মেসি-সুয়ারেজদের এক হালি গোল দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজি
Published: 30th, June 2025 GMT
যেখানে চোখ ছিল লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের মতো দুই কিংবদন্তির দিকে, সেখানে আলো ছড়ালেন তরুণ জোয়াও নেভেস ও আশরাফ হাকিমি। ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি যেভাবে ইন্টার মায়ামিকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিলো, তাতে স্পষ্ট এই টুর্নামেন্টে তাদের লক্ষ্য ট্রফি ছাড়া কিছুই নয়।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত এই ম্যাচ। যেখানে মায়ামি ছিল অভিজ্ঞতার প্রতীক মেসি, সুয়ারেস, বুসকেটস, আলবাদের নিয়ে গড়া তারকাখচিত দল। আর পিএসজি ছিল তারুণ্যের স্ফুরণ নেভেস, ভিতিনিয়া, দিজিরে দুয়ে ও বারকোলার মতো উদীয়মান প্রতিভাদের ওপর নির্ভরশীল।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই ভিতিনহার নিখুঁত ক্রসে জোয়াও নেভেস হেডে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে দেন। এরপর ৩৯ মিনিটে আরও একটি ক্লিন-ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার।
৪৪ মিনিটে মায়ামির ডিফেন্ডার থমাস অ্যাভিলেস আত্মঘাতী গোল করে দেন নিজের দলকে আরও বিপদে ফেলে। অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে আশরাফ হাকিমি চতুর্থ গোল করে মায়ামির স্বপ্নকে এক প্রকার চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন।
নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে লিওনেল মেসির নামার মধ্যে যে এক ধরনের নাটকীয়তা ছিল, তা মাঠের খেলায় ধরা পড়েনি। গোটা প্রথমার্ধে মায়ামি গোলের উদ্দেশে একটি শটও নিতে পারেনি, এমনকি মেসি-সুয়ারেসের মতো ফরোয়ার্ড জুটির কাছ থেকে কোনো ঝলকই দেখা যায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ফেরার চেষ্টা করে মায়ামি। মেসি ৫১ মিনিটে প্রথম শটটি নেন। তবে সেটি প্রতিপক্ষের পায়ে বাধা পায়। এরপর আরও দুটি প্রচেষ্টা এলেও তা তেমন বিপজ্জনক ছিল না। পিএসজির রক্ষণভাগ তখনও ছিল পাথরের মতো শক্ত, আর মাঝমাঠে ছিল নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ।
দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল না হলেও, পিএসজির একচেটিয়া দখল ছিল বল ও মাঠের দুই জায়গাতেই। তারা দাপট দেখিয়েই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে, যেন দ্বিতীয়ার্ধটি ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার। শেষ পযর্ন্ত ৪-০ ব্যবধানের বড় জয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে প্যারিসিয়ানরা।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ। যারা ফ্ল্যামেঙ্গোকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।