২০২৪ সালের কিছু সময়জুড়ে অস্থিরতা ছিল। আবার ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহও কম ছিল। এসবের প্রভাব পড়েছে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প (সিএমএসইএমই) খাতের ঋণ বিতরণে। করোনার পর গত বছর বিতরণ কমেছে। ২০২৪ সালে সিএমএসএমইতে বিতরণ হয়েছে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় যা ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বা সাড়ে ৬ শতাংশ কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কম খরচে বেশি কর্মসংস্থান হয় ছোট ও মাঝারিশিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে। যে কারণে উন্নয়নশীল দেশে সব সময়ই এসব খাতে বিতরণে জোর দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বেশ আগ থেকে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়ে আসছে। চলতি বছরের এক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের অন্তত ২৭ শতাংশ সিএমএসএমইতে বিতরণের নির্দেশ দেওয়া। বিনা জামানতে নারীদের জন্য ২৫ লাখ টাকা এবং অন্য ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে বলা হয়েছে। করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেই এ ধরনের ব্যবসায়ীর অন্য ব্যবসাসংক্রান্ত সনদ দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, ২০২৪ সালের বড় একটি সময়জুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ছিল। গত বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়। যে কারণে হয়তো ঋণ বিতরণ কমে গেছে। কেননা, যে কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগ হয় খুব কম। বেসরকারি খাতের সার্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে নেমেছে। আরও কিছুদিন হয়তো এরকম থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণভাবে সব সময়ই সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ বেড়ে থাকে। তবে গত বছর কমেছে। এর আগে করোনার মধ্যে লকডাউনের কারণে অধিকাংশ কাজে স্থবিরতা ছিল। ফলে ২০২০ সালে ঋণ বিতরণ কমে যায়। ওই বছর বিতরণ নেমে ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকায়। আগের বছর ২০১৯ সালে যেখানে বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে বিতরণ কমে ১৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমইতে মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৩১৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। ২০২২ সালে বিতরণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ঋণ বিতরণ বেড়েছিল ৮ হাজার ৮২৩ টাকা; যা ৪ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল ৩৫ হাজার ৬১ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০২১ সালে সিএমএসএমইতে মোট বিতরণ হয়েছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় যা বেশি ছিল ৩২ হাজার ৩২ কোটি টাকা বা প্রায় ২১ শতাংশ।
বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ২০২৪ সালে বিভিন্ন ধরনে অস্থিরতা ছিল। যে কারণে ঋণ চাহিদা ছিল কম। আবার দু’একটি ব্যাংক ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এসএমই ঋণে খেলাপি বেশি। এসব কারণে হয়তো কমেছে। এসএমই ঋণ বিতরণ কমার ক্ষেত্রে তারল্য সংকট কোনো কারণ ছিল না বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ বাড়াতে অনেক আগ থেকে নানা নির্দেশনা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ খাতের জন্য কম সুদের বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এসএমই ঋণ ব তরণ ব ড় ২০২৪ স ল ১৪ হ জ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%