জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল
Published: 30th, June 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত হেনস্তার অভিযোগে রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আটক করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা।
পরে সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ওই যুবককে নিরাপত্তা অফিস থেকে বের করতে গেলে মারতে উদ্যত হন ভুক্তভোগীর কয়েকজন সহপাঠী। এ সময় অভিযুক্ত যুবককে বাঁচাতে গেলে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী।
জানা গেছে, অভিযুক্ত যুবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীৃ সোহেল রানা। ভুক্তভোগী নারীর একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তবে তার বাসা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। বর্তমানে চাকরি খুজতে ঢাকার লালবাগে অবস্থান করছেন। তার পিতার নাম মো.
আরো পড়ুন:
বেরোবিতে নোটিশ ছাড়াই ভর্তি ফি দ্বিগুণ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
যবিপ্রবিতে মলিকিউলার লাইফ সায়েন্সে উদ্ভাবন নিয়ে সম্মেলন
হেনস্তার বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সোহেল রানা আমাকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছে। তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ না রাখতে চাইলেও নানাভাবে আমাকে ব্লাকমেইল করে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেছে। ইতোপূর্বে তিনি গুণ্ডা ভাড়া করে আমার বাবাকে মারধর পর্যন্ত করেছে। গত কয়েকমাস যাবত তার হেনস্তার মাত্রা আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে।”
তিনি বলেন, “আজ (রবিবার) তিনি আমার ক্যাম্পাসে এসে আমাকে জোরপূর্বক একা দেখা করতে বাধ্য করেছে এবং সঙ্গে কাউকে নিয়ে গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছে। দেখা না করলে ‘দেখে নিব’ বলেও হুমকি দিয়েছে। পরবর্তীতে চাপে পড়ে আমি একা দেখা করি এবং কথোপকথন চলাকালে দূর থেকে আমাদের দেখে আমার বন্ধুরা। তখন তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং ‘ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে দেখে নেব’ বলে হুমকি দেন।”
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে সোহেল রানা ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াসহ হেনস্তা করে আসছিলেন। সে সময় একাধিকবার পারিবারিকভাবে মিমাংসা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালেও একই ঘটনা ঘটলে তখনো পারিবারিকভাবে মিমাংসা করা হয়। সর্বশেষ ৩ মাস আগে হুমকি দিয়ে নারী শিক্ষার্থীকে মেসেজ করেন সোহেল। কথা না বললে পরবর্তীতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর থেকে ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হত বলে জানা যায়।
গতকাল রবিবার মেসেজে কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে জাবিতে দেখা করতে আসেন তিনি। এসময় ওই ছাত্রীর বন্ধুরা তাকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান।
জোর করে দেখা করার বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, “আমি দেখা করার জন্য জোর করেছি বিষয়টি সত্য। আমি তিন মাস যাবৎ কথা বলি ওর সাথে। তবে কোন ধরনের সম্পর্ক নাই তার সাথে।”
এরপর প্রক্টর অফিসে ওই নারী শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি এ বিষয়ে জিডি অথবা মামলা করবেন কি না। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তার অভিভাবককে আসতে বলা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হলে তারাও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।
এ অবস্থায় অভিযোগপত্র গ্রহণ এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্ত সোহেলকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেষ দেওয়া হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে বের করে নিয়ে আসতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত সোহেলকে মারধরের চেষ্টা করেন।
তখন মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় আকস্মিকভাবে আঘাত লেগে তার মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় আহত নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন।
জেফরুল হাসান চৌধুরী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “প্রায় ২৫ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। কিন্তু কখনো কোনো শিক্ষার্থীর দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হইনি। আমি ক্যাম্পাসের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবসময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “শামীম মোল্লা নিহতের মত ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ সচেতন। সেজন্য ওই ছেলেকে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করতে গেলে আমি তা থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এ সময় এক শিক্ষার্থীর হাতে থাকা শক্ত কিছু একটা আমার মাথায় লাগে। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হওয়া শুরু হলে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।”
ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে তাকে আঘাত করা হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “না, ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে আঘাত করা হয়নি। তবে একটা সমস্যা সমাধান হয়েছে যখন, তারপরেও কেনো তাকে মারধর করতে যেতে হবে?”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হওয়ার ঘটনায় অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে তার রিপোর্ট প্রস্তুত করে উপাচার্য স্যারের কাছে প্রেরণ করেছি। এ ব্যপারে তিনি ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি মোতাবেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত জ ফর ল হ স ন কর মকর ত ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি চাকরিজীবীদের ঘুমের মধ্যেই কেন বেতন কমে যাচ্ছে
প্রতিবছর বাজেট আসে এবং মোটামুটি সবার আশায় গুড়ে বালি পড়ে। এটা মোটামুটি সব বছরেই সবাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিম চলে যাওয়ার পর সবাই আশা করেছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য একটা যুগোপযোগী বাজেট হবে। কিন্তু সেই গণ্ডি থেকে এবারও বের হতে পারল না সরকার। ফলাফল প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমাদের বেতন কমছে।
এই কমা হচ্ছে দুই ভাবে ১. ট্যাক্সের চাপ, ২. মুদ্রাস্ফীতি। আর এটা করতে হচ্ছে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় যা বেশির ভাগই সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, পেনশন এবং তাদের নিজেদের অক্ষমতার জন্য কর আদায় কম হওয়ার ঘাটতি মেটাতেই। এখন দেখি কীভাবে কমছে।
আয়কর স্ল্যাব পরিবর্তনআমাদের সরকারের সবচেয়ে সহজ আদায়যোগ্য কর হচ্ছে ব্যাক্তিগত আয়কর। কারণ, সবার বেতন ব্যাংকে যায়, অফিস থেকেই ট্যাক্স কেটে রাখে, এমনকি কারও বেতন ১৫ হাজার টাকা হলেও টিন খোলার বাধ্যবাধকতা আছে এবং অফিসগুলোতে ট্যাক্স রিটার্নের কাগজও জমা দিতে হয়। ফলে এনবিআর মোটামুটি বিনা পরিশ্রমেই ট্যাক্স পেয়ে যায়। এখন টিন খোলা মানে আপনার ট্যাক্স হোক না হোক আপনাকে ৫ হাজার টাকা দিতে হবেই। নতুন খুললেও ১ হাজার।
এখন এই বাজেটে ২০২৬-২৭ এর জন্য নতুন আয়কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং এখানেই আপত্তি। এখন দেখে নিই বর্তমান আয়করের সঙ্গে প্রস্তাবিত আয়করের কী পার্থক্য।
২০২৪-২৫ সালের বর্তমান কাঠামো অনুসারে প্রথম ৩,৫০,০০০ পর্যন্ত ০ শতাংশ, পরবর্তী ১,০০,০০০ পর্যন্ত ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪,০০,০০০ পর্যন্ত ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫,০০,০০০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫,০০,০০০ পর্যন্ত ২০ শতাংশ, পরবর্তী ২০,০০,০০০ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ, ৩৮,৫০,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে ৩০ শতাংশ।
প্রস্তাবিত ২০২৬-২৭ সালে আছে প্রথম ৩,৭৫,০০০ পর্যন্ত ০ শতাংশ ,পরবর্তী ৩,০০,০০০ পর্যন্ত ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪,০০,০০০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫,০০,০০০ পর্যন্ত ২০ শতাংশ, পরবর্তী ২০,০০,০০০ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ, ৩৮,৫০,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে ৩০ শতাংশ।
প্রথম অংশে ছাড় দিলেও (বাস্তবে ছাড় না, ৫০০০ টাকা তো দিতে হবেই) পরের সব ভাগেই তারা ১ লাখ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছে। ফলাফল হবে সবার ওপরই বাড়তি চাপ বাড়বে। কেমন বাড়বে সেটা দেখি কারও বাৎসরিক করযোগ্য আয় (৫০ হাজার প্রতি মাসে) যদি হয়, তাঁর আয়কর বাড়বে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। এভাবে আসলে সবার ট্যাক্সই বাস্তবে বেড়ে গেল। মানে বেতন কমে গেল।
এ ছাড়া আর এক জায়গায় সরকার কমিয়েছে, সেটা হচ্ছে আগে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়া যেত। এখানেও সরকার মধ্যবিত্তদের ওপর হাত দিয়েছে। ২০১৯-২০ করবর্ষে রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ সীমা ছিল করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা (যেটি কম), রিবেট হার (ছাড়ের হার) ছিল মোট রিবেটযোগ্য বিনিয়োগের ওপর ১৫ শতাংশ, যেখানে সর্বোচ্চ ছাড় পাওয়া যেত ৩ দশমিক ৭৫ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ করবর্ষে সেটা এখন রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ সীমা করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ কোটি টাকা (যেটি কম) রিবেট হার (ছাড়ের হার) বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ এবং ১৫ লাখ টাকার ওপরে হলে ১০ শতাংশ।
২০২৬-২৭ করবর্ষে (প্রস্তাবিত) রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ সীমা হবে করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ কোটি টাকা (যেটি কম), যা আগের মতোই; কিন্তু পরিবর্তন এসেছে রিবেট হার (ছাড়ের হার) আয় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ১০-২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ১২ শতাংশ এবং আয় ২৬ লাখ টাকার ওপরে গেলে ১০ শতাংশ।
সরকার বিনিয়োগও চাইবে আবার রিবেটে ছাড়ও কমিয়ে দেবে। এ রকম পরস্পরবিরোধী অবস্থান কেন? এই বুদ্ধি কার কাছ থেকে আসে?
মূল্যস্ফীতিবহুদিন ধরেই আমাদের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘুরঘুর করছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের গড় ইনক্রিমেন্ট ছিল ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এখন সরকার আশা করছে এই বছর মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবে। তা যদি আরও নামানো না হয়, তাহলে আসলে বেতন কমতেই থাকবে তত দিন পর্যন্ত। করোনার পর থেকে সবার বেতন মূল্যস্ফীতির হিসাবে প্রতিবছর অন্তত ৪ শতাংশের কাছাকাছি করে কমছে। সেই হিসাবে এখন ২০ শতাংশের কাছাকাছি। যেহেতু তাদের কোথাও চাপ দেওয়ার নাই, তারা ব্যয় সংকোচন করে নিজেদের চালিয়ে নিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের ওপর এই চাপ কেনএই চাপ পুরোপুরি সরকারের অদক্ষতার জন্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দায় সরকারি কর্মচারীদের। কিন্তু তাঁরা বিগত বছরগুলোতে এই কাজ করতে চরমভাবে ব্যর্থ। বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা (তাঁরা দুজনই আমলাতন্ত্রের বাইরের) কিছু যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এখন কিছুটা কমছে, যদিও তা আরও কমে ৫ শতাংশের কাছাকাছি আসা উচিত। বাংলাদেশের আশপাশে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল সবার মূল্যস্ফীতি এখন ৪ এর নিচে। শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতিতে শূন্য থেকেও নিচে। কিন্তু সরকারের এসব অদক্ষতার জন্য কারও কখনো কোনো শাস্তি হয় না।
এরপর আসে এনবিআরের অদক্ষতা। এই অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে তারা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে। এনবিআর কখনোই তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না, এবার যেহেতু প্রায় ১ মাসের কলমবিরতি ছিল, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব একেবারেই হবে না।
কিন্তু সরকার মুখে সবাইকে খরচ কমাতে বলেও প্রস্তাবিত বাজেটে খরচ বেতন–ভাতাতে গত বছরের থেকে ৩ হাজার কোটি এবং পেনশনেও খরচ বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। যেখানে অনেক দিন ধরেই প্রস্তাবনা ছিল এই খাতের খরচ ২০ শতাংশ কমানোর। যেহেতু এনবিআরের মানুষজন জানে কীভাবে নিজেদের (ব্যাপক অর্থে সরকারি কর্মচারীদের) ওপর চাপ না পড়ে, তাই সহজ সমাধান বেসরকারি খাতের মানুষের ওপর নতুন ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। কেন বলছি, এই বোঝা কি শুধু বেসরকারি মানুষজনের ওপর? কারণ, সরকারি কর্মচারীদের ট্যাক্স শুধু বেসিকের ওপর হয়, বাকি সব ভাতা ট্যাক্স ফ্রি।
আয়কর দিয়ে বেসরকারি কর্মজীবীরা কিছুই পাচ্ছে না?বহুদিন ধরে দাবি ছিল বেসরকারি কর্মজীবীদের জন্য আইন। সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম করেছে; কিন্তু তা আসলে বেশির ভাগ মানুষকে আস্থা দিতে পারেনি। এই সরকার সেই পেনশন স্কিম ঠিক করার কোনো চেষ্টাও নেয়নি। দরকার ছিল যারা ট্যাক্স দিচ্ছে, তাদের ট্যাক্সের টাকার একটা অংশ দিয়ে এই স্কিম চালানো। তাহলে মানুষ ট্যাক্স দিয়ে কিছু অন্তত পাচ্ছে, বলে ভরসা পেত।
প্রস্তাব কীভারতে আয়করমুক্ত সীমা ৪ লাখ রুপি, পাকিস্তানে ৬ লাখ এবং শ্রীলঙ্কায় ১২ লাখ। ভারতের রিবেট সিস্টেমে একজন ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত রিবেট পেতে পারে। প্রথমে সরকার টাকা কেটে নিলেও পরে ফেরত দেয়। এদের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং কোম্পানিগুলো ইনস্যুরেন্স দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। এদের সবারই প্রথম স্ল্যাব ৫ শতাংশ। যাহোক, এই অবস্থায় আমি ২০১৯-২০ সালের আয়কর স্ল্যাব তুলে ধরে, ২০২৪-২৫ এবং ২০২৬-২৭ সমন্বয়ে সবার উপযোগী একটা সীমা প্রস্তাব করছি।
২০১৯-২০ আয়কর বর্ষে ছিল আয়করমুক্ত সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার, পরবর্তী ৪ লাখ ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৬ লাখ ২০ শতাংশ, পরবর্তী ৩০ লাখ ২৫ শতাংশ, এরপর ৩০ শতাংশ।
সেই হিসাবে নতুন প্রস্তাব: আয়করমুক্ত সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার, পরবর্তী ১,০০,০০০ পর্যন্ত ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৬ লাখ ২০ শতাংশ, পরবর্তী ৩০ লাখ ২৫ শতাংশ, এরপর ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া রিবেটের হার ২০১৯-২০ অর্থবছরের অনুরূপ করা উচিত। এবং ন্যূনতম কর ৫ হাজারের পরিবর্তে ৩ হাজার করা উচিত। এই হার যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে একজন বার্ষিক ৬ লাখ টাকা আয় করা মানুষের কর কমবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। মানুষের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগও বাড়বে। যার সুফল পাবে সরকার।
এ ছাড়া দেশের টিন থাকা মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয়। সহনীয় মাত্রায় ট্যাক্স ঠিক করলে তারাও দিতে উৎসাহী হবে। যদি তাদের অন্তত একটা সুবিধা দেওয়া যায়, দেশের শতভাগ মানুষই ট্যাক্স দেবে। এ ছাড়া যারা কর দেয় তাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে বরং এর আওতা বাড়ানো উচিত। যেহেতু এক দেশে দ্বৈত আইন থাকতে পারে না, সরকারি কর্মচারীদেরও একই আয়কর আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
সরকার যদি এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করে সরকারের আয় না কমে বরং বাড়বে এবং অনেক মানুষকেই আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করবে। বাংলাদেশের মানুষ সরকারকে সাহায্য করতে চায়, তার বড় প্রমাণ রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা। এখন আয়কর আইন সহজ করে বাকিদেরও দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্বও সরকারের।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
ই–মেইল: [email protected]