আইএমএফের ঋণের অর্থ এল, রিজার্ভ বাড়ল
Published: 28th, June 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির অর্থ ১৩৪ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২৬ জুন বাংলাদেশের হিসাবে এ অর্থ জমা হয়েছে। এর ফলে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সেদিন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। আর ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রবাসীরা বৈধ পথে আয় পাঠানো বাড়িয়েছেন। এই বাড়তি প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সরে এসেছে। ১০ মাস ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার, বাজেট সহায়তা ও ঋণ হিসেবে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেশে আসছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়েছে।
এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার জাপানের ৪২ কোটি ডলার ঋণের অর্থ এসেছে, যা এখন রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান ও ওপেক ফান্ড থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার ঋণ আসবে, যা চলতি মাসের মধ্যে রিজার্ভের হিসাবে যুক্ত হবে। এতে চলতি মাস শেষে মোট রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার আয় বেশি এসেছে। এদিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ। ফলে আমদানি ৫ শতাংশের মতো বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কংগ্রেসে অর্থ বিল নাকচ, সংকটে ট্রাম্প প্রশাসন
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন অর্থবছরের জন্য কংগ্রেসে ব্যয় বরাদ্দ–সংক্রান্ত বিল পাস না হওয়ায় আংশিক শাটডাউনের (অচলাবস্থা) কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এতে সংকটে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অবশ্য এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, অচলাবস্থা এড়াতে আইনপ্রণেতারা বিল পাস না করলে কেন্দ্রীয় সরকারের আরও অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
শাটডাউনে কোন খাতে কতটা কাটছাঁট করা হবে, তার সুস্পষ্ট কোনো রূপরেখা দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩টি বড় সংস্থার মধ্যে ২১টি সংস্থা সাময়িক ছুটিতে পাঠানো কর্মীদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
১৯৮০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫ বার মার্কিন সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে শাটডাউন হয়েছে। তবে আগের শাটডাউনগুলোর তুলনায় এবার বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প সতর্ক করেন, শাটডাউনকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য ‘খারাপ’ হবে।
কখন সরকার শাটডাউনের কবলে পড়েযুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ সরকারি সংস্থার জন্য প্রতিবছর ব্যয়–সংক্রান্ত বিস্তারিত আইন তৈরি করে কংগ্রেস। তবে ১ অক্টোবর অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে বেশির ভাগ সময় তারা এই কাজ শেষ করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত অস্থায়ী ব্যয় বিল পাস করেন আইনপ্রণেতারা, যাতে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য সরকার সচল থাকে এবং তাঁরা আইনটি তৈরির কাজ শেষ করতে পারেন।
এবারের অস্থায়ী ব্যয় বিলের মেয়াদ ছিল স্থানীয় সময় ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু কংগ্রেসে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা বিল পাসের বিষয়ে একমত না হওয়ায় মার্কিন সরকার আংশিক শাটডাউনে পড়েছে। এর অর্থ হলো সরকারের একটি অংশ অর্থ না থাকার কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।
যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বেআংশিক শাটডাউন হলেও অবসর ও প্রতিবন্ধী ভাতা চালু রাখবে সামাজিক সুরক্ষা প্রশাসন। তবে শাটডাউন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ১২ শতাংশ কর্মীকে সাময়িক ছুটিতে পাঠাবে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রচার স্থগিত রাখবে। মেডিকেয়ার ও মেডিকএইড স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অর্থায়নও চালু থাকবে।
মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের শাটডাউন পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি এসএনএপি এবং নারী, শিশু ও নবজাতকদের জন্য বিশেষ সম্পূরক পুষ্টি কর্মসূচি ডব্লিউআইসি শাটডাউনের সময় অর্থের পরিমাণ অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থা (আইআরএস) শাটডাউন–পরবর্তী পাঁচ দিন সব কর্মীকে নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তবে শাটডাউন পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হলে কী হবে, তা জানায়নি তারা।
কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজারের বেশি বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা শাটডাউনের সময় কাজ চালিয়ে যাবে। তবে শাটডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মীরা বেতন পাবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০ লাখ সামরিক কর্মী শাটডাউনের সময় তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এ সময় তাঁরা বেতন পাবেন না। ট্রাম্প যেসব ন্যাশনাল গার্ড সেনাকে বিভিন্ন শহরে মোতায়েন করেছেন, তাঁরাও কাজ চালিয়ে যাবেন। শাটডাউনের আগের চুক্তিগুলো বহাল থাকবে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় নতুন সরঞ্জাম বা সেবা কেনার আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
শাটডাউন চলাকালে কর্মসংস্থান, জিডিপিসহ প্রধান প্রধান মার্কিন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত থাকবে। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসন তাদের ২৪ শতাংশ কর্মীকে সাময়িক ছুটিতে পাঠাবে। সংস্থাটি নতুন ঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং ভবন উন্নয়নের অনুমোদন দেবে না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ব্যবসাগুলো সহায়তার জন্য ঋণ চালু রাখবে। কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার কাছে প্রায় ২৩০ কোটি ডলার দুর্যোগ তহবিল আছে। এর ফলে হারিকেন বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। তবে সংস্থার প্রায় ৪ হাজার কর্মী শাটডাউনের সময় সাময়িক ছুটিতে থাকবেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাবেন।