কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের ঘটনায় তারকাদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একটি ভিডিও গত শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুলকালাম।
এ ঘটনায় প্রতিবাদে ফুঁসছে বিনোদন অঙ্গনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক তারকারা ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের বিচার দাবি করছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। গত রোববার (২৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে অভিনেত্রী দাবি করেন, তিনি নিজেও এই দেশে নিরাপদ নন। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও তিনি আশাহত হচ্ছেন। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসের শুরুতেই বাঁধন প্রশ্ন তুলে লেখেন, ‘এই দেশে আমি কি নিরাপদ? উত্তরটা সহজ: না। মোটেও না।’ অভিনেত্রী লেখেন, ‘প্রতিদিন এই দেশের মেয়েরা, নারীরা নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি আর অবিচারের শিকার হচ্ছেন। এর পরিবর্তে আমরা কী করি? আমরা সহ্য করি, আমরা প্রতিরোধ করি না। আর কেউ কেউ বেঁচেও থাকে না। কেউ কেউ এই সহিংসতার বলি হয়ে প্রাণ হারান।’ কেউ প্রাণ হারালেই তখন বাকি সবার টনক নড়ে বলে জানান অভিনেত্রী। তখনই হঠাৎ সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। হ্যাশট্যাগ ছড়ায়। তারপর সবকিছু ফিকে হয়ে যায়। আবার আগের মতো চলতে থাকেন সবাই। এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। এটা নতুন কিছু নয়।
এরপর নিজের প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘আমি কতবার কত ধরনের অনলাইন হুমকি পেয়েছি। ঘৃণা, গালিগালাজ, কুৎসা রটানো, হয়রানি—তাতে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? না। কারণ, এই দেশে অনেকেই বিশ্বাস করে, আমি এসব প্রাপ্য। যতক্ষণ না আমি খুন হচ্ছি, ততক্ষণ তারা মনে করবে যে আমাকে হয়রানি করাটা ঠিক আছে।
আমাকে অপমান করা যাবে এবং চেষ্টা করবে চুপ করানোর জন্য।’ রাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা নেই জানিয়ে বাঁধন বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি। জুলাই বিপ্লবের পর আমি আশা রাখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভুল করেছিলাম। এই দুর্নীতিগ্রস্ত, পিতৃতান্ত্রিক দেশে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটাই সত্যি। এটাই বাস্তবতা। আর আমাদের সেই বাস্তবতাই মানতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
এক ফেসবুক পোস্টে ঘটনাটির জন্য ধিক্কার জানিয়েছেন মিথিলা। তিনি লিখেছেন, ‘ধিক্কার’। এরপর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘ধর্ষকের শাস্তি চাই।’ মিথিলার দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তাঁর অনুসারীরা। কেউ কেউ ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড চাইছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করে বলছেন, প্রকাশ্যেই কার্যকর হোক এদের শাস্তি। তমা মির্জা লিখেছেন, ‘মুরাদনগর, কুমিল্লা! বীভৎসতা! লজ্জা…’! অভিনেতা মিশা সওদাগর অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানিয়ে লিখেছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকুক। প্রতিটি নারী নিরাপদে থাকুক। প্রতিটি অন্যায়ের ন্যায়বিচার হোক। প্রতিটি ধর্ষকের ফাঁসি হোক। মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করছি।’ নুসরাত ফারিয়া লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ’। প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ‘ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন।’ আরশ খান লিখেছেন, ‘কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্মপরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সাথে এমন করা সম্ভব না। একবার জারজ সব সময় জারজই থাকে।’
মৌসুমী হামিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আর কোনো মানুষ থাকবে না। খুব শীঘ্রই।’ জিয়াউল রোশান লিখেছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না। জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। আর আপনারা যারা সমবেদনা জানিয়ে সেই ভিডিওটি শেয়ার করছেন, আবার কেউ কেউ ভিউ পাবার লোভে সেই ভিডিওটা আপলোড করছেন, আপনারাও সেই ধর্ষণকারীর মতোই অপরাধী। আপনারা ভিউখোর রাক্ষস। ফাজলামি ছেড়ে দেন আর অতিসত্ত্বর এই সব ডিলিট করেন।’ কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ’।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর এই দ শ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
প্রকাশ্যে গুলি করে চট্টগ্রামে একের পর এক খুনের ঘটনায় উঠে আসছে তাঁর নাম। হত্যা মামলায় তাঁকে আসামিও করেছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার। পুলিশ তাঁকে হন্য হয়ে খুঁজলেও থেমে নেই তাঁর অপরাধ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হানের বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ীকে রায়হান বলেন, ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব।’
হুমকি পাওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. একরাম। তিনি পাথরের ব্যবসা করেন। আজ সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁকে ফোন করেন সন্ত্রাসী রায়হান। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় তাঁকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার হুমকি দেন।
কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে ব্যবসায়ী একরাম বলেন, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ তাঁকে হুমকি দেন। ওই হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর মামলা তুলে নিতে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হুমকির বিষয়ে থানায় মামলা কিংবা জিডি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ী একরাম।
নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। —আমিনুর রশিদ, সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকির পর রাতে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে বলার সঙ্গে সঙ্গে সোয়াত টিমসহ পুলিশের দল বাসার সামনে পাহারায় রয়েছে। ভয়ে আমার স্বামী এখন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলে সঙ্গে পুলিশ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনরাউজানে যুবদলকর্মী আলম খুনেও আলোচনায় ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম২৬ অক্টোবর ২০২৫বেপরোয়া ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ছোট সাজ্জাদ ১৫ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর বাহিনীর দেখভাল করছেন রায়হান।
পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর আগেও হুমকির বিষয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যবসায়ী।’
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
আরও পড়ুন‘আমি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’০৮ আগস্ট ২০২৫একের পর এক খুনে রায়হানের নামচট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়া ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয় ৫ নভেম্বর। এর তিন দিন আগে সরোয়ারকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, রায়হান সরোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতলে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডে রায়হান ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেছেন। জীবিত অবস্থায় মুঠোফোনে আলমগীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলমগীরকেও রায়হানের নাম উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—তিন দিন আগে হুমকি পেয়েছিলেন সরোয়ার০৬ নভেম্বর ২০২৫পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।
গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মুঠোফোনে হুমকি দেন রায়হান। তিনি ওই দোকানিকে বলেন, ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব। ...আকবর সি বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’
চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। মো. ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। পুলিশ জানায়, রায়হানের নামে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা।