চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম সালেহা বেগম (৪০)। গতকাল শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদ্‌রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

আজ শনিবার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো ২৪ ঘণ্টার সবশেষ প্রতিবেদনে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। সালেহা বেগমের বাড়ি জেলার মিরসরাই উপজেলায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। এ নিয়ে করোনায় এ মাসে চট্টগ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল সাতজনে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন উপজেলার বাসিন্দা। নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের করোনা শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামে চলতি মাসে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩০ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও এক শিশু।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ন য়

এছাড়াও পড়ুন:

শৈশবের স্মৃতি হাতড়াতে রাজশাহীতে কবিপুত্রের একদিন

১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে রাজশাহীতে এলেন কবি বন্দে আলী মিয়ার ছেলে জাহিদুল ইসলাম। সঙ্গে আনেন বোনের মেয়েকে। দেখাবেন রাজশাহীতে কোথায় তাঁদের বাড়ি ছিল। কোথায় তাঁরা বড় হয়েছেন। মুখস্থ পথে হেঁটে ঠিক বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন; কিন্তু বাড়ির সামনে এসেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন। তাঁদের সেই স্মৃতিঘেরা বাড়ি ভেঙে সেখানে উঠেছে বহুতল ভবন। ভাগনি বুঝতে পারলেন, মামার ঠিকানা হারিয়ে গেছে। বলল, ‘মামা, চলো বাড়ি যাই।’ কিন্তু জাহিদুল ইসলাম সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন।

কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৬৫ সাল থেকে মৃত্যুর (১৯৭৯) আগপর্যন্ত রাজশাহীতে ছিলেন। কাজ করতেন রাজশাহী বেতারের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে। সেই সুবাদে সরকারি বাসা পেয়েছিলেন। নগরের কাজীহাটা এলাকায় ছিল সেই বাসা। দীর্ঘদিন রাজশাহী থাকায় কবি ও তাঁর সন্তানদের অনেক স্মৃতি ছিল সেখানে। সেই স্মৃতি হাতড়াতে সান্তাহার থেকে ছুটে এসেছিলেন কবিপুত্র জাহিদুল ইসলাম। ডাকনাম চাঁদ। বয়স ৭১। তাঁরা আট ভাই ও চার বোনের মধ্যে এখন তিন ভাই ও তিন বোন বেঁচে আছেন।

সেদিন জাহিদুল ইসলামের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ হয়েছিল এ প্রতিবেদকের। রিকশায় উঠেই তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বেতারের সামনে যাও।’ কাজীহাটা এলাকায় বেতারের সামনে রিকশা থামল। নেমেই হনহন করে উত্তর দিকের একটি গলিতে হেঁটে গেলেন। কিছুদূর গিয়েই থমকে দাঁড়ালেন। এদিক-ওদিক তাকাতে থাকলেন। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। মাঝবয়সী একজন লোককে থামিয়ে জানতে চাইলেন, স্থানীয় কি না? লোকটি মাথা নাড়াতেই জানতে চাইলেন, এখানে কবি বন্দে আলী মিয়ার বাড়ি ছিল না? লোকটি এবার জোরে মাথা নেড়ে আঙুল তুলে দেখালেন, ওই যে ওখানে বাড়ি ছিল। সেই বাড়ি ভেঙে এই দালান উঠেছে।

জাহিদুল এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। একটু সময় নিয়ে লোকটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে ফারুক ভাইয়ের বাড়ি কোনটা? কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটি জানালেন, ফারুক ভাই তো মারা গেছেন। এবার জাহিদুল পাড়ার দু-একজন মেয়ের নাম বললেন। লোকটি তাঁদেরও চিনতে পারলেন। কেউ কেউ মারা গেছেন এবং অন্যরা কোথায় আছেন বলে দিলেন। তাঁর কাছ থেকেই জানতে পারলেন, ফারুক ভাইয়ের ছোট ভাইয়ের চেম্বার পাশের একটি ভবনে।

অগত্যা সেখানে ছুটে গেলেন জাহিদুল ইসলাম। তখন ভেতরে টুপি পরে এক ভদ্রলোক বসে ছিলেন। ভেতরে ঢুকেই জাহিদুল বলে উঠলেন, ‘বাবু ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন।’ লোকটি ইতস্তত করতে লাগলেন। এবার আরেকটু পরিষ্কার করার জন্য বললেন, ‘ভাই আমার নাম চাঁদ, আমি চাঁদ।’ তখন লোকটি আমতা-আমতা করে বললেন, ‘ও আচ্ছা, বসেন বসেন।’ তাঁকে চিনতে পেরেছেন দেখে অতি উৎফুল্ল হয়ে জাহিদুল নাম ধরে তাঁর অন্য সব ভাইবোনের কথা জানতে চাইলেন। লোকটি সংক্ষেপে কথাবার্তার উত্তর দিলেন। এমন সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য কবিপুত্র বোধ হয় প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি হেসে হেসে আরও অনেক কথা বলতে চাইলেন। এবার লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ভাই আর সময় দিতে পারব না। নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে।’

বের হওয়ার পর ভাগনি আর একদণ্ডও দাঁড়াতে চাইল না। বারবার বলছিল, ‘মামা রাত হয়ে যাবে। চলো, ফিরে যাই।’ কিন্তু জাহিদুল ততই গোঁ ধরছিলেন, ব্যাপারটা এমন—যেন তাঁর পরিচিত অনেক মানুষ এখানে আছেন। তিনি প্রমাণ করেই ছাড়বেন। মেয়েটার হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে নগরের রাজপাড়া থানা সড়কে নিয়ে গেলেন। তিনি কী করতে চাচ্ছেন, তা দেখতে প্রতিবেদকও পেছনে পেছনে যান। সড়কের বাঁ পাশে একটি গলির মুখে ঢুকে বললেন, ‘এই বাড়ি, এই বাড়িই হবে।’ নিশ্চিত হতে পাশের দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা রফিক ভাইয়ের বাড়ি না?’ দোকানি নিশ্চিত করলেন।

রফিক কবিপুত্রের সহপাঠী ছিলেন। দরজায় কড়া নাড়ার পর খুলে দিলেন তাঁর (রফিক) ছোট ভাই। তাঁকে নিজের পরিচয় দিলেন। ভদ্রলোক বেশ চিনতে পারলেন। ভেতরে নিয়ে বসালেন। সেখানে কিছুক্ষণ শৈশবের গল্প চলল। তাঁর গলা শুনতে পেয়ে ভেতর থেকে একজন নারী বলে উঠলেন, ‘এ লোকটা এখনো বেঁচে আছে?’

সেখান থেকে বেরিয়ে বোনের মেয়েটি আর দাঁড়াতেই চায় না। তাদের বিদায় দিতে দিতে মনে হলো। এই সেই কবি বন্দে আলী মিয়া (১৯০৬-৭৯) যাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতীর চর’ (১৯৩২) পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘তোমার ময়নামতীর চর কাব্যখানিতে পদ্মাচরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। পড়ে বিশেষ আনন্দ পেয়েছি।...পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকটস্পর্শ বাংলা ভাষায় আর কোনো কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপনবিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি।’

আজ ২৭ জুন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার ও শিশুসাহিত্যিক বন্দে আলী মিয়ার ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীতে বিকেল সোয়া পাঁচটায় কবিকে নিয়ে হয় বিশেষ অনুষ্ঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাকৃবিতে বহিষ্কারসহ ৫ ছাত্রীর শাস্তি নিয়ে যা জানা গেল
  • দৌলতপুরে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১
  • রিকশাচালকদের জন্য প্রশিক্ষক তৈরিতে ব্যয় ৫৪ লাখ টাকা
  • হামজাকে দেখেই তাঁদের বাংলাদেশি হওয়ার স্বপ্ন জাগে
  • মাগুরায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, জেলের মরদেহ উদ্ধার
  • পুরো প্রজন্ম ধ্বংস করতে একজন মাদকাসক্তই যথেষ্ট : মাও. ফেরদাউস 
  • করোনাভাইরাস: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু এক, আক্রান্ত ১০
  • ঘরে অসুস্থ বাবা আর ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে শুটিং করা নাটকটি প্রশংসা পাচ্ছে: শায়লা সাথী
  • শৈশবের স্মৃতি হাতড়াতে রাজশাহীতে কবিপুত্রের একদিন