ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকার পরও তাদের এই ব্যর্থতা একটি বড় ঘটনা। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েল ব্যাপক আগ্রাসী ভূমিকায় ছিল। পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট হয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হন। ইসরায়েলের কৌশল কেন ব্যর্থ হলো, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে আলজাজিরা।
ইসরায়েল ১১ দিন ধরে ইরানে অবিরাম বোমাবর্ষণ করে। এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরানের বিরুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হয়েছেন। এই দাবি যে ঠিক ছিল না, পরবর্তী সময়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। ইসরায়েল দুটি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করে। এক.
ইসরায়েল ইরানের সরকার পরিবর্তন দূরের কথা, টলাতেও পারেনি। তবে এই লক্ষ্যে নেতানিয়াহুর কিছু পরিকল্পনা সফল হয়েছে। তা হলো, ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা। এটা ইরানের জন্য গুরুতর ক্ষতি। ইসরায়েল শত্রু দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, সেটাও ঘটেনি। ইরানে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ইসরায়েল বিপ্লবী গার্ড কর্পসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের হত্যা করেছে। এর ফল হয়েছে উল্টো। ইরানি জনগণ আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সরকারের প্রতি আরও বেশি করে সংহতি প্রকাশ করেছে। ইসরায়েল মনে করেছিল, হামলা অব্যাহত রাখলে ইরানি জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবে। কিন্তু ইরানিরা শুধু সরকার নয়, পুরো দেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েল এভিন কারাগারে হামলা করে। এই কারগারটিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বন্দি। হামলার মুখে ইরান বন্দিদের আরও গোপন জায়গায় সরিয়ে নেয়। সরকারি দমনপীড়নের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহু জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কৌশলও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবিতে হামলা করাও ইসরায়েলের জন্য বুমেরাং হয়।
ইসরায়েল গাজায় হামলা চলমান রেখে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য নিন্দা কুড়িয়েছে আগেই। আর ইরানে হামলা দখলদার দেশটিকে আরও সমর্থনহীন করে তুলেছে। এটা ইসরায়েলের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। মার্কিন বি-২ স্টিলথ বিমান ইরানে হামলা চালিয়ে নিজ দেশে ফিরে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করে তারা ইসরায়েলের পাশে সরাসরি দাঁড়ায়নি। ইউরোপের নেতারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও নেতানিয়াহুর লক্ষ্যকে তারা স্বাগত জানাননি।
বিশ্বনেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরানকে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে হবে। ইরান তা মেনে নিয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গেছে, যা মূলত ইসরায়েলের পরাজয় ও ইরানের জন্য বিজয়।
ইরানে ব্যাপক ও ইচ্ছামতো বাধাহীন হামলা চালাতে পেরেছে ইসরায়েল। তবে ইরানি হামলায় ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্র তেল আবিব ও হাইফা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বারবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের শহরগুলোতে হামলে পড়ে। নিহতের সংখ্যা কম হলেও বিরাট সংখ্যক মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হয়। ইরানের হামলায় ইসরায়েল প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্রের ঘাটতির মুখে পড়ে। অর্থনীতি দ্রুত নেমে যায়। বিপরীত দিকে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দমে যায়নি, ভেঙে পড়েনি।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তেহরানের জন্য আরেকটি বিজয় ছিল। তাছাড়া ইরান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হুঙ্কার দিয়েছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, যা বিশ্ব দরবারে দেশটির মাথা সমুন্নত করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র ন র জন য লক ষ য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।