বর্ষাকাল চলছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রকৃতি হয়ে উঠেছে সজীব। এই সময়ে গরমের তীব্রতাও থাকে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় শরীরে ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার ত্বকও সারাক্ষণ চিটচিটে হয়ে থাকে। এতে অস্বস্তি বাড়ে। বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক আরও শুকিয়ে যায়। গরম, আর্দ্রতা ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার কারণে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া থাকে সংক্রমণের ভয়। এ কারণে এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ত্বকে ফলের ব্যবহার হতে পারে দারুণ সমাধান।
সময়টা এখন নানা ধরনের মৌসুমি ফলের। শরীরে পুষ্টির জোগান দিতে এসব ফলের জুড়ি নেই। ফল শুধু শরীর নয়, যত্ন নেয় ত্বকেরও। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করে ফল। এ কারণে শুধু খেলেই হবে না। ত্বকে লাগালেও উপকার পাবেন। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য ব্যবহার করেন। এতে অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন ফলের নানা ধরনের ফেসপ্যাক। ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান ত্বককে গভীর থেকে সতেজ ও নিখুঁত রাখতে সাহায্য করে।
ফল দিয়ে ঘরে বসে কীভাবে ত্বকের চর্চা করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জারা’স বিউটি লাউঞ্জের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি।
আম: ফেসপ্যাক হিসেবে আম দারুণ কাজ করে। এ ফলের তৈরি ফেসপ্যাক ত্বক উজ্জ্বল ও মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে।
এক টুকরো পাকা আম চটকে নিন। তারপর এতে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ দুধ মেশান। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে ইন্সট্যান্ট একটি গ্লো এনে দেবে। পাকা আম দিয়ে ত্বকের জন্য স্ক্রাবও তৈরি করতে পারেন। এ জন্য আমের পাল্পে পরিমাণমতো চালের গুঁড়া/চিনি মেশান এবং আলতো হাতে মুখে হালকাভাবে ঘষে স্ক্রাব করুন। ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মরা কোষগুলো দূর হবে এবং ত্বক হবে মসৃণ।
জাম: এ ফল শুধু খেতে সুস্বাদুই নয়, বরং রূপচর্চায়ও খুব উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং ট্যানিন, যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
জামে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমায় এবং ত্বকের দাগ হালকা করে। কয়েকটি পাকা জাম চটকে রস বের করে নিন। তারপর এর সঙ্গে এক চা চামচ বেসন বা মুলতানি মাটি মেশান। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অয়েলি (তৈলাক্ত) স্কিনের জন্য জাম ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে। ফলে মুখ থাকে ফ্রেশ ও পরিষ্কার। জাম চটকে রসের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মেশান। তারপর মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন– দেখবেন ত্বকের তৈলাক্ত ভাবটা কমেছে অনেকটাই। তবে যাদের সেনসিটিভ স্কিন তারা অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেবেন ব্যবহারের আগে। ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল করতে জামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। জামের রসের সঙ্গে দই, সামান্য মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। তারপর মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
লিচু: লিচুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে এবং ঔজ্জ্বল্য আনে।
৩-৪টি পাকা লিচুর পাল্প নিন (বিচি বাদ দিয়ে)। এতে এক চা চামচ মধু মেশান, তারপর মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ মিশ্রণ ত্বকের রোদে পোড়া দাগ কমাতে সাহায্য করবে এবং ত্বকে একটা গ্লো এনে দেয়। ব্রণ প্রতিরোধেও লিচু বেশ উপকারী। লিচুর রসের সঙ্গে সামান্য গোলাপজল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একটি কটন প্যাড দিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে ব্রণের প্রদাহ কমে যাবে। বয়সের ছাপ রোধেও লিচু বেশ কার্যকর। এ জন্য লিচুর পাল্প, দই, এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানান। মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত রেখে দিন। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের অ্যান্টি এজিং এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করবে।
ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতেও লিচু ব্যবহার করতে পারেন। লিচু চটকে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মেশান। তারপর শুকনো ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ময়েশ্চার করবে এবং ত্বক কোমল ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করবে।
জামরুল: ত্বক হাইড্রেট ও সতেজ রাখতে জামরুলের জুড়ি নেই। জামরুলে পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকায় ত্বক হাইড্রেট থাকে ও ত্বককে ফ্রেশ রাখে।
জামরুল ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে রস বের করুন। এ রসটুকু কটন প্যাডে ভিজিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ ত্বক হাইড্রেটেড এবং নরম রাখতে সাহায্য করবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টোনার হিসেবে জামরুল প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্টের মতো কাজ করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
জামরুলের রস আর গোলাপজল মিশিয়ে একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন। দিনে দু’বার টোনার হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রণ ও র্যাশ কমাতেও জামরুল বেশ উপকারী। জামরুলের রসে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এ মিশ্রণটি ব্রণের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করবে।
ভিটামিন সিসমৃদ্ধ জামরুল ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এবং কালো দাগ হালকা করে। জামরুল চটকে এর পাল্পের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানান। তারপর ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে রোদে পোড়া ভাবটা কমতে সাহায্য করবে এবং ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসবে।
কাঁঠাল: কাঁঠালের রস মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। চোখের নিচে কালচে ভাব দূর করতে কাঁঠালের রস লাগাতে পারেন।
ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কাঁঠালের বীজ ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য ২ টেবিল চামচ কাঁঠালের বীজ বাটা, ১ টেবিল চামচ দুধ, ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু’দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। v
মডেল: সারিকা তাবাসসুম; মেকওভার: জারা’স বিউটি লাউঞ্জ; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফল ম ন ট পর ধ য় ১৫ ম ন ট পর ১৫ ২০ ম ন ট স হ য য করব ব যবহ র কর স হ য য কর ত বক র ব দ র করত য় ত বক ল র রস ত বক হ দ র কর উপক র ত রপর
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ জীবনে সন্তানেরাও ছেড়ে চলে যান আলোচিত এই নায়িকার
রাজ কাপুর আর যশ চোপড়ার ছবিতে ছিলেন তিনি; অভিনয় করেছেন রাজেশ খান্না, দেব আনন্দদের মতো তারকাদের সঙ্গে। অথচ ব্যক্তিজীবনে তিনি হয়ে পড়েছিলেন অবহেলিত—সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর একাই কাটিয়েছেন জীবনের শেষ ১২ বছর।
অভিনেত্রী অচলা সচদেবের চলচ্চিত্রজীবন যেন সিনেমার মতোই। দেব আনন্দ, রাজ কাপুর, যশ চোপড়া, রাজেশ খান্না—বলিউডের সেরা–সেরাদের সঙ্গে একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-তে কাজলের দাদির চরিত্রে তাঁকেই দেখা গিয়েছিল। আবার ১৯৬৫ সালের ‘ওয়াক্ত’ ছবির অমর গান ‘আয়ে মেরি জোহরা জবীন’-এর নায়িকাও ছিলেন অচলা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক অভিনেত্রীর মতোই তাঁকেও মা-দাদির চরিত্রে সীমাবদ্ধ হতে হয়েছিল, তবু ২০০০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত কাজ চালিয়ে গেছেন—করণ জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ছিল তাঁর শেষ দিকের আলোচিত কাজগুলোর একটি।
পঞ্চাশের দশকে শুরু হওয়া অচলার ছিল দীর্ঘ ক্যারিয়ার; কিন্তু শেষ জীবনটা ভীষণ কষ্টে কাটাতে হয় তাঁকে। পুনের নিজস্ব দুই কামরার ফ্ল্যাটে একাই থেকেছেন এক দশকেরও বেশি সময়, পাশে ছিলেন কেবল এক সেবিকা। দুই সন্তানের কেউই তাঁর খোঁজ নিতেন না। মৃত্যুর আগে নিজের বাড়িটি দান করে দেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। বলিউডের জন্য জীবনের বহু বছর দেওয়া অনেক শিল্পীর মতো তিনিও ছিলেন অবহেলার শিকার।
অচলা সচদেব। আইএমডিবি