উত্তরায় মব সৃষ্টি করে হোটেল দখলের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৯
Published: 30th, June 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘হোটেল মিলিনা’ নামে একটি আবাসিক হোটেল দখলের অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গতকাল রোববার র্যাব-১ এর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া এবং ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদ হোসেন, শফিক মোল্লা, আরিফুল ইসলাম, তন্ময় হোসেন শাওন, রবিউল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন আশিক, সাইফুল ইসলাম সাগর, জালাল খান ও মো.
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার দুপুরে শফিক মোল্লার নেতৃত্বে হোটেল মিলিনার মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পূর্বের ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এ সময় ১০টি মোটরসাইকেলে কমপক্ষে ২৪ জন জোরপূর্বক হোটেলটি দখল করতে যায়। এ সময় দূর থেকে ওই ঘটনার কিছু ছবি ধারণ করেন র্যাব-১-এর একজন গোয়েন্দা সদস্য। ছবি ধারণের সময় ‘মব’ সৃষ্টিকারীরা র্যাব সদস্যকে ঘেরাও করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়। এরপর খবর পেয়ে র্যাব এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে।
ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায় আজকে তাদের আদালতে তোলা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তা আমলে নিন
ভারত যে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টির বাইরে বেরিয়ে দেখতে আগ্রহী নয়, বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে একের পর এক অশুল্ক বাধা তৈরির ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। গত তিন মাসে ভারত এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করল। এতে করে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সংযোগশীলতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল, তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বোপরি, টানাপোড়েনে থাকা ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের শুক্রবারের (২৭ জুন) নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, ফ্ল্যাক্স সুতা, কাঁচা পাট, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতাসহ ৯ ধরনের পণ্য স্থলপথ দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তবে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভারত হয়ে এসব পণ্য নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই।
এর আগে, গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এটি ছিল ভারতের দিক থেকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক ও বাণিজ্যের বিবেচনায় কঠোর সিদ্ধান্ত। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ। এরপর ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য–ঘাটতির পরিমাণ এমনিতেই অনেক বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে যেখানে বাংলাদেশ প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতের পদক্ষেপের কারণে নিশ্চিত করেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেননা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির শীর্ষে থাকা দুটি পণ্য তৈরি পোশাক এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
মোট মিলিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। যদিও ভারতের দিক থেকে বলা হচ্ছে মুম্বাই বন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে বাধা তৈরি করার কৌশলী পদক্ষেপ ছাড়া কিছু নয়। কেননা, বাংলাদেশি এসব পণ্যের ক্রেতা মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। সমুদ্রপথে বাণিজ্যে যে বাড়তি খরচ ও সময় ব্যয় হবে, তাতে বেশির ভাগ আমদানিকারকই বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে আগ্রহী হবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে সারা বিশ্বের বাণিজ্য পরিবেশে যখন চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে সময় ভারত–বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর পরস্পরের স্বার্থেই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় করা প্রয়োজন ছিল। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর উল্টো চিত্রটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষই ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজাও জরুরি। আমরা মনে করি, আলোচনা ও কূটনৈতিক উদ্যোগই সংকট উত্তরণের সবচেয়ে সেরা পথ।