‘কেএমপি কমিশনারের পতদ্যাগ দাবির যৌক্তিকতা নেই’
Published: 30th, June 2025 GMT
পুলিশের এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার কারণে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পতদ্যাগ এবং মেলা ইস্যুতে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতৃত্বাধীন আটটি সংগঠন।
তারা জানান, যেহেতু এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেহেতু এখন আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। উল্লিখিত ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততাও নেই। কেউ ব্যক্তি স্বার্থে বা কোনো ব্যানারে অনৈতিক কিছু করলে তার দায়ভার তারা নেবে না বরং আইনের আওতায় নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে আট সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একাংশের নেতারা, রেড জুলাই, জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স, জাস্টিস ফর জুলাই, ইনকিলাব মঞ্চ, আপ বাংলাদেশ, রঙমশাল ও পুসাবের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
আন্দোলন নিয়ে ‘হতবাক’ শহীদ আবু সাঈদের পরিবার
আন্দোলনে স্থবির এনবিআর
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো আব্দুল্লাহ-আল সাফিন।
গত ২৪ জুন বিকেলে একাধিক মামলার আসামি পুলিশের এসআই সুকান্তকে আটক করে খানজাহান আলী থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা। রাতেই থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত ২৫ ও ২৬ জুন কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে পুলিশ কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে এসআই সুকান্তকে গত ২৬ জুন চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ কর্মসূচিতে যোগদান থেকে বিরত থাকে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর অংশ ছাত্র-জনতার ব্যানারে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবি করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে গত ২৬ জুন রাতে বিক্ষোভকারীরা কর্মসূচি স্থগিত রেখে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। পুলিশ কমিশনারকে অপসারণ না করায় গত ২৮ জুন বেলা আড়াইটা থেকে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ শুরু করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের মুখপাত্র সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি ফের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুল্লাহ-আল সাফিন বলেন, ‘‘এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় আমরা আন্দোলনে সরব হই। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তারের পর আন্দোলন সফল হওয়ায় আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি। আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, এখানো আমাদের গুটিকয়েক সহযোদ্ধাদের ব্যবহার করে একটি বিশেষ মহল ওই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। যার দায়ভার কোনোভাবেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা নেবে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা জুলাইকে ব্যবহার করে এমন কোন কাজ করব না, যা জুলাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করে। আর কেউ এমন কাজ করতে চাইলে আমরা তাদের প্রতিহত করব।’’
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ-আল সাফিন বলেন, ‘‘জুলাই কর্মসূচির সঙ্গে মেলার যৌক্তিকতা নেই। যারা মেলার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পকও নেই।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতারা চাচ্ছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে খুলনা শহরের শিববাড়ি মোড়ের জিয়াহল চত্বরে ৩৬ দিন মেলা আয়োজন করতে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ-আল সাফিন বলেন, ‘‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল দৃষ্টিভঙ্গি অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে সরব। এরপর দেখা যাবে, এসআই সুকান্ত ইস্যু বাদ দিয়ে অন্য কোনো কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবিতে ওই মহলটি সরব হচ্ছে।’’
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল ১ জুলাই থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এসআই স ক ন ত র য ক ত কত
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের
সিলেটে পুলিশের হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।
সালমা বেগম বলেন, আকবর হোসেন প্রথমেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন পুলিশ অনেক কষ্টে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। জামিন পেয়েই যে পালানোর চেষ্টা করবেন, সেটা স্বাভাবিক ছিল।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। পরে মহানগর পুলিশের অনুসন্ধান কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। এরপর হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার আকবর হোসেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করে। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ উচ্চ আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি আকবর হোসেনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
সালমা বেগম বলেন, হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান শুরু থেকেই পলাতক। কারাগারে থাকা পাঁচজনের মধ্যে চারজনই জামিনে মুক্ত আছেন। যার কারণে পুরো পরিবার ও মামলার সাক্ষীরা শঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তিনি ন্যায়বিচার পেতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সহসভাপতি আমির হোসেন, দুর্নীতি মুক্তকরণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, সিলেট যুব উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আফিকুর রহমান, আখালিয়ার মুরব্বি ছানাউল্লাহ ছানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা আকবর হোসেনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার তাঁর জামিন স্থগিত হয়েছে। তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করবেন।