩৭ টাকা বেতন বাড়ে। এসব কর্মচারীদের বেতন অনেক কম হওয়ায় সরকারের প্রজ্ঞাপনে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর ঘোষণা ছিল।
তবে রোববার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের সময় তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকেই আজ সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা হয়।
এদিকে রোববার পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপন করে করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদেরও বিশেষ সুবিধার আওতায় আনা হয়। এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মাদ্রাসা ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাতীয় বেতনস্কেলের তুলনীয় গ্রেড-১ ও তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত গ্রেডভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের আগামী ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত গ্রেডভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের ১৫ শতাংশ বেতন বাড়বে। তবে বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা হবে।
আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যৌথ বাহিনী নির্দেশাবলীর (জেএসআই) আওতায় বেতন–ভাতা গ্রহণকারী এবং পেনশনভোগীরা এ সুবিধা পাবেন। এ সুবিধা হবে জেএসআই–১/২০১৬ অনুযায়ী ওয়ারেন্ট অফিসার বা সমতূল্য পদবী হতে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের সব সদস্য ও ‘ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তারা মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং সার্জেন্ট ও সমতুল্য পদবীর ও তদনিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ। তবে বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা হবে। পেনশন পুনঃস্থাপনকৃত কর্মচারীরা সরকার হতে পেনশন গ্রহণকারী যাদের মাসিক পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৯ টাকা ও তদূর্ধ্ব তাদের ১০ শতাংশ এবং যাদের মাসিক পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকা বা এর কম তাদের ১৫ শতাংশ বাড়বে। তবে বিশেষ এ সুবিধা সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকা হবে।
এছাড়া জুজিশিয়াল সার্ভিসকে ও সুবিধার আওতায় এনে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬ এর আওতায় বেতন–ভাতা গ্রহণকারী এবং পেনশনভোগকারীরা মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা পাবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র চ কর প নশনভ গ র আওত য় সরক র প নশন
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ মাস পরেও জুলাই শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কেন
কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে? উত্তর খুঁজতে গেলে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে ১৫ মাস পরও। একেক জায়গায় একেক রকম হিসাব। সরকার হিসাব দিচ্ছে একরকম; সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে আসছে ভিন্ন রকম। আবার নানা দল ও সংগঠনের কাছ থেকে আসছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দমন–পীড়নে রক্তাক্ত এক অধ্যায় পেরিয়ে তা গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ৩৬ দিন আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের।
এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের জুলাই শহীদ এবং আহত ব্যক্তিদের জুলাই যোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়। গত জানুয়ারিতে জুলাই শহীদদের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তখন সংখ্যাটি ছিল ৮৩৪। এরপর জুন মাসে আরও ১০ জনের নাম যুক্ত হলে জুলাই শহীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪৪। তাঁদের তালিকার গেজেটও প্রকাশিত হয়।
এরপর আগস্ট মাসে শহীদের তালিকা থেকে আটজনের নাম বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, তালিকায় চারজনের নাম দুইবার এসেছে। আর বাকি চারজন সরাসরি জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ফলে সরকারি গেজেট অনুযায়ী জুলাই শহীদের সংখ্যা এখন ৮৩৬।
এই সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনে অংশ না নিয়েও অনেকে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে শহীদের তালিকায় থাকা ৫২ জন সংজ্ঞা অনুযায়ী এই তালিকায় পড়েন না বলে বেরিয়ে আসে প্রথম আলোর এক অনুসন্ধানে। এ বিষয়ে তথ্য এখনো যাচাই করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সবকিছুকে এমন হিসাবের বাইরে রাখার এই প্রবণতার কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাতে পুরো জাতিকে ভুগতে হয়।আনু মুহাম্মদ, সাবেব অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়এত দিনেও জুলাই শহীদের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ রয়েছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায় দিচ্ছেন জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দ্রোহযাত্রায় নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল। এত দিনেও কেন এটা পরিষ্কার হলো না, তা বোধগম্য নয়। এর আগেও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা করা হয়নি, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ঠিকমতো হয়নি। সবকিছুকে এমন হিসাবের বাইরে রাখার এই প্রবণতার কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাতে পুরো জাতিকে ভুগতে হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য কী বলছে
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের জন্য গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। এটি সরকার অনুমোদিত অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবা ও জনকল্যাণমূলক বেসরকারি সংস্থা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ফাউন্ডেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান অধিদপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলছেন, তাঁদের তথ্য অনুযায়ী জুলাই শহীদের সংখ্যা ৮৩৬। এ সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও ১ হাজার ৪০০ জন হবে না।ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের হোম পেজে শহীদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৮২০ জনের বেশি। আর ওয়েবসাইটে শহীদের যে তালিকা রয়েছে, সেখানে ৮৪৫ জনের নাম রয়েছে।
অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামের একটি সংগঠন। তাদের প্রকাশিত তালিকায় শহীদের সংখ্যা ৯১৪ জন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ৬০০ জনের বেশি শহীদের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে বলেও সে সময় দাবি করেছিল সংগঠনটি।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ছয়বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। ওয়েবসাইটে থাকা ভাষণের লিখিত কপি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সেখানে জুলাই শহীদের সংখ্যা কোথাও হাজার, কোথাও দেড় হাজার আবার কোথাও হাজার হাজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র–শ্রমিক–জনতার শহীদি মৃত্যু হয়।’ ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তির সংখ্যা ‘হাজার হাজার’ বলে উল্লেখ করেন।
এ বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে জুলাইতে শহীদ ও আহত ‘হাজারো’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই একই ভাষণে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনের বরাতে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হওয়ার তথ্য উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুনজমির বিরোধে খুন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু তাঁরা জুলাই শহীদ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫গত ৩০ জুন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি জানাতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা শহীদ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৪ বলে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ জুলাই শহীদের সংখ্যা সহস্রাধিক উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ সহস্রাধিক নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়।’
আবার গত ৫ মে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জুলাই শহীদের সংখ্যা ২০০০ জন বলেন। কয়েকজন উপদেষ্টা এই সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ বলেও বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোরও হিসাব আলাদা
জুলাই শহীদের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। কয়েকটি দলের উদ্যোগে শহীদের তালিকাও করা হয়েছে।
‘২য় স্বাধীনতায় শহীদ যারা’ শিরোনামে জুলাই শহীদদের নিয়ে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী। ওই গ্রন্থে সারা দেশের ৭১৬ জন শহীদের নাম দেওয়া আছে; যদিও গ্রন্থের ভূমিকায় বলা হয়েছে, এই সংখ্যা আরও দীর্ঘ হবে। গত ১৫ জুলাই দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
জুলাই সনদের খসড়ায় শহীদের সংখ্যা ‘প্রায় এক হাজার’ লেখায় গত আগস্ট মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে আপত্তি তুলেছিলেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ হাজার ৪০০ মানুষ এই অভ্যুত্থানের সময়ে শহীদ হয়েছেন। এ পরিসংখ্যান আমাদের সবার জানা। সে ক্ষেত্রে এক বছর ধরে সরকার যে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে, তার একটি ছাপ আমরা এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে দেখতে পেলাম।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য হিসাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সংখ্যার ভিন্নতা নিয়ে গত আগস্ট মাসে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে বলি, সেই তালিকা হওয়া উচিত ১৪ শতাধিক । কিন্তু তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এই তালিকা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলেছে, এক হাজারের বেশি। কোনো কোনো হিসাবমতে ৭০০ জনের কথা বলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সেই তালিকাটা এখনো সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে পারিনি।’
কী আছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে
জুলাই শহীদের সংখ্যা হিসেবে সবেচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘১ হাজার ৪০০’ এবং ‘২ হাজারের বেশি’। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ সংখ্যাটি জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের বরাতে ব্যবহার করা হয়। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভসংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৪০০ জনে।
শহীদের সংখ্যা বাড়ছে না কেন
উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১ হাজার ৪০০ এবং ২ হাজারের বেশি শহীদ—এমন বক্তব্য দিলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, এখনো শহীদের সংখ্যা ৮৩৬। যে ৫২ জনের বিষয়ে যাচাই–বাছাই চলছে, তাতে কিছু বাদ যেতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র আরও বলেছে, ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে কিছু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি পরিবার তাদের স্বজনদের বলে দাবি করেছে। ডিএনএ মিলে গেলে শহীদের সংখ্যা কিছু বাড়তে পারে। তবে তা জাতিসংঘের বলা ১ হাজার ৪০০ হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাঁদের কাছে এখনো যে তথ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী জুলাই শহীদের সংখ্যা ৮৩৬। বিভিন্ন জেলার প্রশাসন ও হাসপাতালের তথ্য নিয়ে তাঁরা ওই তালিকা করেছেন। এই সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীর কারও নাম তালিকায় রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে তথ্য নেই। তবে জুলাই অভ্যুত্থানসংশ্লিষ্ট মৃত্যু নয়, এমন চারজনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।