‘আশা করব সরকার বন্দর ইজারা দেওয়া থেকে পিছু হটবে’
Published: 28th, June 2025 GMT
চার প্রধান দাবিতে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ ফেনীতে পৌঁছেছে। দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আয়োজিত রোডমার্চ গতকাল শুক্রবার রাতে ফেনী পৌঁছায়। এরপর আজ শনিবার সকালে সেখানে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর হাজারি রোড মোড় থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিলটি মহীপাল হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শেষ হয়েছে। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’।
রোডমার্চ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেওয়া, স্টারলিংক ও করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করা, আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রকাশ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়।
রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ প্রভৃতি স্লোগান।
সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) রোডমার্চ কর্মসূচির চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে, রাখাইনে করিডর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে এবং মার্কিন-ভারতসহ ‘সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশগুলোর’ সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ করতে হবে ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে।
ফেনী শহরে সকালে মিছিল করে দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল জাতিগত হত্যা চালাচ্ছে ও দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত—এমন একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রতিনিধিরা। দলটির বার্ষিক সম্মেলনে প্রস্তাবটির ওপর এই ভোটাভুটি হয়। এ ফলাফলকে লেবার সম্মেলনের ইতিহাসে এক বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অভূতপূর্ব এ সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনই মেনে নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত হত্যা চালাচ্ছে। সম্মেলনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটিতে অস্ত্র বিক্রিতে পূর্ণ অবরোধ আরোপের বিষয়েও সমর্থন জানানো হয়।
গত রোববার লিভারপুলে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা নানা বিষয়ে প্রস্তাবে ভোট দিচ্ছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিনিধিরা আরেকটি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, যা লেবারের প্রচলিত ইসরায়েল নীতিকে সমর্থন করছিল বলে ধারণা করা হয়।প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালক বেন জামাল বলেন, এটি সরকারের জন্য বড় পরাজয়। লেবার পার্টি অবশেষে স্বীকার করেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিহত্যা চালাচ্ছে। এ ঐতিহাসিক ভোট এখন সরকারের নীতিতে পরিণত হওয়া উচিত—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা ও দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির ওপর অবরোধ জারি করতে হবে।
ট্রান্সপোর্ট স্যালারিড ইউনিয়নের (টিএসএসএ) সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম এসলামদুস্ত বলেন, ‘আজ লেবার আন্দোলন ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। লেবার নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট বার্তা গেছে—আমরা জাতিহত্যার অপরাধে নীরব থাকব না।’
গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিনিধিরা আরেকটি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, যা লেবারের প্রচলিত ইসরায়েল নীতিকে সমর্থন করছিল বলে ধারণা করা হয়।
আগের দিন গত রোববার যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার ওই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলেন। সেখানে ভুলভাবে দাবি করা হয়েছিল, ১৬ সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ‘জাতিহত্যার ঝুঁকি’ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিহত্যা চালিয়েছে ও এখনো চালাচ্ছে।
এটি সরকারের জন্য বড় পরাজয়। লেবার পার্টি অবশেষে স্বীকার করেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিহত্যা চালাচ্ছে। এ ঐতিহাসিক ভোট এখন সরকারের নীতিতে পরিণত হওয়া উচিত—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা ও দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির ওপর অবরোধ জারি করতে হবে।বেন জামাল, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালকমিডল ইস্ট আইয়ের তথ্যমতে, যে জরুরি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফ্যালকনার রোববার বক্তব্য দিয়েছিলেন, প্রস্তাবটি বরং বড় ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন সমর্থন পেয়েছে।
মিডল ইস্ট আই যে প্রস্তাবের কপি দেখেছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘সম্মেলন জাতিসংঘ অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করছে এবং লেবার সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে তার হাতে থাকা সব যুক্তিসংগত উপায় ব্যবহার করতে।’
আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রস্তাবে আরও দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মানতে চাপ দিতে সরকারকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে এবং যুক্তরাজ্যের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে জাতিহত্যায় সহযোগিতা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ঘটনা লেবার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সরকারের নীতির প্রতি অসন্তুষ্টির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রিটেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে জাতিহত্যা বলে ঘোষণা করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।ব্রিটিশ প্যালেস্টিনিয়ান কমিটির পরিচালক সারা হুসেইনি বলেন, লেবার নেতৃত্বকে এখন নিজেদের দলের সদস্য, জাতিসংঘ, জাতিহত্যা বিশেষজ্ঞ ও অসংখ্য মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বীকার করতে হবে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জাতিহত্যা চালাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের এ অপরাধে সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে।
স্টারমার সরকারের ওপর চাপ
প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় গাজায় জাতিহত্যা নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
আজ লেবার আন্দোলন ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। লেবার নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট বার্তা গেছে, আমরা জাতিহত্যার অপরাধে নীরব থাকব না।মারিয়াম এসলামদুস্ত, ট্রান্সপোর্ট স্যালারিড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকএ ঘটনা লেবার কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সরকারের নীতির প্রতি অসন্তুষ্টির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রিটেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে জাতিহত্যা বলে ঘোষণা করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি–সংক্রান্ত ৩৫০টি লাইসেন্সের মধ্যে ৩০টি স্থগিত করেছিল। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের অস্ত্র গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভঙ্গের কাজে ব্যবহার হতে পারে।
তবে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশের লাইসেন্স নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়। এই যুদ্ধবিমান সরাসরি গাজায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, লেবার পার্টির ৭২ শতাংশ ভোটার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের মধ্যে একের পর এক কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ দুই দেশ দীর্ঘদিনের মিত্র। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য সরকার দেশটিতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র মেলায় ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ব্রিটেনের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সিদ্ধান্তকে ‘হামাসকে দেওয়া পুরস্কার’ বলে মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুনপশ্চিমা নেতারা কি মুখ রক্ষা করতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫তবে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ গত সপ্তাহেই ব্রিটেনে যান ও ডাউনিং স্ট্রিটে স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে হারজগ বলেন, তিনি স্টারমারের সঙ্গে একদিকে বিতর্ক করেছেন, অন্যদিকে কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন। স্টারমারকে তিনি ইসরায়েলের মিত্র আখ্যা দেন।
আরও পড়ুনইসরায়েল ভ্রমণে না যেতে বলেছে যুক্তরাজ্য, দূতাবাসের কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা১৫ জুন ২০২৫আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতির গুরুত্ব কতটা২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫