চার প্রধান দাবিতে রাজধানী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শুরু করেছে দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’। ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদ্বোধনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’।

রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশের শুরুতে বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনা করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্যরা। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিকেলে কুমিল্লায় পৌঁছান রোডমার্চে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেখানকার টাউন হল মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা জানান, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ফেনী জেলা শহীদ মিনারে গণমিছিল ও বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বন্দরে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।

চারটি প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনা করা, রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগ বাতিল, স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং মার্কিন ও ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে সব অসম চুক্তি বাতিল ও জনসমক্ষে প্রকাশ করা।

রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’ প্রভৃতি স্লোগান।

রোডমার্চ উদ্বোধনী সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এ আকাঙ্ক্ষা হলো আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। ইতিপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এ আকাঙ্ক্ষা হলো আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। রুহিন হোসেন, সাধারণ, সম্পাদক; সিপিবি

রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আহ্বান করছি, অবিলম্বে বন্দর ইজারাসহ রাষ্ট্রবিরোধী করিডর দেওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে। আগামীকালের (আজ শনিবার) পর আর কোনো নতুন কর্মসূচি আসবে না। কিন্তু সরকার যদি এ দায়িত্ব পালন না করে, আগামীকাল সমাবেশে ঘোষণাপাঠের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

রোডমার্চ উদ্বোধনী সমাবেশে অংশ নেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.

মুশতাক হোসেন, গণমুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব এম এম আকাশ, গণমঞ্চের মাসুদ খান, গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা কামাল হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদ) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লিগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ প্রমুখ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘তাঁরা শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’

কুমিল্লায় জনসমাবেশ

রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে পৌঁছান। সেখানে প্রথমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী গান, নাটকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা করে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে জনসমাবেশে বক্তৃতা শুরু হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কুমিল্লা জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দীন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, জাতীয় গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক রজত হুদা, সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের কুমিল্লার সমন্বয়ক শেখ আবদুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমেন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন রোডমার্চের কুমিল্লার জনসভা আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব খায়রুল আনাম রায়হান।

জনসভায় গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ (বিসিএল) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র সমন বয়ক র সদস য কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

সমাবেশে লোক ভাড়া করে বেশি মাথা দেখানো কী ফল দেয়

গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানীতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়ে গেল। এখনো হচ্ছে। বড় বড় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন ‘সদ্যোজাত’ দল—সবাই, এই আন্দোলন মাসে সভা করেছে।

সরকারও পিছিয়ে নেই, তারাও জুলাই সনদ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা করেছে সংসদ ভবনের সামনে। এই মাসটাতে প্রতিটি সভাই জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ—বিভিন্ন অঙ্গীকার ও তথ্যে ভরপুর।

যাঁরা সভাগুলোয় যোগ দিয়েছেন বা যাঁরা অন্যভাবে সভাগুলোর প্রতি নজর রেখেছেন, তাঁদের জন্য এতসব গুরুগম্ভীর তথ্য সম্ভবত মনে রাখা খুব সহজ নয়। তবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জুলাই সনদ নিয়ে নেতারা যা যা বলেছেন, সেগুলো মোটাদাগে সবাই স্মরণ করবেন।

তবে একটা জিনিস সবাই মনে রাখবেন। সেটা হলো ‘হেড কাউন্ট’। কোন দলের সভায় কত লোক হলো, কাদের সভায় রাস্তা কতটুকু উপচে উঠেছিল এবং যানবাহন কতক্ষণ বন্ধ ছিল—এই জিনিসগুলো আলোচনায় এসেছে।

আমাদের রাজনীতিবিদদের দরকার হেড কাউন্ট বা মাথার হিসাব। কারা সভায় কত মাথা আনতে পারলেন, তা দিয়ে জনপ্রিয়তা মাপা হয়ে থাকে। সমাবেশে যত বেশি হেড কাউন্ট, টিভি সংবাদ ও পত্রিকায় জনসভার ছবিও তত ভালো দেখাবে।

তবে জনসভার হেড কাউন্ট দল বিচারে বা জনপ্রিয়তার দৌড়ে যে খুব প্রভাব ফেলে, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রতিটি জনসভায় উপচে পড়া ‘মাথা’ থাকত। কিন্তু জনতার স্বতঃস্ফূর্ত হেড কাউন্টের কাছে তারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি।

জনসভায় হেড কাউন্ট জিনিসটা আমাদের রাজনীতিতে অনেক দিন ধরে চলে আসছে। একাত্তরের আগে দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো বাস পাঠিয়ে ডেমরা, তেজগাঁও থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসত। প্রয়োজন হলে কাঁটাবন বস্তি থেকেও লোক আসত। তাতেই ভরে যেত পল্টন ময়দান। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিবের সভা ভরাতে বাস-ট্রেনের প্রয়োজন হয়নি, মানুষ নিজেদের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিল।

এখন সময় পাল্টে গেছে। সবকিছু এখন ফাইভ স্টারভিত্তিক। দলের কাজকর্ম সব এখন ফাইভ স্টার ভবনে। রাজনৈতিক দলের ইফতার হবে ফাইভ স্টার হোটেলে। নেতাদের গাড়িবহর হবে ১০০টি গাড়িতে। দলের জনসভায় লোক আনানো হবে রেলগাড়িতে।

মাওলানা ভাসানী যখন পল্টনে সভা করতেন, তখন অন্য দলের লোকজনও ওখানে যেত। কারণ, তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা সব সময়ে তুঙ্গে ছিল। তাঁর সভায় ডান দিকে টুপি মাথায় তাঁর ভক্ত ও মুরিদেরা থাকতেন, বাম দিকে লাল ঝান্ডা হাতে বা লাল পট্টি কপালে বেঁধে তাঁর রাজনৈতিক অনুসারীরা বসতেন। দক্ষিণপন্থী-বামপন্থী কোনো হাঙ্গামা হতো না। সবাই মন দিয়ে তাঁর সাম্যের বাণী শুনতেন। মাওলানা ভাসানী হেড কাউন্ট নিয়ে কখনো খুব মাথা ঘামাতেন না, যা ভাবতেন তাই বলতেন, আর যা বলতেন তা-ই করতেন।

এখন সময় পাল্টে গেছে। সবকিছু এখন ফাইভ স্টারভিত্তিক। দলের কাজকর্ম সব এখন ফাইভ স্টার ভবনে। রাজনৈতিক দলের ইফতার হবে ফাইভ স্টার হোটেলে। নেতাদের গাড়িবহর হবে ১০০টি গাড়িতে। দলের জনসভায় লোক আনানো হবে রেলগাড়িতে।

জনসভার জন্যও কোনো সীমারেখা নেই। মাঠ-ময়দান, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল চত্বর সবই বৈধ। রাজনৈতিক দলগুলোর অঢেল টাকা। তার কিছুটা সভা-সমিতিতে হেড কাউন্ট বাড়াতে খরচ হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

১৯ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ উপলক্ষে বাইরে থেকে সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনও গাড়ি ও লঞ্চ ভাড়া করে বাইরে থেকে লোক এনে ইদানীং ঢাকায় সভা করেছে। আমির আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার গাড়ি রিজার্ভ করা হয়েছে।’

আগে ছাত্ররা সভা করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। বটতলায় সমাবেশ করাটাই ছিল তাদের গর্ব। একুশে যেত শহীদ মিনারে। এখন ছাত্রদের দলগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে পাল্লা দিচ্ছে। বাস-ট্রেন ভাড়া করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ছাত্র’ আনছে তাদের ‘ছাত্রসভায়’ যোগ দিতে।

জনসমর্থন দেখাতে রাজধানীতে ৩ জুলাই ছাত্রদল ও এনসিপির পৃথক সমাবেশ হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, জনসভায় হেড কাউন্ট বাড়াতে ছাত্রদল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২০ বগির বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।

আরও পড়ুনসমাবেশটি আগের মতো ছুটির দিনেও হতে পারতো২৮ মে ২০২৫

প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা আনতে আট জোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার। এসব ট্রেনে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্র-জনতাকে ৫ আগস্ট ঢাকায় নিয়ে আসার কর্মসূচি নেওয়া হয়। আট জোড়া ট্রেনের জন্য প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও দেশের সব টিভি চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে, তবু বাইরের থেকে লোক আনতে হয়েছে। কারণ, সরকারের প্রয়োজন হেড কাউন্ট।

রাজনীতির আরেকটা হেড কাউন্টের বর্ণনা আশা করি এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কিছু রাজনৈতিক দলের সভায় এই হেড কাউন্ট সবার চোখে পড়বে—স্টেজের ব্যানারে একটা ফ্যামিলি ট্রি-এর ছবি। বিএনপির ব্যানারে হেড কাউন্ট থাকে তিন—জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের ব্যানারে হেড কাউন্ট দুই—শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা; তৃতীয়জন তারা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি।

এক শ বছর পরে, এই দল দুটির ব্যানারে ফ্যামিলি ট্রি আরও বড় হবে, হেড কাউন্টও স্বভাবত আরও অনেক বাড়বে!

আজকাল আমাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সবাই পুরোমাত্রায় ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছেন। নেতাদের আগের দিনের মতো ঢাকার বাইরে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সভা-সমিতি করতে দেখা যায় না। সেটাও একটা কারণ হতে পারে ঢাকার সভার হেড কাউন্ট বাড়ানোর। নেতারা যাবেন কেন জনগণের কাছে, জনগণকেই আসতে হবে তাঁদের কাছে! জনগণ হলো রাজনৈতিক দলের হেড কাউন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাঁর রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে, তা বলতে পারবেন কি না, সন্দেহ আছে। কারণ, ওদের ব্যানারে কোনো ফ্যামিলি ট্রি নেই।

একক হেড কাউন্টের বিষয়টাও এখন বলা যেতে পারে। শেখ হাসিনার সময় টিভি স্ক্রিনের ওপরের বাঁ দিকের কোনায় শেখ মুজিবের একটা মাথার ছবি প্রায়ই দেখা যেত বছরের প্রায় দশটা মাস। স্বাধীনতা দিবস, ৭ মার্চ, মৃত্যুদিবস, জন্মদিবস, বিজয় দিবস, পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগমন দিবস ইত্যাদি সব দিবসে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান থাকত। এই একক হেড কাউন্টটা শেখ মুজিবের মর্যাদা বাড়াতে কোনো সাহায্য করেনি।

এখন ইন্টারনেট-যুগে আমাদের শহরে গ্রামে প্রায় প্রতিটি জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ আছে। আমাদের জাতীয় দলের একজন বড় নেতা লন্ডনে বসে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশে তাঁর সমর্থক ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি কথা বলছেন। ঢাকার জনসভায়ও তিনি ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনছাত্রদের নতুন দল কি নতুন রাজনীতি হাজির করতে পারবে২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুতরাং সশরীর হাজির হয়ে দলের হেড কাউন্ট বাড়াতে হবে, এই যুগে এ ধারণাটা অচল। হেড কাউন্ট বাড়াতে সভাস্থল থেকে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। যার যত সংযোগ এবং প্রতি সংযোগের স্ক্রিনে যত লোক দেখছেন, তার তত হেড কাউন্ট।

রাজনৈতিক দলগুলো ভাড়া করা গাড়িতে বাইরের থেকে লোকজন নিয়ে এসে আরও বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। যদি কোনো অর্বাচীন প্রশ্ন করে বসেন—বাইরের থাকে আনা লোকগুলোও কি ভাড়াটে? আড়াই কোটি লোকের শহরে হেড কাউন্ট দেখাতে, তাদের শহরের বাইরের থেকে লোক আনতে হবে কেন?

আজকাল আমাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সবাই পুরোমাত্রায় ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছেন। নেতাদের আগের দিনের মতো ঢাকার বাইরে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সভা-সমিতি করতে দেখা যায় না। সেটাও একটা কারণ হতে পারে ঢাকার সভার হেড কাউন্ট বাড়ানোর। নেতারা যাবেন কেন জনগণের কাছে, জনগণকেই আসতে হবে তাঁদের কাছে! জনগণ হলো রাজনৈতিক দলের হেড কাউন্ট।

সালেহ উদ্দিন আহমদ লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ই-মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সমাবেশে লোক ভাড়া করে বেশি মাথা দেখানো কী ফল দেয়