অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া: জাহিদ হোসেন
Published: 28th, June 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, “অন্তর্বতী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- অন্যায়ের বিচার করা, সংস্কার সাধন করা। তাদের দায়িত্ব জনগণের অধিকার দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। যা দিতে ১০ মাস চলে গেছে।”
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, “আপনারা দেখেছেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা, হাবিবুল আউয়ালরা এখন কী বলছেন। গতকাল আদালতে দাড়িয়ে কথা বলেছেন। জ্ঞানপাপী বলে একটা কথা আছে- যে আমি সব জানি, বুঝতেছি কিন্তু প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছেন না। চৌদ্দ, আটারো এবং চব্বিশসহ সব নির্বাচন ব্লু-প্রিন্টেড করে করা হয়েছে। জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান
গাজীপুরে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষ
রাজনগর সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামি আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাজনগর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গৌছ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দীন মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো.
সমাবেশ শেষে উপজেলার ইউনিয়ন কমিটির ও নির্বাচিত ৫৬৮টি ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি পদে ইংল্যান্ড প্রবাসী নূরুল ইসলাম সেলুন, সম্পাদক পদে আব্বাস আলী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রুপক দেব নির্বচিত হন।
ঢাকা/আজিজ/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র কম ট র সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের লকডাউন, অগ্নিসন্ত্রাস ও ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’
কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচির দিন ঢাকা শহরের অনেক মানুষ বাইরে বের হওয়ার সাহস করেননি। কিছু বিচ্ছিন্ন ককটেল বিস্ফোরণ আর যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা এই ভয়কে আরও ঘনীভূত করে।
এই থমথমে পরিবেশকে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা ‘নীরব বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন; কিন্তু আসলেই কি এটা বিপ্লব? আদতে এটা তো ছিল ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে স্থবিরতা সৃষ্টি, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ দলটি কতটা জনবিচ্ছিন্ন এবং তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু কতটা আসন্ন।
এই ভয়ের বিপরীতে মাত্র এক বছর আগের জুলাই-আগস্ট মাসের স্মৃতি এখনো আমাদের মনে উজ্জ্বল। সেদিন ঢাকার রাজপথ ছিল লোকে লোকারণ্য। দেশের প্রায় সব শহরেও নেমে এসেছিল মানুষ। কোনো দলের ডাকে নয়, কোনো রাজনৈতিক নেতার আহ্বানে নয়, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী আর আপামর জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়।
কোটা সংস্কারের মতো একটি নির্দিষ্ট দাবি থেকে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন অল্প দিনেই রূপান্তরিত হয়েছিল স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ-অভ্যুত্থানে। সেই আন্দোলনে ছিল গণমানুষের শক্তি, সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার তেজ।
জুলাই দেখিয়েছিল, জনগণ রাস্তায় নেমে এলে রাষ্ট্রযন্ত্রও তাকে থামাতে পারে না। সেই গণ–অভ্যুত্থানের দেড় বছর পর ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দেখাল, ভয় দেখিয়ে মানুষকে হয়তো সাময়িকভাবে ঘরে আটকে রাখা যায়, কিন্তু তাদের মন জয় করা যায় না। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার দুটি ভিন্ন মেরু স্পষ্ট যে —একটি গণশক্তির উত্থান, অন্যটি একটি দলের রাজনৈতিক দর্শনের দেউলিয়াত্ব।
‘লকডাউন’ ব্যর্থতার ব্যবচ্ছেদ: ভয় যখন অস্ত্রআওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সবকিছু স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস সত্ত্বেও মানুষ কার্যত ‘ঘরবন্দী’–ই ছিল। গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫টির অধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও অনেক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা জনমনে যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল—স্কুল-কলেজ একরকম বন্ধই ছিল, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে দ্বিধায় ভোগেন এবং সাধারণ মানুষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলে। ঢাকার আশপাশে কিছু এলাকায়ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিকে তাদের কর্মসূচির সাফল্য হিসেবে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জনগণ কি তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরে বসে ছিল, নাকি আগুন–সন্ত্রাসের ভয়ে? উত্তরটি স্পষ্ট। একজন সাধারণ বাসচালককে বলতে দেখলাম, ‘দৈনিক আয়ে আমার পরিবার চলে, কিন্তু আমি আহত হলে বা মারা গেলে আমার সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? তাই গাড়ি বের করিনি।’ যখন একটি রাজনৈতিক দল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে, ভীতি সৃষ্টি করে তাদের কর্মসূচি সফল করতে চায়, তখন বুঝতে হবে মূলধারার, রাজনীতিতে তাদের প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনদ্য উইকে শেখ হাসিনার নিবন্ধ, অস্বীকারের রাজনীতি ও অসত্য চর্চার নমুনা১৪ নভেম্বর ২০২৫এ উল্লাস কি রাজনৈতিক মৃত্যুর উদ্যাপন নয়?ইতালীয় তাত্ত্বিক আন্তোনিও গ্রামশির তত্ত্ব অনুযায়ী, যখন কোনো রাজনৈতিক শক্তির প্রতি জনগণের সম্মতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, তখন টিকে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় ভয় ও নিপীড়ন। ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ গণমানুষের সমর্থন হারিয়ে এখন কেবল ভীতি প্রদর্শনের পথেই হাঁটছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাশকতার অভিযোগে আটক ব্যক্তির অনেকেই ঢাকার বাইরের এবং অর্থের বিনিময়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছিলেন। ডিএমপি কমিশনারের ভাষ্যমতে, ‘অধিকাংশই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা ঢাকায় এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যান।’
টিভি চ্যানেলগুলোর ভিডিও প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর ওপারে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় তাদের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে দেখা গেছে, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র, হাতে ককটেল নিয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। সহিংস মনোভাবের বিষয়টি লুকানোরও প্রয়োজন মনে করেননি সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, এমনকি আওয়ামী মহলের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও তাঁদের নেতা-অ্যাকটিভিস্টদের ফেসবুক পোস্ট থেকেও স্পষ্ট হয় যে এটি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নয়; বরং ভাড়া করা শক্তি দিয়ে আতঙ্ক তৈরির একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই স্পষ্ট করে তোলে।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা কি তাহলে পুলিশের ওপরই সব দায় চাপিয়ে দিলেন০৬ নভেম্বর ২০২৫স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বনাম গণবিরোধী আন্দোলনসারা বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান ছিল তারই এক শক্তিশালী উদাহরণ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেবল সংগঠিত হওয়ার জন্য ব্যবহার করেনি; বরং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের প্রতিটি মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিল।
জুলাইয়ের আন্দোলনের মতো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এ দেশে আগেও নানা ইস্যুতে হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ইস্যুতে ছোট-বড় অনেক স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনই এ দেশে নতুন নয়। বিপরীতে, ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ ছিল একটি শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলীয় নেত্রীর বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা। এই কর্মসূচিতে জনগণের আবেগ বা সমর্থন কোনোটাই ছিল না। মরিয়া হয়ে কর্মসূচি সফল করতে পুরোনো ভিডিও বিকৃতভাবে উপস্থাপন, এআই দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেও এ ‘লকডাউন’ জনভিত্তি পায়নি। জুলাইয়ের আন্দোলন যেখানে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দাঁড়িয়েছিল গুজব আর ভীতি প্রদর্শনের ওপর।
১৩ নভেম্বরের জনশূন্য ঢাকা আসলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। আওয়ামী লীগ আজ এতটাই জনবিচ্ছিন্ন যে ভয় দেখিয়ে নিজেদের কর্মসূচির ‘সাফল্য’ উদ্যাপন করতে হচ্ছে। এই ফাঁকা রাজপথ তাদের বিজয়ের চিহ্ন নয়; বরং রাজনৈতিক মৃত্যুর শোকলিপি।অতীতে সহিংস রাজনীতির ব্যর্থতাসহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধকে কেন্দ্র করে অগ্নিসন্ত্রাসের স্মৃতি এখনো মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। সেই সময়েও সাধারণ মানুষ এ অগ্নিসন্ত্রাসের প্রধান শিকার হয়েছিল।
কিন্তু বিএনপি–জামায়াতের সেই অবরোধ আন্দোলন সফল হয়নি। কারণ, তাতে গণমানুষের সমর্থন ছিল না; বরং সেসময়ের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও ক্ষমতাশালী হতে সাহায্য করেছিল।
শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং নিজেকে স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এভাবে বিরোধী দলের কিছু ভুল রাজনৈতিক কৌশল শেখ হাসিনাকে ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছিল। এরপর আমরা দেখতে পাই পরের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেখানে ভিন্নমতকে দমন করা হতো এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ আজ সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। তারা ভুলে গেছে যে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন করে জনসমর্থন আদায় করা যায় না; বরং তা বুমেরাং হয়ে নিজেদের দিকেই ফিরে আসে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার ভোরে গাজীপুর নগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকায়