দুই মেরুতে শান্ত-আমিনুল, ভবিষ্যৎ কী?
Published: 28th, June 2025 GMT
শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট দলের প্রথম ১০ জনের সেদিন ফ্লাইট ছিল। টিকিট করা ছিল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তরও। কিন্তু, গণমাধ্যমে কথা বলবেন বলে, পরের দিনের ফ্লাইট বেছে নেন।
দুই টেস্টের জন্য দল যাবে শ্রীলঙ্কায়। যাওয়ার আগে সিরিজ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে হাজির অধিনায়ক। এর কিছুদিন আগেই বিসিবি তার টেস্ট অধিনায়কত্ব এক বছরের জন্য রিনিউ করে। তাতে বেশ খুশি ছিলেন শান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে তাই বলেছিলেন, ‘‘প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যদি লম্বা সময় পায় তাহলে ভালো। এর আগেও একবার আমি লম্বা সময় পেয়েছিলাম। আবার এক বছরের জন্য দেয়া হয়েছে। যে-ই অধিনায়ক থাকবে তাকে যদি লম্বা সময় তাহলে অধিনায়কের জন্য কাজটা সহজ হয়। বোর্ডের সঙ্গে যেভাবে কথা হয়েছে তাতে খুশি।’’
আরো পড়ুন:
টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন শান্ত
২৫ বছরে ৪৭তম ইনিংস ব্যবধানে হার বাংলাদেশের
কথা প্রসঙ্গেই টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে অধিনায়কত্বের ইস্যুও চলে আসে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব নিজ থেকেই ছেড়ে দিয়েছিলেন গত বছর। কেন? উত্তরটা তার মুখ থেকেই শুনুন, ‘‘টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়াটা…আমি নিজ থেকে বোর্ডকে জানিয়েছি আমি করতে চাচ্ছি না। আমার নিজের ব্যাটিংটায় সময় দিতে চাচ্ছিলাম। আমাদের এতো খেলা হচ্ছে। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি…ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ কম ছিল। নিজের ব্যাটিংয়ে ফোকাস করার জন্যই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছি।’’
সর্বশেষে আসে ওয়ানডে। যেখানে শান্তর অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। পায়ের নিচের মাটিও শক্ত ছিল না। তিনি বলতে বাধ্য হন, ‘‘এখনো জানায়নি, জানাবে ইনশাআল্লাহ।’’
শান্তর সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুঞ্জন ছড়াতে থাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেহেদী হাসান মিরাজকে এরই মধ্যে বেছে নিয়েছে বিসিবি।
শান্ত স্টেডিয়াম পাড়া ত্যাগ করার আগেই নিশ্চিত হয়ে যান ওয়ানডে অধিনায়কত্ব তার কাছে নেই। তিনিও সিদ্ধান্ত নেন, শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজের পরপরই ছাড়বেন টেস্ট অধিনায়কত্ব। এক বছর টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন তা এক সিরিজেই শেষ। যেই ঘোষণা শনিবার কলম্বোতে দিয়েছেন শান্ত।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সব। সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেছেন, ‘‘আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি টেস্ট সংস্করণে আর এই দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি সবাইকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি মনে করি, এটাতে দলের ভালো কিছুই হবে। এই ড্রেসিংরুমে কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিন জন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’’
শান্ত যেখানে তিন অধিনায়ক তত্ত্বে বিশ্বাসী নন, সেখানে বিসিবির ভাবনা তিন অধিনায়কই দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘শান্তর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি। এটা ছিল বোর্ডের সমন্বিত সিদ্ধান্ত। এখন আমরা প্রতিটি ফরম্যাটে ভিন্ন অধিনায়ক চাই। লিটন টি-টোয়েন্টিতে, শান্ত টেস্টে, মিরাজ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন—এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পরিবর্তন। বোর্ডের একজন প্রতিনিধি শান্তকে জানিয়ে দেন এবং তিনি ভালোভাবেই নিয়েছেন।’’
জানা যায়, শান্তর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই বোর্ড ৫০ ওভারের ফরম্যাট থেকে শান্তকে সরিয়ে দিয়েছে। যা মোটেও ভালোভাবে নেননি তিনি। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তীতে যেভাবে পুরো প্রক্রিয়া বোর্ডের তরফ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেখানেও ছিল চূড়ান্ত গলদ।
অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত মূলত ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে ‘অপমানজনকভাবে’ সরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায়ই। সেই সঙ্গে নতুন এক প্রশ্নও উঠছে, বোর্ডের স্বচ্ছতা ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের যোগাযোগ প্রক্রিয়া নিয়ে।
১৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্ত, বাংলাদেশের হয়ে যা পঞ্চম সর্বোচ্চ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে চারটি জয়। জয়ের সাফল্যে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা টেস্ট অধিনায়ক। আপাতত পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক কে হচ্ছেন সেসব আলোচনা থেমে যাবে। বছরের শেষ দিকে নভেম্বরের আগে কোনো টেস্ট নেই বাংলাদেশের। আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে বিসিবি বেছে নেবে পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ন তর র জন য ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।